বাংলার ভোর প্রতিবেদক
আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও এখনও যুবলীগের ক্যাডারদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ঝিকরগাছা সাব-রেজিস্ট্রার অফিস। যশোরের ঝিকরগাছা রেজিস্ট্রার অফিসে তিনটি সিণ্ডিকেট সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে প্রতিমাসে হাতিয়ে নিচ্ছে অর্ধ কোটি টাকা।
সাব রেজিস্ট্রি অফিসে সেবাগ্রহীতাদেরকে জিম্মি করে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। সরকার নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে এই অফিসে কোনো সেবা পাওয়া যায় না। সেবা পেতে গেলে দলিল লেখক সমিতির চাহিদা মোতাবেক অর্থ পরিশোধ করলে তবেই সেবা মেলে- এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, অফিসের কর্মরত ঝিকরগাছা দলিল লেখক সমিতি দলিল প্রতি ২ হাজার টাকা তাদের সমিতির কল্যাণ তহবিলের নামে আদায় করছে। যা গ্রাহকদের নিকট গোপন রেখে রেজিস্ট্রি খরচ হিসেবে দেখিয়ে আদায় করা হচ্ছে। প্রতিমাসে প্রায় একহাজার দলিল ঝিকরগাছা অত্র অফিসে রেজিস্ট্রি হয়। সে হিসেবে, প্রতিমাসে গ্রাহকদের কাছ থেকে হতিয়ে নেয়া হয় ২০ লাখ টাকা। মহুরি জহুরুল হক-নেছার আলী-আব্দুল আজিজ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এই টাকা আদায় করা হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে।
অভিযোগ আছে বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে গড়ে ওঠা এই সিণ্ডিকেটের ক্যাশিয়ার হিসাবে পরিচিত দলিল লেখক জহুরুল হক বর্তমানেও এই সিণ্ডকেট পরিচালনার দায়িত্বে আছেন। কথিত আছে, এই কাজ করে তিনি বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় তার একাধিক বাড়ি ও গাড়ি আছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান।
অপরদিকে, অত্র অফিসের নকলনবিশ এ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে দলিল প্রতি ২শ’ টাকা আদায় করা হয়। সে হিসেবে আদায়কৃত অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ লাখ টাকা। এছাড়া দলিলের সার্টিফাইড কপি উত্তোলন বাবদ গ্রাহকদের কাছ থেকে নেয়া হয় ১৬ /১৭শ’ টাকা। অথচ সরকারি ফিস ৮/৯শ’ টাকা। হিসেব মতে প্রতিমাসে এক হাজারটি দলিলের বিপরীতে ৮ লাখ টাকা উত্তোলন করে ওই সিণ্ডিকেট। সাদ আমিন রনি- সাহাজুল ইসলাম দীপু-সন্টু আওয়ামী যুবলীগের পরিচয়ে এই সিণ্ডিকেট পরিচালনা করে আসছে।
অভিযোগ রয়েছে, ঝিকরগাছা রেজিস্ট্রি অফিসে স্থায়ী কর্মচারী  সিণ্ডিকেট পড়চা, ওয়ারেশ কায়েম সার্টিফিকেট ও দানপত্র দলিলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দলিল প্রতি ২ হাজার টাকা করে গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে। মাস শেষে যার পরিমাণ ২০ লাখ টাকা। আদায়কৃত এসব টাকার একটা অংশ প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করতে ব্যয় করা হয় বলে জানা গেছে।
অভিযোগে আরো জানা গেছে, এই সকল সিণ্ডিকেটের প্রধান সমন্বয়ক ও মাস্টারমাইন্ড জুম্মান হোসেন সোহেল নকলনবিশ হওয়া সত্ত্বেও তার জন্য অফিসের ভেতরে আলাদা একটি কক্ষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
জানতে চাইলে দলিল লেখক কল্যাণ সমিতির দপ্তর সম্পাদক কাম ক্যাশিয়ার জহুরুল হক বলেন, আমরা শুধুমাত্র আমাদের পারিশ্রমিক বাবদ দলিল প্রতি প্রথম লাখে ২ হাজার ও পরবর্তী প্রতি লাখে ১ হাজার করে টাকা নিয়ে থাকি এবং মাস শেষে সেই টাকা সকল নিবন্ধনধারী দলিল লেখকের মধ্যে বন্টন করে দিয়ে থাকি। আর যে সকল টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে এ সম্পর্কে আমি কিছু জানি না।
দলিল লেখক কল্যাণ সমিতির সভাপতি আকবার আলী বলেন, আমরা দায়িত্ব নিয়েছি তিন মাস। এ ধরনের কোনো টাকা লেনদেনের খবর আমার জানা নেই। বিগত আওয়ামী লীগের আমলের আশীর্বাদপুষ্ঠ জহুরুল ইসলামকে স্বপদে বহাল রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, তার নামে এর আগেও এরকম অভিযোগ উঠেছে। তাকে শুধরে নেয়ার জন্য এই পদে রাখা হয়েছে এবং এই মাসটা দেখা হবে। সে যদি ভালো না হয় তবে ফেব্রুয়ারিতে তাকে কমিটি থেকে বাদ দেয়া হবে। সমিতির সদস্যদের জন্য দলিল প্রতি কিছু টাকা নেয়া হয় বলে তিনি স্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে ঝিকরগাছার খন্ডকালিন ও মনিরামপুর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার মোস্তাক আহম্মেদ শাকিল বলেন, আমি সপ্তাহে একদিন ঝিকরগাছা অফিসে দায়িত্ব পালন করি। এরকম কোনো সংবাদ আমার জানা নেই। তবে কেউ অভিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Home
News
Notification
Search
Exit mobile version