বাংলার ভোর প্রতিবেদক
বাউল শিল্পীদের গানে গানে বাউল শিল্পী আবুল সরকারের গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানিয়েছে যশোরের সাংস্কৃতিক কর্মীরা। আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে প্রেস ক্লাব যশোরের সামনে যশোরের সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ ব্যানারে এই মানববন্ধন হয়। বক্তারা বাউল আবুল সরকারের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অঙ্গনের আন্দোলন চালানোর হুশিয়ারি দেন। তারা বিনা শর্তে তার মুক্তির দাবিও জানান।
বক্তারা বলেন, ‘অসাম্প্রদায়িক চেতনার মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। এ দেশে কোনো সাম্প্রদায়িক সহিংসতা থাকবে না। ধর্মের নামে কোনো হানাহানি চলতে পারে না। বাংলাদেশ হবে অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা। এখানে সব ধর্মের মানুষ তাদের অধিকার নিয়ে বসবাস করবে, তাদের উৎসব উদ্যাপন করবে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করবে। তাতে কোনো বাধা থাকবে না।
বক্তারা অভিযোগ করেন, বাউল সরকারের আটকের মধ্যে দিয়ে দেশের সাংস্কৃতিক চর্চাকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। মুক্ত সংস্কৃতির বিরুদ্ধে সবসময় একটি গোষ্ঠী সক্রিয় ছিলো। শত শত বছর আগেও তারা সক্রিয় ছিলো; বিগত সরকারের সময়ও তারা বাউল শিল্পী সাংস্কৃতিক কর্মীদের উপর হামলা করেছে। সেই গোষ্ঠী যারা সংগীত পছন্দ করে না; যারা সমাজকে অন্ধকারে নিতে চাই তারাই সবসময় সক্রিয় রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিগত সরকারের সময়েও বারবার রাজপথে আন্দোলন করতে হয়েছে, আজও প্রতিবাদে দাঁড়াতে হচ্ছে। শাসক পরিবর্তন হচ্ছে, কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি শাসকগোষ্ঠী সবসময় বারবার তাদের পক্ষেই দাঁড়াচ্ছে।
একটি রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে ‘কারা কারা বেহেস্তের টিকিট পেয়েছেন’ এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হচ্ছে কি না, তা বিবেচনা করা জরুরি। বক্তারা দ্রুত বাউল আবুল সরকারের মুক্তির দাবি জানান।
মানববন্ধনে যশোর শিল্পকলা একাডেমির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদ হাসান বুলু বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫৪ বছরে আমাদের যে স্বপ্ন মত প্রকাশ, সেই স্বাধীনতার স্বাদ এখনো পাইনি। সাংস্কৃতিক কর্মীদের প্রাণের সাংস্কৃতিক চর্চা; সেটা করতে যেয়ে বারংবার বাধাগ্রস্ত হয়েছি। আজকেও হামলা, গ্রেফতার-ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। আগেও সাংস্কৃতিক চর্চা করতে যেয়ে হামলা, মৃত্যু হয়েছে। একটি পটপরিবর্তনের পরেও এখনো মাজারে হামলা, বাউল শিল্পীদের উপর হামলা হচ্ছে; তাহলে কি পরিবর্তন হলো?
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দিপঙ্কর দাস রতন বলেন, সাংস্কৃতিক কর্মীদের প্রধান দাবি একটাই, মুক্ত সাংস্কৃতি চর্চা। বাঙালির যে চিরায়ত সংস্কৃতি এই সংস্কৃতির বিরুদ্ধে সবসময় একটি গোষ্ঠী অবস্থান গ্রহণ করেছে। তারা রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় অবাধ সংস্কৃতির বিরোধী। এই সংস্কৃতি বিরোধীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া দরকার। সংস্কৃতি হারিয়ে গেলে, বাঙালি হারিয়ে যাবে। বাঙালি হারিয়ে গেলে বাংলাদেশ হারিয়ে যাবে। এই বাংলাদেশকে আফগানিস্তান-পাকিস্তান হতে দিবো না।
বাউল আবুল সরকারের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অঙ্গনের আন্দোলন চালানোর হুশিয়ারি দেন তিনি। তিনি বিনা শর্তে তার মুক্তির দাবি জানান।’ মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সাংস্কৃতিক সংগঠক হারুন অর রশিদ, সানোয়ারুল আলম খান দুলু, যোগেশ দত্ত, মোস্তাফিজুর রহমান, হাসিবুর রহমান প্রমুখ।
এ সময় বক্তব্যের মাঝে মাঝে বাউল শিল্পীরা জাত গেল জাত গেল বলে/একি আজব কারখানা/সত্য কাজে কেউ নয় রাজি/সবই দেখি তা না না না’ বাউল গানে গানে প্রতিবাদ জানান।
