বাংলার ভোর প্রতিবেদক

যশোর সদর উপজেলার বাহাদুরপুর এলাকার তেঁতুলতলা মোড়ে যুবলীগ কর্মী আলী হোসেনকে (৩০) গুলি করে হত্যার ঘটনায় ছয়জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৫/৭ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। হত্যার তিনদিন পর রোববার মধ্যরাতে কোতয়ালি থানায় মামলা হয়েছে। মামলার বাদি নিহত আলী হোসেনের মা আঞ্জু আরা বেগম।

আসামিরা হলেন, যশোর সদর উপজেলার কিসমত নওয়াপাড়া গ্রামের মবজেল হোসেনের ছেলে নবাব হোসেন (৫৭) ও সিরাজ (৫২), পাঁচবাড়িয়া গ্রামের একরামুল (৪৫), বাহাদুরপুর গ্রামের টোকন (৪৫), চাঁচড়া ভাতুড়িয়া গ্রামের ইসরাজুল (২৫) ও কিসমত নওয়াপাড়া গ্রামের এনামুল শেখ (২৮)।

নিহত আলী হোসেন যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি সদর উপজেলা বাহাদুরপুর গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে। বৃহস্পতিবার (৬ জুন) মধ্যরাতে শহর থেকে বাড়িতে ফেরার পথে বাহাদুরপুর এলাকার তেঁতুলতলা মোড়ে পৌঁছালে সন্ত্রাসীরা গুলি করে আলী হোসেনকে হত্যা করে।

এ বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, পূর্বশত্রুতার জেরে নবাব ও তার সহযোগিরা গুলি করে আলী হোসেনকে হত্যা করেছে। কি শত্রুতা ছিলো, তা উল্লেখ করা হয়নি’।

জানা যায়, ৫ জুন অনুষ্ঠিত সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থী তৌহিদ চাকলাদারের কর্মী ছিলেন আলী হোসেন। তার বিজয় উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (৬ জুন) রাতে উপশহর ই-ব্লক এলাকায় প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়। ওই আয়োজন শেষে মোটরসাইকেলে করে বাড়িতে ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা আলী হোসেনের মাথা ও পিঠে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। পরিবারের লোকজনের দাবি, দুই কারণে আলী হোসেনকে হত্যা করা হতে পারে।

এক আলী হোসেন মাটির ব্যবসা করতেন। ব্যবসা নিয়ে আলী হোসেনের সঙ্গে পাশের কিসমত নওয়াপাড়া গ্রামের নবাবের বিরোধ ছিলো। মূলত নবাবের ভাই সিরাজ ও আলীসহ কয়েকজন ভৈরব নদীর মাটি ও বালু তুলে ব্যবসা করতেন। সেই ব্যবসা নিয়ে সিরাজ ও আলী মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। নবাব ভাইয়ের পক্ষ নিয়ে আলীর সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে।

দ্বিতীয় কারণ হলো, সম্প্রতি শেষ হওয়া উপজেলা নির্বাচনে নবাব ও আলী দুইজন দুই পৃথক প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে কাজ করেন। আলী বিজয়ী প্রার্থী তৌহিদ চাকলাদার ও নবাব পরাজিত প্রার্থী ফাতেমা আনোয়ারের পক্ষে নির্বাচনী কাজ করেন। এটাই হত্যাকাণ্ডের একটা কারণ হতে পারে।

প্রত্যক্ষদর্শী সোহান হোসেন বলেন, ‘কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটি মোটরসাইকেলে করে দুইজন আমাদের মোটরসাইকেলের পিছনে এসে অতর্কিত গুলি ছোড়ে। প্রথম গুলির শব্দে আমরা মোটরসাইকেল থেকে পড়ে যাই।

এরপর এক মিনিটের মধ্যে আলী হোসেন ভাইয়ের পা, পিঠ ও মাথায় ৫টি গুলি করে সন্ত্রাসীরা চলে যায়। হাসপাতালে নেয়ার পথেই আলী ভাই মারা যান’। সেই রাতে একটি মোটরসাইকেলে করে আলী হোসেন, সোহান হোসেন ও নয়ন- একসাথেই বাড়িতে ফিরছিলেন।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘আলী হোসেনের অতীত রেকর্ড ভালো না। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ চারটি মামলা রয়েছে’। মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে আলী হোসেনের বাবা আবদুর রহমান বলেন, ‘আলী হোসেনের বিরুদ্ধে হত্যা ও মারামারি দুইটা মামলার কথা আমরা জানি। সে এলাকার মানুষের উপকার করতো। এলাকার চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ঘটনার শালিস মিমাংসাও করতো। সঙ্গ দোষে ও মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কারণে কিছু দোষত্রুটি থাকতে পারে’।

Share.
Exit mobile version