সাতক্ষীরা সংবাদদাতা
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোবিন্দ চন্দ্র মন্ডলের আক্রোশের শিকার হয়েছে স্থানীয় এক পরিবার। ব্যক্তিগত আক্রোশ এবং অর্থের বিনিময়ে পরিবারটিকে তিনি একঘরে করে রেখেছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। ভুক্তভোগী পরিবারটি জানায়, আদালতে মামলা চলমান থাকলেও আদালতের ধার ধারেন না তিনি। তার আইনই যেন দক্ষিণ শ্রীপুরের আইন। তাকে না জানিয়ে আদালতের স্মরণাপন্ন হলেও তিনি ক্ষেপে যান। তিনি দাম্ভিক ঘোষণা দিয়ে বলেন, আমি গোবিন্দ চন্দ্র মন্ডল, আমার কথাই দক্ষিণ শ্রীপুরের কথা।
অভিযোগ থেকে জানা গেছে, স্থানীয় উমাকান্তের মেয়ে মনিকার বিয়ে হয় গোবিন্দ চেয়ারম্যানের শ্বশুর বাড়ির নিকটবর্তী তালা উপজেলার সুজনশাহা গ্রামের সুবোধ মল্লিকের ছেলে শিমুল মল্লিকের সঙ্গে। বিয়ের সময় নগদ টাকা, বাইক, স্বর্ণ নেয়ার পরও তিন লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে পরিবারটি। টাকা না দেয়ায় শ্বশুরবাড়ির লোকজন মেয়েটিকে নিপীড়ন ঘর থেকে বের করে দেয়। এ নিয়ে মামলাও হয়। গোবিন্দ চেয়ারম্যানের শ্বশুর বাড়ির ওই এলাকায় হওয়ায় শিমুল মল্লিকের পরিবার তার দারস্থ হয়। তিনি সুবোধ-শিমুল মল্লিকের পক্ষ নিয়ে মনিকার পরিবারকে হুমকি দিতে থাকেন। তাদের একঘরে করে ফেলার চেষ্টা করেন। কর্মকার পাড়ার অন্য কোনও পরিবার যাতে উমাকান্তের পরিবারের পাশে না দাঁড়ায় তার জন্য চেয়ারম্যান ভীতি প্রদর্শন করছেন।
এ নিয়ে মনিকা কর্মকার বলেন, একদিকে শ্বশুর বাড়ির নিপীড়ন অন্যদিকে শ্বশুরবাড়ির পক্ষ নিয়ে গোবিন্দ চেয়ারম্যানের নিপীড়ন আমাদের জীবন দুর্বিসহ করে তুলেছে। চেয়ারম্যানের হুমকিতে আমার বাবা-মা-ভাই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আমাদের সঙ্গে যে অন্যায় হচ্ছে তার কি কোনো বিচার নেই?
একই গ্রামের আব্দুল আজিজ বলেন, গোবিন্দ চেয়ারম্যানের হঠকারিতার কারণে তিনি এর আগে দুই বার নির্বাচন করেও পরাজিত হয়েছেন। এবার জিতেই সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছেন, শোধ তুলছেন।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি ও আইনজীবী ফাহিমুল কিসলু বলেন, নিয়মনীতির কোনো তোয়াক্কা করেন না গোবিন্দ চেয়ারম্যান। যাকে তাকে যে কোনো সময় অপমান করেন তিনি। নিজের ইউনিয়নের নাগরিকদেরও তিনি ছাড়েন না। সম্প্রতি তার এলাকার মনিকা কর্মকারকে নির্যাতনের পক্ষ নিয়েছেন তিনি। মেয়েটির শ্বশুরবাড়ির লোকদের সঙ্গে মিলে নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের উচ্চ আদালতে মামলা চলাকালীন আস্ফালন দেখিয়েছেন তিনি বলেছেন- তার ইউনিয়নে তিনি ম্যাজিস্ট্রেট। উকিল ও কোর্টের কত ক্ষমতা আর আমার কলমের কত ক্ষমতা আমি সেটা দেখাব।
এ বিষয়ে দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোবিন্দ চন্দ্র মন্ডল বলেন, উমাকান্তের পরিবার আদালত ও প্রশাসনের শরণাপন্ন হয়েছে। এলাকায় তাদের থাকা লাগবে। কী করে থাকে আমি দেখে নেব। তিনি অতিরিক্ত পিপির সঙ্গে অশোভন আচরণের কথা স্বীকার করে বলেন, আমি বলেছি এই ইউনিয়নের ম্যাজিস্ট্রেট আমার লোক। কলমের জোর আমিও দেখাব।
এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরার মানবাধিকার সংগঠক মাধব দত্ত বলেন, আদালতে চলমান মামলায় চেয়ারম্যান গোবিন্দ তার ক্ষমতা দেখানোর যে চেষ্টা করেছেন তা আমাদের বিস্মিত করেছে। এটি তিনি কিভাবে করছেন তা আমাদের বোধগম্য না।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, বিষয়টি শুনেছি। বিষয়টির সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলেছি।