জীবননগর সংবাদদাতা
চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের দেড় মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছেন গৃহবধূ শারমিন খাতুন। আর মেয়ে নিখোঁজ হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পিতা-মাতা।
জানা যায়, ১০ বছর আগে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ঝাঁজরি গ্রামের সাব্বির হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয় জীবননগর উপজেলার শাহপুর গ্রামের ফারহানা আক্তার শারমিনের। বিয়ের দুই বছর পর তাদের ঘরে জন্ম হয় এক কন্যার। তার বয়স এখন ৮ বছর।
জানা গেছে, বন্ধুত্বের সুযোগে সাব্বিরের বাড়িতে যাওয়া-আসার মধ্যে শারমিনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন আহসান হাবিব। এই সম্পর্কের জেরে সাব্বিরকে তালাক দিয়ে ৪ মাস আগে আহসান হাবিবকে বিয়ে করেন শারমিন। এর আড়াই মাসের মাথায় নেমে আসে দুঃসংবাদ।
গত ১ আগস্ট আহসান হাবিব শারমিনকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী ঘুরতে যাওয়ার কথা জানালে শারমিনের ভাই মেহেদী হাসান বোনকে সকালের দিকে ঝিনাইদহে দিয়ে আসেন। এরপর পরিবারের সঙ্গে কথা হয় বেলা ৩টায়। তারপর থেকে আর খোঁজ নেই শারমিন ও তার স্বামী আজানের। নিখোঁজের দেড় মাস অতিবাহিত হলেও থানায় জিডি এবং আদালতে মামলা করেও কোনো খোঁজ মেলেনি তাদের। প্রশাসন থেকেও তেমন সহযোগিতা মেলেনি বলে দাবি পরিবারের। তারা এখন শারমিনের মৃত অথবা জীবিত সন্ধান চান।
সম্প্রতি শারমিন ও আহসান হাবিবের বাড়িতে যায় এই প্রতিবেদক। তিনি শারমিনের বাড়িতে গিয়ে দেখেন শোকে কাতর পরিবারের সদস্যরা। তবে ঠিক উল্টো চিত্র মেলে আহসান হাবিবের বাড়িতে। তার বাড়ির প্রধান গেট তালাবদ্ধ ছিল। তার প্রথম স্ত্রী ও ছেলে সেখানে থাকেন না বলেন জানান গ্রামের কয়েকজন। গ্রামের কেউ তার বিষয়ে কথা বলতেও রাজি হননি।
শারমিনের ভাই মেহেদী হাসান বলেন, গত ১ আগস্ট তিনি মোটরসাইকেলে করে বোনকে ঝিনাইদহে পৌঁছে দিয়ে আসেন। এরপর থেকে বোনের আর কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না। তার ফোন বন্ধ। এমনকি তারা যে গাড়িতে (সিএনজিচালিত অটোরিকশা) যায় সেই গাড়িচালকের বাড়িতে যেয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
মেহেদী হাসান আরও বলেন, চুয়াডাঙ্গা সদর থানার পুলিশ গাড়িচালককে আটক করলে তিনি এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের সন্ধান অথবা হাজির করার কথা বলরেও ৮ দিন হয়ে গেলেও কোনো সন্ধান পাইনি।
শারমিনের মা হাসিনা বেগম বলেন, আমি আমার মেয়েকে ফেরত চাই। জীবিত হোক আর লাশ। আমি আমার মেয়েকে ফেরত চাই। আমাদের সহযোগিতা করেন আপনারা।
শারমিনের বাবা শাহার আলী বলেন, আমাদের মেয়েকে মেরে ফেলেছে কী জীবিত আছে, আমরা নিজের চোখে দেখিনি। আমরা মেয়েকে চাই।
এ বিষয়ে আজানের দুলাভাই স্বপন বলেন, আজানের কোনো খোঁজখবর আমাদের কাছে নেই। আমি শুনাল সিএনজি চালক আরিফ ধরা পড়েছে। সে এক সপ্তাহ সময় নিয়েছে। আরিফ যেদিন থেকে নিখোঁজ, তারাও সেদিন থেকে নিখোঁজ। আরিফ তো দেখছি এখন বাড়ি রয়েছে। আমি তাদের কোনো খোঁজখবর জানি না।
এ বিষয়ে কথা হয় জীবননগর থানার উপপরিদর্শক ও জিডি তদন্তের দায়িত্বে থাকা কৃষ্ণপদ হালদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা আজান, শারমিন ও গাড়ি চালক আরিফের আইডি কার্ড দিয়ে যে কয়টি সিম ছিল সব নম্বরের কল ডিটেইল রেকর্ড (সিডিআর) তুলেছি। এমনকি ফোনের আইএমইআই নম্বর তুলেও লোকেশন জানান চেষ্টা করেছি। তবে শারমিন সর্বশেষ লোকেশন ঝিনাইদহ আর আজানের কুষ্টিয়া পাওয়া গেছে। এরপর থেকে সব বন্ধ। গত সপ্তাহে গাড়ি চালককে আটক করা হয়েছিল। পরে তাকে এক সপ্তাহ সময় দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ডিবির উপপরিদর্শক শরিয়ত উল্লাহ বলেন, জিডি পাওয়ার পর সিএনজিচালক আরিফকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মামলা না থাকায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। তাকে আজান ও শারমিনের তথ্য দেয়ার জন্য ৭ দিন সময় দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে তার মা মারা গেছে। আর ঘটনা যেহেতু জীবননগর থানার আওতায়। এজন্য এখন শুধুমাত্র জীবননগরের জিডিটা আছে। চুয়াডাঙ্গারটা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে ঝিনাইদহ সিআইডির পরিদর্শক মো. ইউছুপের ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Exit mobile version