বাংলার ভোর প্রতিবেদক
দৈনিক বাংলার ভোর-এর স্বপ্নদ্রষ্টা স্বাধীন যশোরের প্রথম দৈনিক স্ফুলিঙ্গের যুগ্ম সম্পাদক ও দৈনিক ভোরের রানার পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক প্রথিতযশা সংবাদপত্র ব্যক্তিত্ব সৈয়দ নজমুল হোসেন-এর একাদশ মৃত্যুবার্ষিকী শনিবার ৯ নভেম্বর। ২০১৩ সালের এই দিনে বেলা ১টার দিকে তিনি নিজ বাসায় ৭২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি বাসায় একাই ছিলেন। এর আগের দিন তার ছোট ভাই খুলনার তেরখাদা ডিগ্রি কলেজের গণিত বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সৈয়দ নকী হোসেন মৃত্যুবরণ করায় তার দাফন কাজে অংশ নিতে সৈয়দ নজমুল হোসেনের স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে তার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ সদরের কালা লক্ষীপুরে অবস্থান করছিলেন। বেলা ১১ টার দিকে যখন তার ছোট ভাইয়ের দাফন চলছিলো গ্রামে ঠিক সে সময় তিনি যশোরের বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় চিকিৎসক ডা. শওকত আলী তাকে প্রাথমিক সেবা দেন। পরে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর মাত্র চব্বিশ ঘণ্টার ব্যবধানে তার মৃত্যু পরিবারটির জন্য অপরিমেয় শোকের হয়ে রয়েছে।

তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে পরিবারের পক্ষ থেকে তার রুহের মাগফেরাত কামনায় সকলের কাছে দোয়া কামনা করা হয়েছে। এছাড়া আগামী শুক্রবার পরিবারের পক্ষ থেকে যশোর, ঝিনাইদহ ও মাগুরার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় কোরআন খতম ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

সৈয়দ নজমুল হোসেন ১৯৪১ সালের ২৭ মার্চ তৎকালীন ঝিনাইদহ মহকুমার কালা লক্ষ্মীপুর গ্রামের বনেদী সৈয়দ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছয় ভাই বোনের মধ্যে চতুর্থ এবং ভাইদের মধ্যে তৃতীয়। খুব ছোট বেলায় মাত্র ৮ মাস বয়েস তিনি মাতৃহারা হন। পরবর্তীতে মাত্র সাড়ে চার বছর বয়সে হারান পিতাকে। এ অবস্থায় বড় বোন তাকে নিজ শ্বশুরালয় বর্তমান মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার পাঁচকাহুনিয়া গ্রামে নিয়ে আসেন। এখানে এসে তিনি ভর্তি হন স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পরবর্তীতে বাঘারপাড়ার নারিকেলবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে থেকে পাস করেন ম্যাট্রিকুলেশন। এরপর ফরিদপুর সরকারি কলেজ থেকে পাস করেন ইন্টারমিডিয়েট। ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেখান থেকে স্নাতক শেষ করে যোগ দেন তিতাস সার কারখানায়। পরে ওই চাকরি ছেড়ে দিয়ে যোগ দেন সরকারি মুদ্রণালয় বর্তমান বিজি প্রেসে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি শালিখায় ফিরে এসে স্থানীয় যুবকদের যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য সংগঠিত করেন। এবং বড় দুলাভাইয়ের লাইসেন্স করা অস্ত্র নিয়ে মাগুরার শালিখা উপজেলার পাঁচকাহুনিয়া ও হরিশপুর গ্রামে সংগ্রামী বাহিনী গড়ে তোলেন। দেশ স্বাধীন হলে আবারো ফিরে যান ঢাকায়। সেখানে নিজ ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু ৭৫-এর পট পরিবর্তনের পর বাড়ি-দোকান সব হারিয়ে নিঃস্ব অবস্থায় তিনি চলে আসেন যশোরে। এ সময় আর্থিক সংকটে তার পথচলায় প্রদর্শক হিসেবে পাশে দাঁড়ান রণাঙ্গণের সাথী যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ সালাম। তিনি তার প্রকাশিত সাপ্তাহিক মাতৃভূমি পত্রিকায় কাজ দেন সৈয়দ নজমুল হোসেনকে। সেই থেকে তিনি দীর্ঘ ৩০ বছরের বেশি সময় যশোর থেকে প্রকাশিত নতুন দেশ এবং যশোরের প্রথম দৈনিক ‘দৈনিক স্ফুলিঙ্গ, দৈনিক ঠিকানা, দৈনিক কল্যাণ, বর্তমান দৈনিক, দৈনিক ভোরের রানার-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও সর্বশেষ দৈনিক লোকসমাজ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

উল্লেখ্য, সৈয়দ নজমুল হোসেনের একমাত্র পুত্র সৈয়দ আবুল কালাম শামছুদ্দীন জ্যোতির সম্পাদনা ও প্রকাশনায় যশোর থেকে প্রকাশিত হচ্ছে নিপীড়িত মানুষের পক্ষের দৈনিক ‘বাংলার ভোর’।

Share.
Leave A Reply

Home
News
Notification
Search
Exit mobile version