স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ,
যশোর রেলওয়ে স্টেশনের সামনে ফলের ডালি সাজিয়ে বসেছেন আছিরোন নেছা নামে এক মধ্যবয়স্ক মহিলা। তিনি ফলের ডালি থেকে মাঝে মাঝে মাছি তাড়াচ্ছেন। অপেক্ষা করছেন ক্রেতার জন্য। দশ দিন ধরে প্লাটফর্ম বন্ধ। তাই স্বাভাবিক ভাবে লোকজনের পদচারণা কম। এতে করে স্টেশন এলাকার আছিরোন নেছার মত ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে। আছিরোন নেছার সাথে বাংলার ভোরের এই প্রতিবেদকের কথা হলে তিনি কান্না ভেজা কন্ঠে বলেন, আহারে সোনারে আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ। করোনার সময়ও বেঁচা বিক্রি হয়েছে। আজ ১০ দিন ধরে ক্রেতার জন্য অপেক্ষা করছি। ফল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমাদের অনেক টাকা লস হয়ে যাচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বিক্রি হত। এখন সারাদিনে ২ হাজার টাকা বিক্রি করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

যশোর রেলওয়ে স্টেশনের ভিতরে ভ্রাম্যমাণ ঝাল মুড়ির ব্যবসা করেন শহরের বকচর এলাকার সাগর হোসেন। এই ব্যবসায় চলে তার ৪ জনের সংসার। বেশ কয়েকদিন স্টেশনে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকাতে তার জমানো টাকা সংসারে ব্যয় হয়ে গেছে। স্বাভাবিক সময়ে দিনে ১২ থেকে ১৫ শ’ টাকা আয় হলেও এখন ২ থেকে ৩ শ’ টাকা আয় করা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।
সাগর হোসেন বলেন, তিনি হার্টের রোগী। নিজের জন্য ওষুধ কিনতে হয় দিনে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। এখন যে আয় হচ্ছে তাতে সংসার চালানো নিজের ওষুধ কেনা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। রাত ৮ টা পর্যন্ত স্টেশনে ঝাল মুড়ি বিক্রি করেন। যাত্রী না থাকলেও স্থানীয় লোকজন থাকাতে তারাই আপাতত নিয়মিত ক্রেতা তার।

স্টেশনের ভিতরে ভাই ভাই স্টোর নামে একটি চায়ের দোকান চালান ইখলাস হাসান নামের এক যুবক। তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা কেনা বেঁচা হলেও এখন ৫ থেকে ৬ শ’ টাকা আয় হচ্ছে না। দোকান খুলে রাখতে হয় এক প্রকার পাহারাদারের মত। স্থানীয় লোকজন ছাড়া অন্য কেউ আসে না।

তার আয় কমলেও সংসারের ১৫ জন সদস্য এই একটি চায়ের দোকানের আয়ের উপর নির্ভরশীল। একই অবস্থা ওয়ান ফাস্টফুড দোকানের মালিক মো. মোস্তাকিমের। তার সংসারের ৪ জন সদস্য দোকানের আয়ের উপর নির্ভর। স্বাভাবিক সময়ে আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকা আয় হলেও এখন মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

মো. মোস্তাকিম বলেন, যা আয় হচ্ছে তা নিজের পিছনে ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। ট্রেন চলাচল না করাতে লোকজনের চলাচল কমেছে। কারফিউয়ের প্রথম দিন দোকান বন্ধ রাখতে হলেও এখন স্বাভাবিক নিয়মে দোকান খোলা রাখা যাচ্ছে। তবে বেঁচা কেনার অবস্থা খুবই খারাপ।

স্টেশন এলাকায় এমন ৫ থেকে ৭ টি স্থায়ী দোকান রয়েছে। অস্থায়ী দোকান রয়েছে ১৫ থেকে ২০ টি। এছাড়া স্টেশনের সামনে প্রায় অর্ধশতাধিক ছোট বড় দোকান রয়েছে। ট্রেন না চলাতে এই সব দোকানের বিক্রি কমেছে। অনেক অস্থায়ী দোকান বন্ধও রয়েছে।

যশোর রেলওয়ের সহকারী স্টেশন মাস্টার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, কোটা আন্দোলনের জের ধরে সাগরদাঁড়ী এক্সপ্রেস (আপ) ভাংচুরের পর থেকে যশোরে ট্রেন চলাচল বন্ধ। ১৯ জুলাই রাত ১১ টার দিকে সর্বশেষ রকেট নামের লোকাল ট্রেনটি প্লাটফর্ম ছেড়ে যায়। এর পর থেকে আর কোনো যাত্রীবাহী ট্রেন আসেনি। যশোর স্টেশন ছেড়ে লোকাল ও অন্তঃনগর মিলে মোট ১১ টি ট্রেন আসা যাওয়া করে। এর মধ্যে কপোতাক্ষ, রুপসা, চিত্রা, বেনাপোল, সাগরদাঁড়ি, সীমান্ত ও সুন্দরবনসহ ৭ টি ট্রেন আন্তঃনগর এক্সপ্রেস। রকেট , মহানন্দা ও নকশিকাঁথা লোকাল ট্রেন।

স্টেশন মাস্টার মো. আয়নাল হাসান বলেন, আপাতত দিনে ১ টা ২ টা করে মালবাহী ট্রেন চলছে। রেলওয়ে স্টেশনের সাথে জড়িত সকল কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়মিত অফিস করছে। শুধু সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস ছাড়া অন্য কোনো ট্রেন বা স্থাপনার ক্ষতি হয়নি। রেলওয়ে পুলিশ আরএমবি সবাই নিয়মিত ডিউটি করছে। নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি নেয়। উপরের নির্দেশনা না পেলে টিকিট বিক্রি শুরু করা যাচ্ছে না। কবে নাগাদ ট্রেন চালু হবে তেমন কোনো নির্দেশনা এখনও পাওয়া যায়নি। সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত, যাত্রী সেবার জন্য তারা প্রস্তুত।

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Home
News
Notification
Search
Exit mobile version