বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের চৌগাছা পশুহাটের ইাজারা নিয়ে চরম সংকটে পড়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। ইজারাদার দুই পক্ষ আদালতের স্মরণাপন্ন হওয়ায় ইজারা শূণ্যতা দেখা দিয়েছে। ইজারাদার দুই পক্ষের রশি টানাটানিতে অনিশ্চয়তায় পড়েছে হাটের স্বাভাবিক কার্যক্রম। ফলে হাট সচল রাখতে খাস কালেকশনে নেমেছে পৌর কর্তৃপক্ষ। একদিকে আদালতের রায়ে ইজারা স্থগিত, অন্যদিকে খাস কালেকশন নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠায় উভয় সংকটে পড়েছে পৌরসভা। কর্তৃপক্ষ বলছে, হাট টিকিয়ে রাখতে, বাধ্য হয়ে তারা খাস কালেকশন করছে।

পৌরসভার তথ্য মতে, ৭ বছর ধরে চৌগাছা পশু হাটটি ইজারা নিয়ে পরিচালনা করছিলেন আবিদুর রহমান লালু নামে এক ব্যক্তি। ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর নিযুক্ত পৌর প্রশাসক ১৪৩২ সালের জন্য বিভিন্ন হাট-বাজার খাজনা আদায়ের দরপত্র গ্রহণের প্রস্তুতি নেন। এ সময় ইজারাদার আবিদুর রহমান লালু করোনার ক্ষতির কথা উল্লেখ করে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে হাটটি পুনরায় ইজারা নেয়ার জন্য হাইকোর্টে মামলা করেন।

হাইকোর্টের রুলের প্রেক্ষিতে পৌর কর্তৃপক্ষ হাটের সর্বোচ্চ মূল্যের ১০শতাংশ বৃদ্ধি করে ৭৭ লাখ ৬৪ হাজার টাকায় তাকে পুনরায় ইজারা দেয়। কিন্তু স্থানীয় তিন ব্যক্তি আরো বেশি মূল্য দিতে ইচ্ছাপোষণ করে পৌরসভায় আবেদন করেন। কিন্তু কোন সাড়া না পেয়ে তারাও হাইকোর্টের চেম্বার জজের স্মরণাপন্ন হন। আদালত হাইকোর্টের পূর্বের আদেশ স্থগিত করে রুলটি নিষ্পত্তির জন্য আদেশ দেন। এতে ইজারাদার শূণ্যতা সৃষ্টি হয়।

এ অবস্থায় দুই পক্ষের ঠেলাঠেলিতে ক্ষতির মুখে পড়ে পৌর কর্তৃপক্ষ ও পশু ক্রয়-বিক্রয়কারী ব্যবসায়ীরা। অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে হাটের স্বাভাবিক কার্যক্রমও। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে খাস খাজনা আদায়ের মাধ্যমে হাট টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে পৌর কর্তৃপক্ষ। হাইকোর্ট থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না পেলে তারা কোন পদক্ষেপ নিতে পারছেন না।

চৌগাছা পৌরসভার হাট পরিদর্শক মুকুরুল ইসলাম মিন্টু বলেন, চৌগাছা পশু হাট এই অঞ্চলের সর্ববৃহৎ হাট। এই হাট ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে ষড়যন্ত্র চলছে। আগে ঝিনাইদহ জেলার লোক মামলা করেছিল, এখন চৌগাছার কিছু লোক ষড়যন্ত্র করে মামলা করছে। আমরা চাই চৌগাছার হাট থাক, এখানে অসংখ্য মানুষের রুটিরুজি হয়। কিন্তু হাটটা ধ্বংস করতে পাঁয়তারা চলছে। এই হাটটা যাতে থাকে সকল অচলাবস্থা দূর হয় তার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আর্কষণ করছি।

সালাহউদ্দিন আলী নামে এক সাধারণ পশু বিক্রয়কারীরা বলেন, চৌগাছা উপজেলায় একটি মাত্র পশুর হাট। এ হাটটি বন্ধ করার জন্য বেশ কিছু লোক দীর্ঘদিন ধরে ষড়যন্ত্র করে আসছে। এবার ইজারা নেয়ার নামে হাইকোর্টে মামলা করে হাটের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছেন। এতে আমাদের মতো প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আমরা চাই হাটটি চালু থাকুক।

আকবর আলী নামে অপর এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘এ হাটে বেচাকেনা করে খুব সুবিধা। দূর-দূরান্তের ব্যবসায়ীরা আসেন। প্রতি হাটে হাজার হাজার গরু, ছাগল বেচাকেনা হয়। কিন্তু এ হাটে দুষ্টু চক্রের দৃষ্টি পড়েছে। তারা নানা পন্থায় হাটটি বন্ধ করার পাঁয়তারা করছেন। আমরা চাই জটিলতা নিরসন করে হাটটি চালু রাখা হোক।’

তবে হাটের ইজাদার আবিদুর রহমান লালু বলছেন, আইন মেনে আদালতে দ্বারস্থ হয়েছি। দ্রুতই আদালত হাটটির বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

আরেক রিটকারী ইজাদার আতিকুর রহমান লেন্টুর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।’ চৌগাছা পৌর প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিম জাহান জানিয়েছেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে খাজনা খাস কালেকশনের মাধ্যমে হাট টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। পৌর কর্মচারীর পাশাপাশি হাটের আগের ৫০জন কর্মীকে দিয়ে খাজনা আদায় চলছে। হাইকোর্ট থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না পেলে তারা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছেন না।

Share.
Exit mobile version