বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের ঝিকরগাছায় দলীয় প্রতিপক্ষের হামলায় পিয়াল হাসান (২৮) নামে এক যুবদল কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে ধাওয়া করে ঝিকরগাছা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভিতরে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় তাকে। নিহত পিয়াল ঝিকরগাছার মোবারকপুর বিশ্বাসপাড়া এলাকার কিতাব আলীর ছেলে। পিয়াল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমরান সামাদ নিপুনের কর্মী ছিলেন। পিয়ালের নামে বিস্ফোরক আইনসহ ১০টি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিহতের স্বজন ও পুলিশ জানায়, যুবদলের রাজনীতির পাশাপাশি পিয়াল ঝিকরগাছা বাজারে মুরগির ব্যবসা করতেন।

গত ৫ আগস্ট বাজারে নিজ দলের আধিপত্যে বিস্তার নিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর নুরুজ্জামান বাবুর অনুসারী পৌর ছাত্রদলের সভাপতি শামীম রেজার সঙ্গে বিরোধ হয়। সেই বিরোধের জেরে ওই দিন কাউন্সিলর বাবু, পৌর ছাত্রদল নেতা শামীম রেজাসহ কয়েকজন পিয়ালের দোকান ভাংচুর করেন। এর প্রেক্ষিতে পিয়ালও শামীম রেজার বাবা কামরুলকে পিটিয়ে আহত করে। সেই মামলায় সম্প্রতি তিনি আত্মসমর্পণ করেন। কারাভোগ শেষে গত বৃহস্পতিবার তিনি জামিনে মুক্তি পান। ওই দিন রাতেই ছাত্রদল নেতা শামীম রেজাসহ কয়েকজন পিয়ালের বাড়িতে হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ ও তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসে।

এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার আবারও পিয়ালের দোকানে আসেন কাউন্সিলর বাবু, শামিমসহ কয়েকজন। সেখানে নিজ অপরাধে অনুতপ্ত হয়ে শামীম রেজার কাছে ক্ষমা চান পিয়াল। কিন্তু সেখানে পিয়ালকে ক্ষমা না করে কুপিয়ে আহত করে শামীম ও তার সহযোগীরা। এর পর নিজ প্রাণ বাঁচাতে পিয়াল বাজার থেকে পালালে তাকে উদ্দেশ্য করে বোমা নিক্ষেপ করে। বোমা লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে তিনি পালিয়ে স্থানীয় পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভিতরে ঢুকে পড়েন। সেখানে একটি ভবনের বারান্দায় পিয়ালকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায় কাউন্সিলর বাবু, শামীমেরা। এর পর পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স তারপর যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।


নিহতের ছোট ভাই সুমন হাসান বলেন, ঝিকরগাছা মুরগি বাজারে ৫ আগস্ট পিয়ালের সঙ্গে কাউন্সিলর নুরুজ্জামান বাবু ও ছাত্রদল নেতা শামীমদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়। সেই ঘটনায় মামলা হলে সম্প্রতি কারাভোগ করে তার ভাই জামিনে মুক্ত হয়। এর পর শামীমরা আমার ভাইকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসে। আমার ভাই কয়েক দফা তাদের কাছে ক্ষমা চেয়েও মাফ পেল না। আজ আমার ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। মৃত্যুর ভয়ে বন্ধ স্কুলে লুকালে তারা পিয়ালকে খুঁজে বের করে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা নিশ্চিত করে।

স্থানীয়রা জানান, ৫ আগস্টের পরে ঝিকরগাছা উপজেলাতে বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠে। প্রায় প্রতিদিনই নিজেদের ভিতরে হামলা ভাংচুর, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ জড়াচ্ছে নেতাকর্মীরা। নিহত পিয়াল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমরান হাসান নিপুনের কর্মী এবং অভিযুক্তরা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোর্তজা এলাহী টিপুর অনুসারী। নিজেদের আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব বিরোধ নিয়ে গত ৫ আগস্ট ওই হামলা ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছিলো বলে স্থানীয়রা জানান।

নাভারণ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার নিশাত আল নাহিয়ান জানান, পিয়াল ও অভিযুক্তরা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও এই ঘটনা পূর্ব বিরোধের জের ধরে সংঘটিত হয়েছে। তিনি বলেন, নিহত পিয়ালের নামে বিস্ফোরক আইনের মামলাসহ ১০ টি মামলা রয়েছে। এই হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের পুলিশ চিহ্নিত করতে পেরেছে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হত্যার রহস্য উদঘাটনে কাজ শুরু করেছে।

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Home
News
Notification
Search
Exit mobile version