মণিরামপুর সংবাদদাতা
যশোরের মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে রোববার দুদকের এনফোর্সমেন্টের একটি টিম অভিযান চালিয়েছে। ছদ্মবেশে রোগি সেজে সকাল থেকে শুরু করে বিকেল তিনটা পর্যন্ত এ অভিযানে রোগিদের হয়রানি, সরকার নির্ধারিত ভাড়ার বিপরীতে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া বেশি আদায়, ভর্তি রোগিদের মধ্যে নিম্নমানের খাদ্য সরবরাহ, ফার্মেসিতে ওষুধের মজুত থাকা সত্বেও অহেতুক প্রেসক্রপিশনের মাধ্যমে বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে বাধ্য করাসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন দুদকের এ টিম। এছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রোগি ভাগিয়ে বিভিন্ন ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে নয়ন হোসেন নামে একজন দালালকে আটক করে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার হেফাজতে দেয়া হয়। তবে অভিযোগ উঠেছে কোন আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে বিকেলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মুচলেকা আদায় করে ওই দালালকে ছেড়ে দেন। অভিযান শেষে বিকেল পৌনে চারটার দিকে দুদকের পক্ষ থেকে তাৎক্ষনিক প্রেসব্রিফিং করে অভিযানের বর্ননা দেওয়া হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) যশোরের ডেপুটি ডাইরেক্টর (ডিএডি) চিরঞ্জীব নিয়োগীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের এনফোর্সমেন্ট টিম এ অভিযানে অংশ নেন। ডিএডি চিরঞ্জীব নিয়োগী জানান, তারা রোগির ছদ্মবেশে সকাল নয়টা থেকে অভিযান শুরু করেন। অভিযানকালে তারা প্রমাণ পান সরকার নির্ধারিত ভাড়ার পরিবর্তে অ্যাম্বুলেন্স চালক একলাস উদ্দিন রোগিদের কাছ থেকে তিনগুণ টাকা আদায় করেন। ঠিকাদার ইসমাইল হোসেন রোগিদের যে খাবার সরবরাহ করেন তা অত্যন্ত নিম্নমানের।
এ ছাড়া যে পরিমান মাছ মাংস দেয়ার কথা তার থেকে অনেক কম সরবরাহ করা হয়। মহিলা ও শিশু ওয়ার্ডের বাথরুম নিয়মিত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন না করায় ব্যবহার করার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। জরুরী বিভাগে মেডিকেল অফিসারের পরিবর্তে স্যাকমো ও আউটসোর্সিংয়ের লোক দিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। এছাড়া ফার্মেসিতে পর্যাপ্ত ওষুধের মজুদ থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ চিসিৎসকরা অহেতুক প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমে রোগিদের বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে বাধ্য করেন। অপরদিকে ল্যাবরেটরিতে বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য সরকার নির্ধারিত ফিসের পরিবর্তে বেশি মূল্য আদায় করা, রোগি ভাগিয়ে ক্লিনিকে পাঠানোর অভিযোগের সত্যতা পান দুদকের এ টিম। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রোগি ভাগিয়ে নেয়ার সময় হাতে নাতে এ টিমের হাতে আটক হন ল্যাব সাদ নামে একটি ক্লিনিকের স্টাফ (দালাল) নয়ন হোসেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নয়নকে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করা হলেও বিকেলের পর নয়নকে ছেড়ে দেয়া হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফাইয়াজ আহমেদ ফয়সাল জানান, মুচলেকা নিয়ে নয়নকে ছেড়ে দেয়া হয়। দুদকের এ অভিযানে অংশ নেয়া এনফোর্সমেন্টের অপর টিমের সদস্যরা হলেন ডিএডি তাওহিদুল ইসলাম, এএসআই রমেছা খাতুন। টিম লিডার চিরঞ্জীব নিয়োগী জানান, অভিযানে অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য প্রমাণসহ প্রতিবেদন পাঠানো হবে পরবর্তি আইনগত ব্যবস্থা নিতে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে (এনফোর্সমেন্ট)।
