বাংলার ভোর প্রতিবেদক
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব দেখা গিয়েছে। নতুন ভেরিয়েন্টের কারণে কোভিড ১৯ বা করোনা ভাইরাস কতটুকু সংক্রামক সেটা বুঝতে একটু সময় লাগছে। ইতিমধ্যে যশোরে একজন কোভিডে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জেলার সবাইকে বাড়তি সতর্ক থাকার আহবান জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা। রোববার সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলার মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় এ আহবান জানান তিনি।
সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা বলেন, সীমান্ত সংলগ্ন জেলা হওয়ায় ভারতে শনাক্ত হওয়া নতুন ভেরিয়েন্টের ঝুঁকিতে রয়েছে যশোর জেলা। বেনাপোল পোর্টে আমাদের মেডিকেল টিম কাজ করছে। যদিও পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ায় কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তবে আমরা দ্রুতই সমস্যার সমাধান করব।
তিনি আরও জানান, মন্ত্রণালয় থেকে করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার নির্দেশনা থাকলেও প্রত্যেকের সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা, মাস্ক ব্যবহার করা এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজেশন নিশ্চিত করা জরুরি।
ডা. মাসুদ রানা উল্লেখ করেন, প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা রোগীর জন্য আলাদা ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। কোভিড পরীক্ষার জন্য র্যাপিড কিটের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। কিট দ্রুতই হাতে পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। তিনি ভাইরাসের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা না থাকায় ভ্যাকসিনের উপর জোর দেন এবং জানান কোভিডের ভ্যাকসিনের মেয়াদ জুলাই মাস পর্যন্ত রয়েছে। বর্তমানে যশোর পৌরসভার জন্য ২২০০ এবং সদর উপজেলার জন্য প্রায় ৪৬০০ ভ্যাকসিন মজুদ আছে। অন্যান্য উপজেলাতেও কমবেশি ভ্যাকসিন সরবরাহ রয়েছে। তবে, সাধারণ মানুষের মধ্যে ভ্যাকসিন নেয়ার আগ্রহ কম দেখা যাচ্ছে বলে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
সভায় যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন সাফায়েত জানান, করোনা ভাইরাসে বয়স্ক এবং বিভিন্ন রোগে আক্রান্তদের বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে। সদর হাসপাতালে করোনা আক্রান্তদের জন্য ২টি পুরুষ এবং ২টি মহিলা বেড নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও আইসিইউতে ৮টি বেড প্রস্তুত আছে। রোগী বাড়লে পরবর্তীতে আলাদা ইউনিট করার পরিকল্পনা রয়েছে। সভায় ডেঙ্গুর বিস্তার নিয়েও সজাগ থাকার এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়ার কথা তুলে ধরা হয়।
মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় সভার শুরুতে জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম উপস্থিত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। সভায় জেলা পরিষদের অর্থায়নে ঝিকরগাছা ও চৌগাছায় দুটি ডাকবাংলো এবং তিনটি আধুনিক মার্কেট নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে জানানো হয়।
সভায় কোরবানির পর পৌরসভার বর্জ্য অপসারণ হলেও যানজট ও ফুটপাত দখলমুক্ত করা যায়নি বলে বিস্তারিত আলোচনা হয়। পৌর এলাকার সড়কের বাতি নষ্ট হওয়ার এবং নতুন বাজেট না পেলে বাতি লাগানো যাচ্ছে না বলে সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে পৌর প্রশাসক রফিকুল হাসান সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর-ই-আলম সিদ্দিকী জানান, ঈদের ছুটিতে জেলায় বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি ট্রাফিক ব্যবস্থা ও ফুটপাত দখলমুক্ত করতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, এ বছর ঈদে জেলা পরিষদের অর্থায়নে জেলার ১ হাজার ৬৮০ জন দুস্থ মানুষকে মাংস, সেমাই, চিনি ও ঈদ সামগ্রি দেয়া হয়েছে। এছাড়াও, জুলাই যোদ্ধা ও বীরমুক্তিযোদ্ধাদের বাড়িতে বাড়িতে ঈদ সামগ্রি পাঠানো হয়েছে। শহরের যানজট নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা এবং ফুটপাত দখলমুক্ত করতে তাগিদ দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, কোভিডের জন্য আমাদের পূর্ব প্রস্তুতি রাখতে হবে। রেড ক্রিসেন্ট ৬০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়েছে। কারও বাসা-বাড়িতে প্রয়োজন হলে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। ডহর মশিহাটি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলোর মধ্যে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ৪টি বাড়ি প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়াও, দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সভার শেষে চাকুরিজীবন শেষ হওয়ায় মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক আনিছুর রহমানের হাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষে ফুলেল শুভেচ্ছা ও উপহার সামগ্রি তুলে দেয়া হয়।