জীবননগর সংবাদদাতা
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে জীবননগর উপজেলার মাধবখালী সীমান্তে নিহত বাংলাদেশী যুবক শহিদুল ইসলামের লাশ ৮ দিন পর ফেরত দিলো বিএসএফ। শনিবার বিকেল ৪ টার সময় জীবননগর উপজেলার চ্যাংখালী সীমান্তের শূন্য রেখায় উভয় দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে পাতাকা বৈঠকের পর শহিদুল ইসলামের লাশ বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে বিএসএফ। পরে বিজিবি সদস্যরা শহিদুল ইসলামের স্বজনদের কাছে তার লাশ বুঝিয়ে দেন। এ সময় উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা ছাড়াও দু’ দেশের পুলিশ এবং শহিদুল ইসলামের স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে ৩০ নভেম্বর একই সীমান্তে পতাকা বৈঠকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে বিএসএফের কাছে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয় এবং শহিদুল ইসলামের লাশ দ্রুত ফেরত দেয়ার দাবি জানানো হয়।
প্রসঙ্গত : জীবননগর উপজেলার মাধপখালী সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে দু’সন্তানের জনক শহিদুল ইসলাম (৩৭) নামে এক বাংলাদেশি মাদককারবারী নিহত হন গত ২৯ নভেম্বর। ওই দিন বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে একদল মাদককারবারী ভারতের অভ্যন্তরে মাদক আনতে যাওয়ার সময় এ গুলির ঘটনা ঘটে। শহিদুল ইসলামের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় বিএসএফের গুলিতে তিনি নিহত হয়েছেন।
শহিদুল ইসলাম জীবননগর উপজেলার গয়েশপুর গ্রামের উত্তরপাড়ার নস্কর আলীর ছেলে।
শহিদুল ইসলামের স্ত্রী নাসরিন আক্তার জানান, শনিবার বিকেলে মাধবখালী সীমান্তের দোয়ালের মাঠে শহিদুল ইসলাম গরুর জন্য ঘাস কাটতে গিয়েছিলো। এ সময় বিএসএফ সদস্যরা শহিদুল ইসলামকে ধরে খুব কাছ থেকে গুলি করে। এতে শহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে নিহত হন বলে ভারতে তার পরিচিতজনরা বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এদিকে ভারতের পশ্চিম বঙ্গের নদীয়া জেলার বিএসএফের ৩২ ব্যাটালিয়নের কমান্ডেন্ট সুজিত কুমারের বরাত দিয়ে বিজিবির মহেশপুর-৫৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল রফিকুল আলম জানান, প্রথমে বিএসএফের পক্ষ থেকে শহিদুল ইসলাম আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ওই দিন রাত ৮ টার সময় বিএসএফের পক্ষ থেকে বিজিবিকে জানানো হয় শহিদুল ইসলাম নিহত হয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের গয়েশপুর গ্রামের উত্তরপাড়ার নস্কর আলীর ছেলে শহিদুল ইসলামসহ ৬-৭ জন শনিবার বিকেলে ভারতে মাদক আনতে যায়। তারা মাধবখালী সীমান্তের ৭০ নম্বর মেইন পিলার হতে ২০০ গজ ভারতের অভ্যন্তরে পৌছালে ভারতের মাটিয়ারী ক্যাম্পের টহলরত বিএসএফ সদস্যদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন।
শহিদুল ইসলাম এ সময় তার হাতে থাকা হাসুয়া দিয়ে বিএসএফের উপর চড়াও হয়। একপর্যায়ে বিএসএফ সদস্যরা এক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। বিএসএফের ছোড়া গুলিতে শহিদুল ইসলাম আহত হলে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। শহিদুল ইসলামের মৃতদেহ ওই রাতে কৃষ্ণগঞ্জ থানা হেফাজতে রাখা হয়। পরের দিন রোববার দুপুরে কৃষ্ণনগর জেলা হাসপাতালে শহিদুল ইসলামের মৃতদেহ ময়না তদন্ত করা হয় এবং ওই হাসপাতালের হিমঘরে লাশ রেখে দেয়া হয়।
