নড়াইল সংবাদদাতা

ভৌগোলিক কারণে নড়াইল জেলার মাটি চুইঝাল চাষের জন্য বেশ উপযোগী। ধান, পাটসহ অন্যান্য ফসলের তুলনায় মসলাজাতীয় এ পণ্য চাষে পরিশ্রম একেবারেই কম। প্রয়োজন হয় না আলাদা জমির। বাড়ির আঙিনা কিংবা বাগানের যেকোনো গাছের সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে চাষ করা যায়। এ কারণে চুইঝাল আবাদ বাড়ছে কৃষিপ্রধান এ জেলায়। পাশাপাশি উৎপাদন হচ্ছে চারা। পণ্যটি চাষ করে তিনটি উপজেলার প্রায় সাত হাজার পরিবারে এসেছে সচ্ছলতা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চুইঝালের আবাদ হয় সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাটে। এর পরই রয়েছে নড়াইলের অবস্থান। জেলার তিনটি উপজেলায় চুইঝালের আবাদ হয়। তবে বেশি হয় কালিয়া উপজেলায়। তিনটি উপজেলায় ৭ হাজার ৪৩৭টি পরিবার চাষে সম্পৃক্ত। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১২ হেক্টর জমিতে চুইঝালের আবাদ হয়েছে। সেখান থেকে ৩০ টন উৎপাদন হয়। এর আগের অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছিল ২৫ টন। এক বছরে উৎপাদন বেড়েছে পাঁচ টন।

সদর উপজেলার রায়খালী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় ৮০ শতাংশ বাড়িতে আবাদ হয়েছে চুইঝালের। ওই গ্রামের কামরুল ইসলাম বলেন, ‘তিন বছর ধরে চুইঝাল আবাদ করেছি। চাষে তেমন কোনো কষ্ট হয় না, খরচও কম। প্রতি বছর ৩০-৪০ হাজার টাকার চুইঝাল বিক্রি হয়। আগামীতে চাষ আরো বাড়াব।’

সদর উপজেলার উজিরপুর গ্রামে সাড়ে তিন একর জমিতে চুই চাষ করেছে নাজমুল মোল্যা ও স্বর্ণা ইয়াসমিন দম্পতি। তাদের বাগানে থাকা আম, কাঁঠাল, লিচু, নারিকেল, সুপারিসহ প্রতিটি গাছের সঙ্গে রয়েছে চুই গাছ।

স্বর্ণা ইয়াসমিন বলেন, ‘২০২১ সালে চার-পাঁচটি গাছ রোপণ করেছিলাম। এখন প্রায় তিন হাজার চুই গাছ রয়েছে। চাষে তেমন কোনো খরচ নেই, আলাদা জমিরও প্রয়োজন হয় না, তাই এটা থেকে বেশি লাভ সম্ভব। আমাদের বাগানে আরো গাছ রয়েছে, আগামীতে সব গাছে চুই রোপণ করব।’

চাষীরা জানান, বেল, দো-আঁশ মাটিতে চুই চারা রোপণ করলে সবচেয়ে ভালো ফলন পাওয়া যায়। একটি গাছ থেকে কাটিং পদ্ধতিতে নতুন করে চারা উৎপাদন করা যায়। বারবার চারা কেনার প্রয়োজন হয় না। গাছ রোপণের পর জৈবসার ও পর্যাপ্ত পানি দিলেই হয়। বাড়তি তেমন যত্নের প্রয়োজন হয় না।

আগে চুই চারা নড়াইলের নার্সারিতে উৎপাদন হতো না। নার্সারি মালিকরা খুলনার ফুলতলা ও ডুমুরিয়া থেকে চারা কিনে এনে বিক্রি করতেন। তবে দিন দিন চাহিদা বাড়ায় দুই বছর ধরে নড়াইলে চারাও উৎপাদন হচ্ছে।

শহরের ভাদুলিডাঙ্গায় মা নার্সারি অ্যান্ড পলিনেট হাউজের স্বত্বাধিকারী রহিম সরদার বলেন, ‘নড়াইলে চুইঝালের চারার চাহিদা বাড়ছে। এক বছর আগে যে পরিমাণ চারা বিক্রি করেছি, এখন তার চার গুণ বেশি বিক্রি হচ্ছে।’

এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আশেক পারভেজ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বাজারে চুইঝালের চাহিদা রয়েছে। এ অঞ্চলের যে কয়টি জেলায় চুই চাষ হয়, এর মধ্যে নড়াইল অন্যতম। স্বল্প খরচ ও অল্প পরিশ্রমে অধিক লাভবান হওয়ায় কৃষক এটি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। আমরা কৃষকের সঙ্গে থেকে চুই চাষে আগ্রহ বাড়াচ্ছি। প্রতি বছর চাষের পরিধি বাড়ছে।’

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Home
News
Notification
Search
Exit mobile version