স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ

যশোর শহরের খড়কি এলাকার বাসিন্দা খন্দকার জাহাঙ্গীর (৬৯) দামের কারণে গত ছয় মাস তিনি গরুর মাংস কিনতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘স্ত্রী মারা গেছে, দুই মেয়ে বিয়ে দিয়েছি। ছেলের সংসারে থাকি। ছেলে দিনমজুরি করে। ছয় মাস আগে ছেলেডা হাফকেজি গরুর গোস্ত কিনিলো। তাই দুই তিন পিস খাইলাম। আইজকে আইডিয়া অর্ধেক দামে গরুর গোস্ত দিলো। ঈদির দিন ছেলে, বিটারবউ আর নাতিছেলেডারে নিয়ে খাতি পারবো।’ আইডিয়ার এই উদ্যোগে তিনি দারুণ খুশি।

পবিত্র রমজান উপলক্ষে যশোরে আইডিয়া সমাজ কল্যাণ সংস্থার উদ্যোগে শনিবার দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের পাঁচশ’ পরিবারের মাঝে প্রায় অর্ধেক দামে গরুর মাংস বিক্রি করা হয়। ৭৫০ টাকা কেজি দামের গরুর মাংস ৩৯০ টাকায় কিনতে পেরে খুশি সমাজের প্রান্তিক শ্রেণির এই মানুষগুলো। শহরের খড়কি এলাকার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থার উদ্যোগে নিজস্ব আঙিনায় ‘মধ্যবিত্তের ঈদবাজার’ শিরোনামে এই গরুর মাংস বিক্রয় করা হয়। ঈদের আগে ‘মধ্যবিত্তের ঈদবাজার’ নাম দিয়ে এভাবে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে সংগঠনটি।

খড়কি কবরস্থান থেকে আসা রিকসা চালক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমরা যারা খেটেখুটে বাজার করে খেতে চাই, তাদের বাজারে যেয়ে গরুর মাংস কেনার ক্ষমতা নেই। এখানে সাড়ে ৭শ’ টাকার গরুর মাংস ৩৯০ টাকায় কিনলাম। এর চেয়ে আর কম আছে নাকি।’

আমেনা খাতুন নামে আরেক নারী জানান, ‘মেসে বাসাবাড়িতে কাজ করি। স্বামী দিনমজুর। মনে করেছিলাম এবার ঈদে মাংস খেতে পারবো না। কিন্তু আইডিয়া আমাদের সেই টেনশন কাটিয়ে দিয়েছে। এককেজি মাংস নিয়েছি; ঈদের দিন স্বামী সন্তান নিয়ে রান্না করে খাবো।’

শুধু জাহাঙ্গীর, আলমগীর বা আমেনাই নন; এমন পাঁচশ মানুষ এদিন আইডিয়া থেকে ৩৯০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস ক্রয় করেছেন।

আয়োজকরা জানান, সরকার যাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর দাম সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণির আওতার মধ্যে নিয়ে আসে, এ জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছে সংগঠনটি। সব মিলিয়ে এই প্রজেক্টে দুই লক্ষাধিক টাকা ভর্তুকি দিয়েছে সংগঠনটি।

আইডিয়া লস প্রজেক্টের সমন্বয়ক হারুণ অর রশিদ বলেন, ‘আইডিয়া শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত সমাজকল্যাণমূলক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। এই প্রজেক্টের আওতায় শিক্ষার্থীরা ‘লস’ করার উদ্দেশ্যেই নিত্যপণ্যের ব্যবসা করেছেন। অর্থাৎ তারা বেশি দামে জিনিস কিনে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের মধ্যে কম দামে বিক্রি করেছেন।

উচ্চমূল্যের বাজারে গরুর মাংসের কেজি যখন ৭৫০ টাকা ছাড়িয়েছে তখন মাত্র ৩৯০ টাকায় মাংস কিনতে পেরেছেন বাজার করতে আসা নিম্ন আয়ের মানুষগুলো।’

সমাজে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে ও ঈদের খুশি সবার খাবার টেবিলে পৌঁছে দিতে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান উপদেষ্টা যশোর সরকারি এম এম কলেজের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক শাহীন।

তিনি বলেন, ‘বর্তমান বাজারে সমাজের উচ্চবিত্তদের সাধ্যের মধ্যে সব পণ্য পাওয়া গেলেও মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষ রয়েছেন বিপদে। তারা না পারছেন দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে, না পারছেন মানুষের কাছে হাত পাততে। চক্ষুলজ্জায় তাদের কান্নাও লুকিয়ে রাখতে হয়। তাই নিম্ন ও মধ্যবিত্তের মানুষকে একটু স্বস্তি দিতে এ আয়োজন।’

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে যশোরের বিভিন্ন কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই সংগঠনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা প্রতি শুক্রবার অসহায় দরিদ্র শ্রমজীবী ভবঘুরেদের মাঝে খাবার বিতরণ করে আসছে।

ঈদে সুবিধাবঞ্চিত শিশুর মধ্যে খাবার ও পোশাক বিতরণ এবং প্রতি রমজান মাসজুড়ে তারা রোজাদারদের মাঝে শীতল পানি সরবরাহ, মসজিদে ওজুখানা বানিয়ে দেওয়াসহ নানারকম সমাজসেবামূলক কাজ যাচ্ছে সংগঠনটি।

করোনা ও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের বিনামূল্য স্যালাইন অক্সিজেন সরবরাহ করে আসছে এই সংগঠন। এছাড়া সংগঠনটি শিক্ষার্থীদের দিয়ে তৈরি আইডিয়া পিঠা পার্কের পণ্য এখন দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও যাচ্ছে।

Share.
Exit mobile version