বাংলার ভোর প্রতিবেদক

পদ্মাসেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের আওতায় ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে যশোরের রূপদিয়া পর্যন্ত পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল ‘ট্রায়াল রান’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (৩০ মার্চ) সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে ভাঙ্গা থেকে ছাড়া পণ্যবাহী ট্রেনটি সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে যশোরের রূপদিয়া রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছে। ট্রেনটি প্রায় ১০ মিনিট এই স্টেশনে অবস্থান করে।

এরপর আবার ভাঙ্গার দিকে রওনা হয়। একইভাবে বেলা ১২টার দিকে যাত্রীবাহী ট্রেন ভাঙ্গা-যশোর রুটে যাত্রা করে। যশোর ঘুরে ফের ভাঙা স্টেশনে ফিরেছে ট্রেন। এর মাধ্যমে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প ভাঙ্গা-যশোর প্রথম ধাপের পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল সম্পন্ন হলো। একই রুটে রোববারও চলবে পরীক্ষামূলক ট্রেন।

জানা যায়, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে এই রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ অর্থায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘চায়না রেলওয়ে গ্রুপ’ (সিআরইসি) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। এ প্রকল্প শেষের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। মাঠ পর্যায়ে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে। ২০১৬ সালের ৩ মে একনেকে ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প’ নামে এটির অনুমোদন হয়।

এই প্রকল্পের ব্যয় হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ব্রডগেজ ওই রেলপথে ভাঙ্গা, কাশিয়ানী এবং যশোরের পদ্মবিলা ও সিঙ্গিয়াতে রেলওয়ে জংশন থাকছে। এছাড়া নগরকান্দা, মুকসুদপুর, মহেশপুর, লোহাগড়া, নড়াইল এবং যশোরের জামদিয়া ও রূপদিয়াতে রেলস্টেশন হয়েছে। কাজের অংশ হিসেবে শনিবার ও রোববার দুই দিন ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত বিভিন্ন গতিতে ট্রেন চালিয়ে নির্মাণ অবস্থা পরীক্ষা করা হচ্ছে।

শনিবার (৩০ মার্চ) সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে ভাঙ্গা থেকে ছাড়া পণ্যবাহী ট্রেনটি সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে যশোরের রূপদিয়া রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছে। প্রায় ১০ মিনিট এই স্টেশনে অবস্থান করে। এরপর আবার ভাঙ্গার দিকে যাত্রা শুরু করে। একইভাবে বেলা ১২টার দিকে যাত্রীবাহী ট্রেন ভাঙ্গা-যশোর রুটে যাত্রা করে। দেড়টার দিকে যশোর ঘুরে ফের ভাঙায় ফিরে যায় ট্রেনটি। এর মাধ্যমে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প ভাঙ্গা-যশোর প্রথম দিনের পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল সম্পন্ন হলো। একই রুটে রোববারও চলবে পরীক্ষামূলক ট্রেন।

পরীক্ষামূলক ট্রেনের চালক আব্দুল মান্নান বলেন, সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে আমরা ভাঙ্গা ছেড়ে আসি। সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে যশোরের রূপদিয়া স্টেশনে পৌঁছেছি। ভাঙ্গা থেকে যশোর অংশের ৮৭ দশমিক ৩২ কিলোমিটার পথ ৬০-৮০ কিলোমিটার বেগে পাড়ি দিয়েছেন তারা। পথে কোথাও কোনও সমস্যার সম্মুখীন হননি তারা।

এদিকে, পদ্মা রেল সেতু হয়ে নতুন ট্রেন চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় খুশি স্থানীয়রা। তাদের দাবি, এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল খান বলেন, পদ্মাসেতুর রেলসংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগের বিপ্লব ঘটলো। এই অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে ঢাকার দূরুত্ব কমেছে। সহজেই যাতায়াত করতে পারবো।
আরেক বাসিন্দা আলমগীর কবির বলেন, পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলের মধ্যদিয়ে রেল যোগাযোগের মাইলফলক তৈরি হলো। এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন পূরণ হলো। রেল যোগাযোগের মাধ্যমে এই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মানও বদলে যাবে।

এ বিষয়ে যশোর রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার আয়নাল হাসান বলেন, এই ট্রেন যশোরবাসীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঈদের উপহার। পণ্যবাহী (পাথর) ট্রেনটি ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে যশোরে আসে। যাওয়ার সময় আরও বেশি বেগে গিয়েছে।

যাত্রীবাহী ট্রেনের গতি ১০০-১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত পরীক্ষা করা হবে। দুইদিনের পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলের পর আগামী জুন মাস নাগাদ এই রুটে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে।

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Exit mobile version