বাংলার ভোর প্রতিবেদক
বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পথে আসছে ভারতীয় পণ্য। এর মধ্যে রয়েছে কম্বল, চকলেট, প্রসাধনীসহ আরও অনেক কিছু। এসব পণ্য পরিবহনে ব্যবহার হচ্ছে কমিউটার ট্রেন। চোরাকারবারিরা ‘বেতনা এক্সপ্রেস’ ও ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ ট্রেনে অনায়াসে পণ্য পরিবহন করছে।

অভিযোগ রয়েছে, আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের চোখের সামনে এসব কর্মকাণ্ড চললেও তারা নীরব ভূমিকা পালন করে। ট্রেনে কোনো তল্লাশি চালানো হয় না। এছাড়া বেনাপোল থেকে যশোর, খুলনা কোথাও চেকপোস্ট নেই। নেই বিজিবি বা পুলিশের পাহারা। ফলে চোরাকারবারিরা বেনাপোল থেকে ছেড়ে যাওয়া বেতনা ও বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন দুটিকে মালামাল পাচারের নিরাপদ বাহন হিসেবে ব্যবহার করছে। এর মধ্যে আবার নির্দিষ্ট থানা পার হতে দালালদের টাকা দিচ্ছে চোরাকারবারিরা।

বেতনা এক্সপ্রেস ট্রেন প্রতিদিন বেনাপোল থেকে সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে ও বিকেল ৫টায়- এই দুবার যাওয়া-আসা করে থাকে। আর বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি দুপুর ১টায় ছেড়ে যায় বেনাপোল থেকে। এসব ট্রেনে কম্বলের সঙ্গে মাদক, থ্রি-পিস, চকলেট, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রসাধনী, ইমিটেশন গহনা, সিগারেট, মোবাইল, কাপড়, কিসমিস, নিম্নমানের চা পাতা, আমদানি নিষিদ্ধ ওষুধসহ বড় বড় চালান নির্বিঘ্নে যশোর-খুলনাসহ বিভিন্ন স্থানে পাচার হয়ে যাচ্ছে। ফলে সরকার হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব।

বেনাপোল রেলস্টেশনে দেখা যায়, সকালে শত শত নারী-পুরুষ ট্রেনের অপেক্ষায়। ট্রেন আসার সঙ্গে সঙ্গে তারা মালামাল নিয়ে বিভিন্ন বগিতে উঠে পড়ছেন। সিটের নিচে, এমনকি সিটের ওপরে রেখে দেন এসব মালামাল। ফলে সাধারণ যাত্রীরা টিকিট কেটে সিটে বসতে পারেন না। এতে ভোগান্তি পড়েন যাত্রীরা।

যাত্রীরা জানান, যশোর-খুলনায় যেতে বাসের চেয়ে ট্রেনের ভাড়া কম বলে তাদের প্রথম পছন্দ ট্রেন। কিন্তু এই দুটি ট্রেনে চোরাকারবারিদের দাপটে কোণঠাসা তারা। টিকিট কাটলেও কোনো কোনো সময় সিটে বসতে পারেন না। এরমধ্যে আবার রোগীরা পড়েন সবচেয়ে বেশি বিপাকে। ট্রেনের যাত্রী আনারুল ইসলাম বলেন, আমি প্রতিদিন ব্যবসার কাজে যশোর থেকে বেনাপোলে যাতায়াত করি। আসা-যাওয়ার পথে নারী চোরাকারবারিরা ভারতীয় কম্বলসহ অন্যান্য মালামাল নিয়ে ট্রেনে ওঠে। আগে এসব মালামাল আমদানি করে আনা হতো। সরকারও রাজস্ব পেতো। এখন এগুলো অবৈধভাবে আসছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কঠোর হলে চোরকারবারিদের তৎপরতা কমবে।

বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার সাইদুজ্জামান বলেন, আমরা যাত্রীদের ভালো সেবা দিতে কাজ করছি। চোরাচালান প্রতিরোধের জন্য রেলওয়ে পুলিশ রয়েছে। এটা তাদের কাজ।

এ ব্যাপারে বেনাপোল রেলওয়ে ফাঁড়ির দায়িত্বে নিয়োজিত এসআই মনিরুল ইসলাম বলেন, রেলের যাত্রীদের নিরাপত্তাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, রেললাইনের দুই পাশে ১০ ফিটসহ রেলের সব স্থাপনায় সংঘটিত অপরাধ রেলওয়ে পুলিশ দেখভাল করে। রেলে চোরাচালান বন্ধে অনেক কৌশল নিলেও তাদের অসহায়ত্বের কাছে কিছুটা নমনীয় হতে হয়। তারপরও ট্রেনে অভিযান চালানো হচ্ছে। চোরাচালান রোধে রেল পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল মিয়া জানান, রেলের দায়িত্বে রয়েছে রেলওয়ে পুলিশ। সে কারণে সেখানে থানা পুলিশের কোনো ভূমিকা নেই। তবে গোপন তথ্য পেলে অভিযান চালানো হয়।

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Exit mobile version