বেনাপোল সংবাদদাতা
রিকশাওয়ালার মেয়ে বিসিএস ক্যাডার, সবজি বিক্রেতার মেয়ে আইপিএস অফিসার। দিনমজুরের ছেলে বিসিএস ক্যাডার। এসব খবর আমরা মাঝে মাঝে শুনি। কিন্ত চমকে যাইনা। প্রশংসাও করি না। বাহবা দেই না। উপরন্তু বলি এ নিয়ে গর্ব করার কিছু নেই। আছে তো নিশ্চয়ই। একজন দিনমজুরের ছেলে বা রিকশা চালকের মেয়ে কত কষ্ট করে, চড়াই উৎরাই পেরিয়ে, কত সংগ্রাম করে এতদূর এসে পৌছায় তা একমাত্র তারাই জানে। তাই এরা তাদের শিকড় ভোলে না। তারা গর্ব করে বলে আমার বাবা রিকশাচালক, আমার বাবা দিনমজুর। তাতে ওদের মর্যাদা আরো বেড়ে যায় সমাজে।

যশোরের শার্শা উপজেলার কায়বা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রাম রুদ্রপুর। এই গ্রামের কৃতি সন্তান শামীম রেজা ৪৯তম বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষায় শিক্ষা ক্যাডার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ থেকে বিবিএ ও এমবিএ সম্পন্ন করা এ মেধাবী তরুণ তার শিক্ষা জীবনে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন।

শামীম রেজা রুদ্রপুর গ্রামের কৃষক শাহাবুদ্দিন সরদার ও গৃহিণী শাহানাজ খাতুন দম্পতির ছেলে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। তার এই সফলতার নেপথ্যে রয়েছে বাবা-মায়ের অকৃত্রিম অনুপ্রেরণা ও কঠোর পরিশ্রম।

শামীম রেজা সীমান্ত কোলঘেষা শার্শার গোগা ইউনাইটেড আদর্শ কলেজ থেকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। বিশেষত, তার এই অর্জন গোগা কলেজকে এক নতুন পরিচয় দিয়েছে। এ অঞ্চলের কলেজ থেকে তিনিই প্রথম বিসিএস ক্যাডার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হলেন।

তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখে গেল অন্য রকম আনন্দ। শামীম রেজার মা শাহনাজ খাতুন তখন দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। বাবা শাহাবুদ্দীন পায়চারী করছিলেন। ওদের মনের ভেতর যে আনন্দ ভেসে বেড়াচ্ছিলো তা শুধু প্রকাশের অপেক্ষায় ছিলো মাত্র। তাদের সুখ যেনো ঝরে পড়ছিলো স্বর্গ বেয়ে। দৃঢ়চেতা শাহনাজ খাতুন আমাদের সামনে এলো বিজয়িনীর বেশে।

সাবলীল ভঙ্গিতে বলছিলো তাদের জীবন সংগ্রামের কথা। যা কখনো কখনো চোখে জল এনে দেয়। তার ছেলে শামিম লেখাপড়া করে ভালো চাকরি করুক, প্রতিবেশিরা তা চায়নি। তারা বলছিলো এত খরচাপাতি করে এতো কষ্ট করে লেখা পড়া না শিখিয়ে ওকে কাজে লাগিয়ে দেও তাতে সংসার ভালো চলবে।

শাহনাজ খাতুন সেদিন কিছুই বলেনি, কোনো জবাবও দেননি। তাদের দীর্ঘশ্বাস চাপা দিয়ে শুধুই লড়াই করেছিলেন দারিদ্রতার বিরুদ্ধে। তাদের লক্ষ্য ছিলো ছেলেকে তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌছে দেয়া। তারা সেটা পেরেছেন। তাই আত্মতৃপ্তিতে ভরে গেছে তাদের মন। কিন্তু একজন শাহনাজ খাতুন একজন শাহাবুদ্দীন সরদার ওদের জন্য এ যেনো স্বর্গ থেকে পাওয়া বিধাতার দান।

শামীম রেজা তার এই সফলতার পেছনে বাবা-মা, পরিবারের সদস্য ও শিক্ষকদের অবদানের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্বীকার করে জানান, চাকরিতে যোগদানের পর তার প্রধান লক্ষ্য হবে সাধারণ মানুষের সেবা করা এবং দেশের উন্নয়নে সক্রিয় ও কার্যকর ভূমিকা রাখা।

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Exit mobile version