বাংলার ভোর প্রতিবেদক
জামায়াত ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে শুধু পূর্ণ বয়স্করা যুদ্ধ করেনি। সবাই মিলে যুদ্ধ করেছে। কোলের শিশুও শাহাদৎবরণ করেছে। ৮০ বছরের বৃদ্ধও শাহাদৎ বরণ করেছে। একই সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছি। আমাদের এই জাতীয় ঐক্য ধরে রাখতে হবে। এই ঐক্যের কোন ফাঁক দিয়ে যেন কেউ ঢুকে ঐক্য বিনষ্ট করতে না পারে। এই জন্য ছাত্রজনতা বাংলাদেশের সকল জনগণকে সজাগ থাকতে হবে। শুক্রবার রাতে যশোর শহরের চাঁচড়া চেকপোস্ট মোড়ে পথসভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।

জামায়াতের আমীর যশোরের আগমণকে ঘীরে যশোর বিমানবন্দর থেকে চাচড়া চেকপোস্ট পর্যন্ত ঢল নামে নেতাকর্মীদের। প্রিয় নেতাকে এক নজর দেখার জন্যই এই ঢল নামে। দরজার সামনে দাড়িয়ে তিনি মিষ্টি শীতের শুভেচ্ছা জানিয়ে মাঠে ময়দানে দেখা হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। ঢাকা থেকে বিমান যোগে আসা আমীরে জামায়তকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন যশোর জেলার আমীর অধ্যাপক গোলম রসুলের নেতৃত্বে একদল নেতাকর্মী। বিমান থেকে নেমে জামায়াতে ইসলামীর আমীর গাড়িতে উঠেন। তিনি বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে নেতাকর্মীদের অবিভাদন জানাতে জানাতে শহরের দিকে রওয়ানা হন। রাস্তায় তিনি প্রথম পথ সভায় বক্তব্য রাখেন স্বৈরাচার হাসিনার পতনের আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু যশোর, খুলনা সাতক্ষীরা ও ঝিনাইদহ এই চারটি জেলার সংযোগস্থল চাঁচড়া চেকপোস্ট মোড়ে। এই মোড়ে নতুন মুক্ত বাংলাদেশে বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলের মধ্যে কোন দলীয় প্রধান হিসেবে জামায়াতের আমীরের এটাই প্রথম আগমন।

জামায়াতের আমীর ড. শফিকুর রহমান বলেন,‘পতিত সরকারের আমলে সবচেয়ে মজলুম দল ছিলো জামায়াতে ইসলামী। বিপ্লবের পরেও আমরা উল্লাসে ফেটে পড়েনি। সবাই শান্ত থাকার নির্দেশ দিয়েছিলাম। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী নিদেশনা মেনে চলেছেন। দেশের কোন প্রান্তের কোন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আসেনি।

জামায়াতের আমির ড. শফিকুর রহমান বলেন, যারা আমাদের উপর যারা ফ্যাসিবাদের থাবা বিস্তার করেছিলেন। এক নাগাড়ে সাড়ে ১৫ বছর তান্ডব চালিয়েছিলেন। যারা মানুষকে খুন, গুম লষ্ঠন করেছিলেন, যারা মানুষের ইজ্জত লুষ্ঠুন করেছেন, যারা বাংলাদেশের সম্পদ লুষ্ঠুন করে বিদেশের মাঠিয়ে প্রসাদ তৈরি করেছেন ; তাদেরকে আমরা ক্ষমা করবো না। তাদের প্রত্যোকের অপরাধের বিচার করতে হবে। তবে দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী সবচেয়ে মজলুম দল। এই দলের শীর্ষ নেতাদের বিচারের নামে হত্যা করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছিল। পরে জামায়াত ও ইসলামী ছাত্র শিবিরকে দেশে থেকে নির্মূল করতে চেয়েছিলো। যারা আমাদেরকে নিষিদ্ধ করতে চেয়েছিলো; সৃষ্টিকর্তা কার্যত এই জমিতে তাদের নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। এতে আমাদের কোন কৃতিত্ব নেই। সমস্ত কৃতত্ব সৃষ্টিকর্তার। এই জন্য এই বিপ্লব, এই বিজয়ের পর আমরা কোন উল্লাস করেনি। আমরা দেশবাসী, সহকর্মীকে বিশেষভাবে অনুরাধ করেছিলাম, আপনারা সিষ্টিকর্তার জন্য সেজদাতে পড়ুন, চোখের পানি দিয়ে আল্লাহকে শুকরিয়া করুন। এই কারণে দেশের কোন প্রান্তে কোন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ উঠেনি।’ উপস্থিত ছিলেন, জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক গোলাম রসুল, সংগঠনের নেতা গোলাম কুদ্দুস, বেলাল হোসাইন, শাহাবুদ্দিন, শামসুজ্জামান, রেজাউল করিম প্রমুখ। বক্তব্য শেষে সম্প্রতি যশোর শহরের খোলাডাঙ্গা বাজারে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত জামায়াত কর্মী আমিনুর সজলের সন্তানকে বুকে টেনে নেন ডা. শফিকুর রহমান। এরপর দ্বিতীয় পথসভা করেন যশোর বেনাপোল মহাসড়কের ঝিকরগাছা বাজার এলাকায়। সব শেষ তিনি পথসভায় বক্তব্য ঝিকরগাছা সড়ক সেতুর মোড়ে পথসভায় বক্তব্য রাখেন। উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক হারুনার রশিদের সভাপতিত্বে পথ সভায় অন্যানের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর যশোর -২ (ঝিকরগাছা – চৌগাছা) সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা আরশাদুল আলম, সাবেক জামাতের সংসদ সদস্য মকবুল হোসাইন, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন, উপজেলা জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল আলীম সহ চৌগাছা এবং ঝিকরগাছার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষে তিনি রাখেন শার্শা উপজেলার নাভারণ মোড়ে। সভা শেষে রাতেই তিনি রওয়ানা দেন সাতক্ষীরার উদ্দেশ্যে।

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Exit mobile version