বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের নওয়াপাড়ায় ভৈরব নদে অনুষ্ঠিত হলো গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। শুক্রবার বিকেলে দর্শকদের উল্লাস আর উৎসবমুখর প্রতিযোগিতার এই আযোজন করে অভয়নগর স্পোর্টস ক্লাব। নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে নদীর দু’পাড়জুড়ে ছিল হাজার হাজার মানুষের সমাবেশ। ছিল গান-বাজনা আর গ্রামীণ বিনোদনের নানা আয়োজন। আয়োজকরা বলছেন, প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখা এবং সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চা বিস্তারে এমন আয়োজন।

আয়োজকরা জানান, গোপালগঞ্জ, নড়াইল, মাগুরা ও খুলনাসহ মোট ৮ টি নৌকা অংশ নেয় প্রতিযোগিতায়। তালতলা খেয়াঘাট থেকে হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির পাশের ফেরিঘাট পর্যন্ত চলে বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টানটান উত্তেজনাপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা। উৎসবমুখর এই আয়োজনে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বন্দর নগরী নওয়াপাড়া ভৈরব নদের দু পাড়ে অর্ধলক্ষাধিক নারী-পুরুষ বিভিন্ন সাজে দাঁড়িয়ে নৌকাবাইচ উপভোগ করছেন। অনেকেই নৌকা ও ট্রলার ভাড়া করে এই উৎসব দেখছেন। নৌকাবাইচ উপলক্ষে নদীর দুপাড়েই বসেছে গ্রামীণ মেলা। নাগরদোলা, মুড়ি-মুড়কিসহ গ্রামীণ মেলার আবহ সৃষ্টি হয় কয়েক ঘন্টার এই মেলায়। মেলায় মিষ্টির দোকান, খেলনা ও বিভিন্ন খাবার দোকানের পসরা সাজিয়েছিলেন দোকানিরা। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অঞ্চলের মেয়েদের জামাইরা বউ নিয়ে শ্বশুরবাড়ি এসেছেন। আত্মীয়-স্বজন, পরিবার-পরিজন নিয়ে মেতে ওঠেন আনন্দে।

নৌকাবাইচ দেখতে খুলনার তেরখাদা থেকে আসা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ অভয়নগরের সিদ্ধিপাশা আমার শ্বশুরবাড়ি। বউ-শালী ও শ্যালকদের নিয়ে এই নৌকাবাইচ দেখতে এসেছি। ভৈরব নদে দীর্ঘদিন ধরে নৌকাবাইচ হয়; মাঝে দু বছর বন্ধ ছিলো; এবার নতুনভাবে হয়েছে। দুধারে মেলা আর নৌকার প্রতিযোগিতা অনেক ভালো লাগছে।’


স্থানীয় ব্যবসায়ী তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘নৌকাবাইচকে কেন্দ্র করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে ভৈরব নদ। প্রতিযোগিতাতা কেন্দ্র করে; এলাকায় প্রতিটি বাড়িতেই আত্মীয়তে ভরে গেছে। আত্মীয় স্বজন নিয়ে নৌকাবাইচ দেখতে এসেছি। মেলায় ঘুরে উপভোগ করছি। খুব আনন্দ লাগছে।’

মিষ্টি ব্যবসায়ী প্রিয় ধর বলেন, ‘নৌকাবাইচের মেলায় মিষ্টি বিক্রি করতে আসি। মাঝে কয়েক বছর বন্ধ ছিলো; এবার নতুন উদ্যোমে শুরু হয়েছে। এবারও মেলায় দোকান দিয়েছি। দোকানে রসগোল্লা, আমৃত্তি, দানাদার, জিলাপিসহ বিভিন্ন মিষ্টি সামগ্রি রয়েছে।’ দর্শকরা জানালেন, প্রতিবছর এমন আয়োজনের সংখ্যা আরও বাড়ানো উচিত।

আয়োজকরা জানান, আটটি দলের মধ্যে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার ‘জয় মা কালি’ নামের নৌকাটি প্রথম স্থান অধিকার করে। এছাড়া টুঙ্গিপাড়ার ‘মোবাইল ব্যাটারি’ নামের নৌকা ২য় এবং মাগুরা জেলার ‘মাগুরা টাইগার’ নামের নৌকাটি ৩য় স্থান অধিকার করেন। প্রতিযোগিতায় পুরস্কার হিসেবে প্রথম বিজয়ী দলকে ৩০ হাজার, ২য় বিজয়ী দলকে ২৫ হাজার এবং ৩য় বিজয়ী দলকে ২০ হাজার করে টাকা দেয়া হয়।

প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর) সংসদীয় আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী ও জেলা আমীর অধ্যাপক গোলাম রসুল। বিশেষ অতিথি ছিলেন, অভয়নগর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর সরদার শরিফ হুসাইন, উপজেলার সাবেক আমীর মাওলানা মশিউর রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অভয়নগর স্পোর্টস ক্লাবের প্রধান উপদেষ্টা এম এম আশিকুজ্জামান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অভয়নগর স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি আমানুল্লাহ সাদিক।

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Exit mobile version