মাগুরা সংবাদদাতা

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার হয়ে মারা যাওয়া আট বছরের শিশুটি ঘুমিয়ে আছে কবরে। যে আঙ্গিনায় সে একদিন সে ছুটে বেড়াতো; কথার ফুলঝুরিতে বাড়ি মাতিয়ে রাখতো, সেখানে এখন কেবলই শূন্যতা। শোকের মাতমে ভারি হয়ে উঠেছে বাড়ির চারপাশ।

ধর্ষণের শিকার হয়ে মৃত্যুর পর মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার জারিয়া গ্রামের পরিবারটিতে হাহাকার চলছে। মায়ের বুকফাটা আর্তনাদ যেনো করবের নিরবতাও ভাঙচ্ছে। ছোট শিশুটিকে যে নিদারুণ কষ্ট নিয়ে পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে, তাতে মর্মমাহত পুরো গ্রামবাসী।

শুক্রবার শিশুটর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তার মা বুক চাপড়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। আশেপাশের কোনো সান্ত্বনাই তাকে শান্ত করতে পারছে না। অনবরত জল গড়িয়ে পড়ছে চোখ থেকে।

আাহাজারি করে তিনি কেবলই ধর্ষকদের ফাঁসির দাবি জানাচ্ছেন। আর মেয়েটির প্রতিবন্ধী বাবা নির্বাক বসে আছেন। পরিবারে অন্য সদস্যরাও কান্নাকাটি করছেন।

স্থানীয় সব্দালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পান্না খাতুন বলেন, তিনি পরিবারটির পাশে আছেন। তাদের সব ধরনের সহায়তা দেবেন।

এদিকে, শুক্রবার সকালে শিশুটির বাড়িতে যান জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস। এ সময় তার সঙ্গে মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য নেওয়াজ হালিমা আরলী ছিলেন। বিএনপির পক্ষ থেকে শিশুটির পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন আফরোজা। সেই সঙ্গে ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন তিনি।

পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আফরোজা আব্বাস। তিনি বলেন, এমন ঘটনা সারা দেশকে নাড়া দিয়েছে। শুরু থেকেই আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এই পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছেন। শিশুটির ন্যায় বিচারের পক্ষে মাঠে নেমেছি আমরা। আমরা চাই, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা না ঘটে। সেই সঙ্গে পরিবারটিকে সহযোগিতা আশ্বাস দিয়েছি। আমাদের দল শিশুটির পরিবারের পাশে আছে।

পরে শিশুটির বাড়িতে যান মাগুরা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মনোয়ার হোসেন খান। সেখানে তিনি শিশুটির মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। শিশুটির মা বলেন, কয়েক মাস আগে তার স্বামী মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্বামীর অসুস্থতার পর থেকে পরিবারে বিপর্যয় নেমে আসে। বিএনপি নেতাদের কাছে স্বামীর সুচিকিৎসার জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
এ সময় শিশুটির বাবার চিকিৎসায় সহযোগিতার করার আশ্বাস দেন বিএনপি নেতা মনোয়ার হোসেন।

তিনি বলেন, ব্যক্তিগত সহযোগিতা ছাড়াও দলগতভাবে তাদের সহযোগিতা করব আমরা। শিগগিরই শিশুটির বাবার চিকিৎসা করাতে ঢাকায় পাঠানো হবে।

মাগুরা শহরতলীর নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ৬ মার্চ শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয় বলে অভিযোগ করে তার পরিবার। সেই খবরে সারা দেশে তৈরি হয় ক্ষোভ। এ ঘটনায় শিশুটির মা গত ৮ মার্চ মাগুরা সদর থানায় চারজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলা করেন।

মামলার আসামিরা হলেন- শিশুটির ভগ্নিপতি সজীব হোসেন (১৮) ও বোনের শ্বশুর হিটু মিয়া (৪২), সজীবের অপ্রাপ্তবয়স্ক ভাই (১৭) এবং তাদের মা জাবেদা বেগম (৪০)। তাদের চারজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

নির্যাতনের শিকার শিশুটিকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে নেওয়া হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য ৬ মার্চই তাকে ঢাকা মেডিকেলের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিআইসিইউ) ভর্তি করা হয়। পরে ৭ মার্চ রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। ৮ মার্চ শিশুটিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে অবশেষে বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়। সন্ধ্যায় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে তাকে মাগুরা নেওয়া হয়। এরপর শহরের নোমানী ময়দানে তার প্রথম জানাজা ও পরে শ্রীপুর উপজেলার শব্দালপুর ইউনিয়নের জারিয়া গ্রামে তার দ্বিতীয় জানাজা শেষে স্থানীয় সোনাইকুন্ডি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। যার বাড়িতে গিয়ে মেয়েটি ধর্ষণের শিকার হয়েছিল, সেই বোনও ধর্ষকদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন।

মাগুরা সদর থানার ওসি আইয়ুব আলী বলেন, মেয়েটির মৃত্যুর ঘটনায় তার মা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। আসামিদের মধ্যে হিটু শেখকে ৭ দিন ও অন্যদের ৫ দিনের রিমান্ড দিয়েছে আদালত। তাদের জ্ঞিাসাবাদ চলছে।

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Home
News
Notification
Search
Exit mobile version