বাংলার ভোর প্রতিবেদক

যশোর শহরের দেশ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আবারও ভুল অপারেশনে ডলি খাতুন (৩০) নামে এক প্রসূতীর জীবন সংকটাপন্ন। এ প্রতিষ্ঠানে ইএনটি বিভাগের ডাক্তার শামীম রেজা গাইনি বিদ্যায় বিশেষজ্ঞ না হয়েও তিনি ডলি খাতুনের সিজারিয়ান অপারেশন করতে গিয়ে খাদ্যনালী ও প্রস্রাবের নালী একসাথে সেলাই করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে রোগী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। ঢাকার চিকিৎসক মাধ্যমে ভুল অপারেশনের বিষয় জানতে পেরে স্বজনরা দেশ ক্লিনিকে বিষয়টি জানতে গেলে শুরম্ন হয় গোলযোগ। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

রোববার বিকেলে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের গেটের সামনে দেশ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে। ডলি খাতুন বাঘারপাড়া উপজেলার চাঁনপুর গ্রামের মহিদুল ইসলামের স্ত্রী।

ডলির মামাতো ভাই হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, গত ২৯ মে ডলির প্রসব বেদনা ওঠে। তখন গ্রামের লোকজনের মাধ্যমে সিজারের জন্য দেশ ক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখানে জেনারেল হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের ডাক্তার শামীম রেজাকে গাইনি চিকিৎসক বলে পরিচয় করিয়ে দেন। তখন স্বজনরা তাকে দিয়ে ডলির সিজার করান। কিন্তু সিজারের পর থেকে রোগীর শারীরিক বিভিন্ন সমস্য দেখা দেয়। পরে রোগীকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েও কোন ফল না পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের নিয়ে যান গত ৬ জুলাই। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসক স্বজনদের জানান, সিজারের সময় চিকিৎসক রোগীর খাদ্যনালী ও প্রস্রাবের নালী একসাথে সেলাই কওে দেয়া হয়েছে। ফলে তার পেট ফুলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে রোগীর প্রসাবের রা¯ত্মা থেকে মল-মূত্র বের হচ্ছে। দ্রুত উন্নত চিকিৎসা না হলে যে কোন সময় রোগীর মৃত্যু হতে পারে। এ সংবাদ যশোরে স্বজনরা জানতে পারলে তারা রোববার ক্লিনিকে ডাক্তার শামীম রেজার কাছে সিজারের বিষয় জানতে যান। তখন উভয় পড়্গরে মধ্যে গোলযোগের সৃষ্টি হয়। পরে আশ-পাশের লোকজন ঘটনাস্থলে জমায়েত হলে শুরম্ন হয় কথা কাটাকাটি। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

অপর একটি সূত্র জানান, ডাক্তার শাহীন রেজা যশোর জেনারেল হাসপাতালের ইএনটি বর্হিবিভাগে রোগী দেখেন। তিনি কোনো সার্জরি ডাক্তার নন। কিন্তু শহরের ৪ থেকে ৫ টি ক্লিনিকে বিভিন্ন ধরনের সার্জরি করে থাকেন। ১৫ দিন আগেও তিনি একটি ক্লিনিকে এক রোগীর পিত্তথলির পাথর অপরেশন করে বির্তকে পড়েন। ওই রোগীও অপচিকিৎসার শিকার হয়। বর্তমান রোগীটি ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

রোগীর বোনপো সাকিবুজ্জামান সাকিব জানান, অপারেশনের পরে ডাক্তার বা প্রতিষ্ঠান তার ফুপুর কোনো দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেন। বর্তমান রোগী ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এখনো পর্যšত্ম রোগীর পিছনে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। কিন্তু রোগী কোনো ভাবেই সুস্থ হচ্ছেনা। এ ঘটনায় তিনি প্রশানের হস্তক্ষেপ কামনা করেছন।
কোতোয়ালী মডেল থানার এসআই জাহিদুল ইসলাম জানান, ক্লিনিকে ডাক্তার ও রোগীর স্বজনদের হট্টগোল হচ্ছে খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। রোগীর স্বজনরা মৌখিক অভিযোগ করেছন, ডাক্তারের অপচিকিৎসার শিকার হয়েছে ওই নারী। আর ডাক্তার বলছেন, তাকে আটকে রেখে নির্যাতন করতে চেয়েছিলো রোগীর স্বজনরা। কোনো পক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলো আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অভিযুক্ত ডাক্তার শাহীন রেজা জানান, তিনি গাইনি বা সার্জরি বিভাগের ডাক্তার নন সত্যি। যশোর জেনারেল হাসপাতালের ইএনটি বিভাগে কর্মরত আছেন। এমবিবিএস ডাক্তার সকল চিকিৎসা ও অপারেশন করতে পারেন বলে দাবি করেন তিনি। রোগীর স্বজনদের আগে কোনো অভিযোগ করেনি। একটি চক্র তাকে ফাঁসাতে চেষ্টা করছে। আর রোগীর কি সমস্যা হয়েছে তিনি অবগত নন। কখনো রোগীর স্বজনরা কোনো অভিযোগ নিয়ে তার কাছে আসেনি। রোগীর চিকিৎসায় কোনো ভুল হয়েছে কিনা যা জনতে হলে আগে তাকে রোগীর কাগজপত্র দেখতে হবে।

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের মালিক রাজু আহম্মেদ বলেন, দেড়মাস আগে ডাক্তার শামীম রেজা একটি সিজার করে ছিলেন। কিন্তু ভুল সিজার হওয়ার কারণে রোগীর অবস্থা খারাপ। তাই স্বজনরা ক্ষতিপূরণ নিতে ক্লিনিকে এসে ছিলেন।

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Exit mobile version