বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর সদরের বারিনগর এলাকার  রহিমা বেগম (৬৫) দীর্ঘদিন হৃদরোগে আক্রান্ত। হতদরিদ্র এই নারীর গেল কয়েক বছর ধরে চিকিৎসা চলছিলো স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে। আর্থিকভাবে অসচ্ছল হওয়ায় ভালো কোন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেননি। শুক্রবার সদর উপজেলার হৈবতপুর ইউনিয়নের নাটুয়াপাড়াস্থ সমন্বিত প্রবীণ ও শিশু নিবাস ‘আমাদের বাড়িতে’ বসে মেডিকেল ক্যাম্প। সেখানে স্বল্পমূল্যে রেজিস্ট্রেশন করে ঢাকার স্বনামধন্য হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ’র চিকিৎসা সেবা পেয়ে খুশি তিনি।
রহিমা বলেন, ‘চার বছর আগে স্ট্রোক করার পর গ্রামাঞ্চলে অনেক জায়গায় চিকিৎসা নিয়েছি। তবে টাকা পয়সা না থাকাতে ভালো কোন ডাক্তার দেখাতে পারেনি। শুনেছি, ঢাকার বড় বড় ডাক্তার আসবে নাটুয়াপাড়ায়। তাই এখানে মেয়ের হাতে ভর দিয়ে ডাক্তার দেখাতে এসেছি।
তিনি জানান, ‘এসব নাম করা ডাক্তারের কাছে যাওয়ার টাকা নেই। আবার গ্রাম থেকে ঢাকায় গিয়ে ওখানে চিকিৎসা সেবার খরচও অনেক। ওনারা গ্রামে এসে রোগী দেখছে এতে আমাদের মতো গরীর খেটে খাওয়া মানুষদের ভাগ্যের ব্যাপার।’
শুধু রহিমা নয়; তার মতো তিন শতাধিক হতদরিদ্র ও গ্রামের খেটে খাওয়া কৃষকেরা এদিন পেয়েছেন বিশেষজ্ঞ সব চিকিৎসকের সেবা। যার আয়োজন করেছিল জিএমএসএস ফাউন্ডেশন ও সমন্বিত প্রবীণ ও শিশুদের নিবাস আমাদের বাড়ি। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত যশোর ছাড়াও পাশ্ববর্তী জেলা ঝিনাইদহ, নড়াইল, মাগুরার থেকে আসা রোগিরা এদিন ঢাকার ৯জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা নেন। নিভৃত পল্লীতে  দেশ সেরা চিকিৎসকের সেবা পেয়ে খুশি চিকিৎসা নিতে আসা এসব মানুষেরা।
স্ত্রীকে নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা নূর ইসলাম বলেন, ‘আমরা এলাকার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ। অধিকাংশ মানুষ কৃষক, দিনমজুর।  চিকিৎসার জন্য ঢাকা শহরে যাওয়া সম্ভব না। একই সাথে ব্যয়বহুলও বটে। আল্লাহর অশেষ রহমত, এতগুলো বড় বড় ডাক্তার এখানে রোগী দেখছেন।’
তিন মাস বয়সী শিশুকে নিয়ে সালমা খাতুন এসেছেন ক্যাম্পে। তিনি বলেন, ‘নামকরা চিকিৎসকরা এখানে চিকিৎসা দিচ্ছে। যাদের ঢাকাতে চিকিৎসা নিতে অনেক ব্যয়বহুল। এখানে এসে নামকরা শিশু বিশেষজ্ঞ দেখাতে পেরেছি।’
আমাদের বাড়ির স্বপ্নদ্রষ্টা জিএমএসএস ফাউণ্ডেশনের চেয়ারম্যান ও ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটাল অ্যাণ্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. এমএ রশিদ বলেন, ‘এখানকার মানুষ অসচ্ছল। ঢাকাতে গিয়ে চিকিৎসা নিতে তাদের জন্য অনেক কষ্টসাধ্য ও ব্যয়সাধ্য ব্যাপার। এই জন্য চিকিৎসা সেবা মানুষের দ্বোরগোড়ায় আনার চেষ্টা করেছি। আপনারা জানেন, এখানে সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের জন্য আমাদের বাড়িতেই স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে, যারা অবহেলিত, সুবিধাবঞ্চিত তারা এখানে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা পায়। বছরের তিন থেকে চারটি দেশের নাম করা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নিয়ে ক্যাম্প করি। সেখানে সদর উপজেলাসহ আশেপাশের জেলা উপজেলার মানুষ সেবা নেয়। এছাড়া প্রতিমাসে আমি চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকি। এলাকার মানুষের ভিতর ব্যাপক সাড়া রয়েছে। এরা অপেক্ষা করে আমি কখন আসবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো তাদের স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন করি। সবার মনে রাখতে হবে ওষুধের চেয়ে জীবনযাত্রার প্রণালী মেনে চলা জরুরি।’
জানা যায়, যশোর শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার নাটুয়াপাড়ায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও জিএমএসএস ফাউণ্ডেশনের যৌথ উদ্যাগে ২০২২ সালে ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় আমাদের বাড়ি। সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের জন্য গ্রামীণ মনোরম পরিবেশে এক একর ৫ শতক জমির ওপর নির্মিত প্রতিষ্ঠানটিতে চারতলা ভবনে ১২০ জন বসবাস করেন। প্রতিষ্ঠানটিতে বসবাসকারীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত সকল সেবা। প্রবীণ ও শিশুদের মধ্যে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, ব্যায়াম, স্বাস্থ্যসেবাসহ সবকিছু বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনায় ধান-সবজি চাষের পাশাপাশি মাছের খামার, হাঁস-মুরগি ও গরুর খামারও রয়েছে। কর্তৃপক্ষের আশা, এখানে প্রবীণরা যেমন স্বস্তি পাবেন তেমনি শিশুরাও শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সমাজের মূলধারায় ফিরতে পারবে।

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Home
News
Notification
Search
Exit mobile version