বাংলার ভোর ডেস্ক

দীর্ঘ প্রায় পাঁচ মাস বিএনপির রাজনীতি আটকে ছিল শুধু জনসংযোগ কর্মসূচি আর লিফলেট বিতরণে। সেই খরা কাটিয়ে আবার পথে নামতে যাচ্ছে দলটি। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সোমবার ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি। পুলিশের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক অনুমতি না পেলেও এ সমাবেশের মধ্য দিয়ে আবার রাজপথের কর্মসূচিতে মাঠে ফিরতে চায় তারা। গত বছরের ২৮ অক্টোবর ডাকা মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন ও সরকার পতনের ডাক দিয়েও ব্যর্থ হয় বিএনপি। এরপরই মাঠের রাজনীতিতে অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়ে তারা।

এ নিয়ে নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে কেন্দ্রের প্রতি। বারবার তারা আহ্বান জানায় কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়ার। কিন্তু সে পথে না গিয়ে আবার আসে বর্জনের ডাক। তৃণমুল নেতাদের প্রবল আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও নীতিগত কারণে উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে বিএনপি।

এমন ঢিমেতালের রাজনীতির মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশের ঘোষণা বেশ আগ্রহ তৈরি করেছে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে। বিএনপির অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উদ্যোগে এ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান।

বিচারপতির বাসভবনে হামলার মামলাসহ মোট নয়টি মামলায় কারাবাস করে মুক্তি পেলেও অসুস্থতার কারণে বেশ কিছুদিন দলে সক্রিয় ছিলেন না মহাসচিব। চিকিৎসা শেষে শনিবার সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরেছেন তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, সোমবারই তাকে দেখা যাবে মাঠে।

নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সকাল সাড়ে দশটায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে সাদেক আহমেদ খান বলেন, “বিএনপি ভাইস-চেয়ারম্যান ও স্বাধীনতা উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে হবে এই সমাবেশ। তাতে প্রধান অতিথি থাকবেন আমাদের মহাসচিব।

কর্মীদের মনোবল যেন না ভাঙে, তা নিশ্চিত করতেই মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশকে গুরত্ব দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে দলের নেতারা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, হামলা-মামলায় জর্জরিত নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতেই আমরা মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশকে গুরত্ব দিচ্ছি। নেতাদের ঐক্যই আমাদের শক্তি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের স্থায়ী কমিটির আর এক সদস্য বলেন, ২৮ অক্টোবরের পর আমাদের কার্যালয়ের সামনে যে পরিস্থিতি তৈরি করা হয়! হাজার হাজার নেতাকর্মী গ্রেপ্তারসহ কার্যালয়ও তারা দখলে নিয়ে নেয়। আমাদের সিনিয়র নেতারা এক এক করে জামিনে বের হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি সবকিছু আবার গুছিয়ে মাঠের আন্দোলন ঠিক করতে।

আন্দোলনের পরিকল্পনা সাজাতে স্থায়ী কমিটির একাধিক বৈঠক হয়েছে উল্লেখ করে এই নেতা জানান, রমজানের পরে কী ধরনের কর্মসূচি দেয়া যেতে পারে, তা নিয়ে মতামত এসেছে। সাংগঠনিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারাদেশের পাঁচশ স্থানে ইফতার আয়োজনের পরিকল্পনাও হয়েছে। পাশাপাশি কারামুক্ত নেতাদের বাসায় গিয়ে তাদের পুনরুজ্জীবিত করা হচ্ছে। নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা রাখতে জনসম্পৃক্ত নানা কর্মসূচির পাশাপাশি ‘হার্ড লাইনে’ কী করা যেতে পারে তা নিয়েও রয়েছে পরিকল্পনা। সেই ধারবাহিকতার শুরু হবে ২৬ মার্চ উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশের মধ্য দিয়ে।

বিএনপি খুব শীঘ্রই ক্ষমতায় আসবে এমন আশা প্রকাশ করে অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা যেভাবে দেশকে স্বৈরাচারের হাত থেকে মুক্ত করেছে, জাতীয়তাবাদী সৈনিকরাও দেশকে পুনরুদ্ধার করবে। সেই লক্ষ্যেই এই মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ।

স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে ১৬ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। কমিটির আহ্বায়ক দলের ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমদ, সদস্য সচিব জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশের মধ্য দিয়ে আমরা আবার আমাদের জনশক্তির প্রমাণ দিতে চাই। ইটস জাস্ট আ ওয়ার্মিং সেশন। সরকারের পতন ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের মুল লক্ষ্য।

এ সমাবেশের মধ্য দিয়ে বিএনপি নিজেদের ‘শক্তি প্রদর্শনের’ কথা বললেও তাতে লাগাম টানছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

গত ২০ মার্চ সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে ডিএমপি কমিশনারের কাছে আবেদন করে বিএনপি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগ) কে.এন.রায় নিয়তি বলেন, এই বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান ডিএমপি কমিশনারের বরাত দিয়ে বলেন, লিখিত অনুমতি না দিলেও তারা মৌখিকভাবে বলেছেন, আপনারা সমাবেশ করেন।

তবে বেশি লোক গ্যাদার কইরেন না। সাড়ে ১০টায় শুরু করে সাড়ে ১১টায় শেষ করে দিয়েন। তাহলে কি শর্ত সাপেক্ষে সমাবেশ- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সমাবেশ আমরা করবই।”

সমাবেশ ঘিরে অনুমতির তোয়াক্কা করছেন না বলে জানিয়েছেন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত। তিনি বলেন, “অনুমতি চাওয়া একটা ফরমালিটি মাত্র। অনুমতি পাওয়া না পাওয়া আমাদের কনসার্ন না।

যদিও আজ (রবিবার) বিকেলে জানানোর কথা ছিল। আমরা অপেক্ষায় আছি। তবে অনুমতি না দিলেও আমরা সমাবেশ করব। ২৬ মার্চ ঘিরে আমরা মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ করতে চাই। এতে অনুমতি না দেয়ার কিছু নেই।

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Exit mobile version