বাংলার ভোর ডেস্ক

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার ঝিকরগাছা মহিলা কলেজের দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ ৬ আগস্ট শিক্ষকদের প্রতিরোধের মুখে কলেজ ছেড়ে পালিয়েছেন। অধ্যক্ষের পক্ষে-বিপক্ষে দুটি রাজনৈতিক দল অবস্থান নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ঝিকরগাছার একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৭ বছরের শাসনামলে বেপরোয়া, লাগানহীন, স্বেচ্ছাচারিতা এবং দুর্নীতিতে একছত্র স্বৈরশাসক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন অধ্যক্ষ শাহিনুর কবির। তার বিরুদ্ধে এন্তার অভিযোগে উঠে এসেছে।

অধ্যক্ষ এই ১৭ বছরে ৩০ জনকে নিয়োগ দিয়ে ৪/৫ জন সভাপতির মাধ্যমে প্রায় দুই কোটি টাকা নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন। যার একটি টাকাও কলেজের ফান্ডে জমা হয়নি। কলেজের অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারীদেরকে শোকজ করাসহ নানা হয়রানির মাধ্যমে শিক্ষকদের কাছ থেকে অবৈধ অর্থ উপার্জন করেছেন। নৈমিত্তিক ছুটি নিতে গেলে সিগারেট ছাড়া ছুটি হয় না। জামাত-বিএনপি’র শিক্ষকরা নাশকতার মামলার আসামি হওয়ায় তারা জেলখানায় গেলে তাদেরকে সময় বরখাস্ত করা হয়েছে। সেই বরখাস্তাদেশ উঠাতে গেলে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে।

মামলায় কোর্টে হাজিরা দিতে বাধা দেয়া হয়েছে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে রাজাকার এবং তারেক জিয়াকে কুলাঙ্গার বলে গালি দিয়েছেন। জামায়াতের শিক্ষকদের ডেকে বলেছেন, তোমাদের গলায় জুতার মালা দিয়ে রাজাকার বলে থুতু দেয়া হবে। অবৈধভাবে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতাদেরকে রাজাকার বলে গালি দিয়েছেন। শিক্ষকেরা হজে গেলে হজে থাকাকালীন সময়ের বেতন ওই শিক্ষককে তুলতে দেয়া হয়নি।

দুই জন শিক্ষকের বাবা-মা মারা গেলে তাদেরকে সেদিন কলেজে আসতে হয়েছিল। গত ৩০ জুন ভুয়া রেজুলেশন এর মাধ্যমে দুই বছর চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। ১৫ জুলাই জেলা সিভিল সার্জনের নিকট মেডিকেল সার্টিফিকেটের আবেদন করা হয়েছিল। কলেজের অফিস সহায়ক থেকে শুরু করে উপাধ্যক্ষ পর্যন্ত কেউ তার অবৈধ লোভ লালসা এবং সম্মানহানির হাত থেকে বাদ যাননি।

দীর্ঘদিনের সেই ক্ষোভে ফুঁসে উঠা শিক্ষক কর্মচারীদের ভয়ে গত ৬ আগস্ট অধ্যক্ষ শাহিনুর কবির কলেজ থেকে পালিয়ে গেছেন।

২০১১ সালেও অধ্যক্ষ শাহিনুর কবির কলেজের ২১ লাখ টাকা আত্মসাতের দুর্নীতির দায়ে সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়ে জেল খেটেছেন। সেই সময় বিএনপি সাবেক সভাপতি মরহুম জালাল উদ্দিন আহমেদ ৩ লাখ টাকা দিয়ে অধ্যক্ষকে কলেজে প্রবেশের ব্যবস্থা করেন। অধ্যক্ষ শাহিনুর কবির সে টাকা অদ্যাবধি কলেজের ফান্ডে জমা দেননি। এ কারণে বিনা টাকায় আর তাকে কলেজে ঢুকতে দেয়া হবে না বলে শিক্ষকরা জানান। শিক্ষকরা আরো জানান, ৭ অক্টোবর অধ্যক্ষের অবসরের দিন। তিনি ওইদিন পর্যন্ত ছুটিতে থেকে অবসরে যাক। বর্তমানে তিনি মেডিকেল ছুটিতে আছেন।

ঝিকরগাছা মহিলা কলেজের এ অবস্থা জানতে পেরে কেন্দ্রীয় নেতার নির্দেশনায় ঝিকরগাছা বিএনপি নেতা ইমরান হাসান সামাদ নিপুন ২১ আগস্ট বুধবার শিক্ষকদের সাথে আলোচনায় বসেন। অধ্যক্ষ শাহিনুর কবিরের দুর্নীতির কথা শিক্ষকবৃন্দ তার কাছে তুলে ধরেন। তিনি ধৈর্য সহকারে নির্যাতিত শিক্ষকদের কথা শোনেন। নিপুন বলেন, আপনাদের এই অভিযোগের কথা আমার নেতাকে জানাবো।

২৫ আগস্ট রোববার ঝিকরগাছা উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক হারুন অর রশিদ এবং সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল আলিম মহিলা কলেজের শিক্ষকদের সাথে মতবিনিময় করেন। মতবিনিময় শেষে নির্যাতিত শিক্ষকদেরকে আশ্বস্ত করেন যে, দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ শাহিনুর কবিরকে অবৈধভাবে লুটপাট করা টাকাগুলো শিক্ষকদের ফেরত দিতে হবে। একই সাথে নিয়োগের টাকা কলেজ ফান্ডে জমা দিতে হবে। দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষের প্রতিরোধে আপনাদের সাথে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পাশে থাকবে।

ঝিকরগাছা মহিলা কলেজের অধিকাংশ শিক্ষকরা জানান, যদি কোন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষকে কলেজে প্রবেশ করানো হয়, তাহলে যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটে তার দায় দায়িত্ব সেই দলকেই বহন করতে হবে।

২২ আগস্ট বৃহস্পতিবার ঝিকরগাছা মহিলা কলেজ কেন্দ্রিক ৩ পৌর ওয়ার্ডের সর্বস্তরের মানুষ সভা করে অধ্যক্ষ শাহিনুর কবিরকে প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

অভিযোগ উঠেছে এই দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষকে কলেজে ফিরিয়ে আনতে বিএনপি নেতৃবৃন্দ উপাধ্যক্ষ সহ একাধিক শিক্ষকদেরকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করছেন। এ ব্যাপারে ঝিকরগাছা মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইলিয়াস উদ্দিন জানান, আমার উপর বিএনপি নেতাদের কোন চাপ নেই। তবে আমার নেতা অনিন্দ্য ইসলাম অমিত চাচার সাথে কথা হয়েছে।

ছুটিতে থাকা অধ্যক্ষ শাহিনুর কবির মুঠোফোনে বলেন, আমাকে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমি বর্তমানে ছুটিতে বাইরে আছি পরে আপনার সাথে কথা বলবো।

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Home
News
Notification
Search
Exit mobile version