এসএকে শামছুদ্দীন জ্যোতি
‘ছেলে আমার বড় হবে, মাকে বলতো সে কথা’ গানটির মত করে ছেলে হিসেবে আজ আমি বড় হয়েছি ঠিকই কিন্তু বাবা তোমাকে যে হারিয়েছি। আজ ১২ টা বছর তুমি নেই মাঝে। কাজ শেষে গভীর রাতে ঘরে ফিরে তোমার মুখ দেখে, তোমার নিঃশ্বাস শুনে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে যাওয়ার সেই দিনগুলিও যে আজ হারিয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে বাবা বলে সকল ভয়-ভাবনা দূর করে পথ চলার সাহসও। কিন্তু আজ যে আমার জীবনের পথ বড় বন্ধুর। বাবা ও বাবা কেমন আছো তুমি দূর আকাশের ওই নক্ষত্র মাঝে। জীবদ্দশায় ত কিছুই করতে পারিনি তোমার জন্য কিন্তু আজ যে তোমার দেখা স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমি পথ চলছি তুমি দেখতে পাচ্ছো ত বাবা। ভালো আছো ত তুমি বাবা।

চশমাটা তেমনি আছে, আছে লাঠি ও পাঞ্জাবি তোমার, শুধু তুমি নেই। কতদিন কত রাত দেখিনা তোমায়। কেমন আছো বাবা তুমি তোমার বুকের মানিককে ছেড়ে-

যেদিন তুমি অসুস্থ হলে সেদিন আমায় শুধু বলেছিলে আমি কোনদিন দেনা হয়নি তুমিও হয়োনা। খেতে দিতে পারো আর না পারো কেউ যেন এসে না বলে টাকা পাবো। বাবা শুধু এটুকু দায়িত্ব থেকে আজ কত কত বড় দায়িত্ব আমার কাঁধে চাপিয়ে তুমি চলে গেলে। তুমি যখন চলে গেলে তোমার জিশান তখন স্কুলেও ভর্তি হয়নি। আর এবার সে এসএসসি পরীক্ষা দেবে। সেও সায়েন্স নিয়ে পড়ছে। হয়ত আমায় নিয়ে তুমি যে স্বপ্ন দেখেছিলে তা সে পূরণ করবে। তোমার তাহমিদ সে ত আরো বড় হবে। স্কুলের সেরাদের মধ্যে সে একজন। দোয়া করো বাবা ওই দূর আকাশ থেকে।

কিন্তু বাবা আমি যে নিঃস্ব। আমার আজ সব থেকেও যে কিছু নেই। নেই বাবা বলে ডাকার সেই তুমি। নিশ্চিন্তে সকল কিছুতে ঝাঁপিয়ে পড়ার অবলম্বন সেই তুমি। একটু বিপদ হলেই ভয় লাগে একা কি করব। কেননা আমার যে বড় বটবৃক্ষ তুমি নেই পাশে। যদিও আমি জানি তুমি দেখছ বাবা ওই দূর আকাশ থেকে। আর আমাকে তোমার ভালোবাসার সবটুকু ঢেলে দিচ্ছ অবিরামভাবে। তাইত আমি বারবার বিপদে পড়েও ঠিকই উঠে দাঁড়াতে পারছি জীবনযুদ্ধের ময়দানে। কিন্তু কেন তুমি চলে গেলে বাবা ? আরো অনেকের বাবাই ত ঘুরে বেড়ায় আমার সামনে দিয়ে, শুধু তুমি নাই। তবু দোয়া করি মহান রব তোমাকে অবশ্যই ভালো রাখবেন। ঠিক যেভাবে তুমি আমায় ভালো রেখেছিলে।

কি করে ভুলি বাবা সেই দিনটির কথা। অসুস্থ তুমি কষ্ট পাবে তোমার অসুস্থতা আরো বেড়ে যাবে এই ভয়ে প্রায় সবকিছুই যেতাম তোমার কাছে লুকিয়ে। তাইত তোমার ছোট ভাইটাকে যখন শেষ বিদায় জানাতে আমি বাড়ি থেকে বের হই তুমি জানতে চাইলেও বলতে পারিনি। কিন্তু তুমি হয়তো ঠিকই বুঝেছিলে। তাইত আমাকে একা করে রেখে তুমি চলে গেলে ছোট ভাইয়ের সাথে ওই দূর দেশে যেখান থেকে কেউ আর ফির আসে না। কিন্তু দিয়ে গেলে তোমার সবটুকু আশির্বাদ আমায় ঢেলে। তাই ত যে কথা তুমি বলতে মাকে ‘ছেলে আমার বড় হবে; হবে মানুষের মত মানুষ এক’। সেই বড় হওয়ার পথে আমি যে আজ তোমায় ছাড়া বাবা। আজ তোমার জিশান বড় হয়েছে তোমার তাহমিদও বড় হয়েছে। এখন ওদের সময় হয়না পড়া বাদে অন্যকিছু নিয়ে ভাবার। কিন্তু বাবা আমার যে সবকিছুর মাঝে শুধু তোমার ভাবনা জড়িয়ে থাকে। তাই ত প্রতি শুক্রবারে তোমার থাকার ওই ছোট মাটির ঘরটা দেখতে আমি ছুটে যাই জুম্মার নামাজ আদায় করেই। জানতে চাই তুমি কেমন আছো বাবা। কিন্তু তুমি ত কিছু বল না। নিরাশ হয়ে আমি ফিরে আসি এই বিশ্বাসে সর্বশ্রষ্টা আল্লাহ অবশ্যই তোমাকে ভালো রাখবেন কেননা তুমি ত কোনদিন কারো খারাপ করোনি।

আজ ১২ টা বছর পূর্ণ হলো বাবা তুমি নেই আমার সাথে। তুমি যে দায়িত্ব আমায় দিয়ে গেছ তার কিছুই আমি করতে পারিনি পালন। শুধু তোমার দোয়ার বরকতে আল্লাহর অশেষ রহমতে দিনগুলো কেটে গেছে তোমার রেখে যাওয়া ছোট্ট পরিবারটার সহি সালামতে। মা আজ অসুস্থ তবুও অনেকটাই শান্তিতে থাকে শুধু আর্থিক অনটনটুকু ছাড়া। তোমার জিশান-তাহমিদ আজ তাদের দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত। আর আমি তোমার দেয়া দায়িত্ব হিসেবে ওদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য চেষ্টা আর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা ছাড়া কিছুই করতে পারিনা। বাবা তুমি দেখছো ত ওই দূর নক্ষত্র মাঝ থেকে। সেখান থেকেই দোয়া দিয়ো বাবা আমি যেন আমার চেষ্টাটা ঠিকমত করতে পারি। জীবদ্দশায় তোমার না পূরণ হওয়া স্বপ্নগুলো যেন আমি পূরণ করার শতভাগ চেষ্টা করতে পারি।

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Home
News
Notification
Search
Exit mobile version