মণিরামপুর সংবাদদাতা
মণিরামপুরে শতবছরের ঐহিত্য ধরে রাখতে ভবদহপাড়ে আয়োজন করা হয়েছে সপ্তাহব্যাপি মেলার। ‘গাউটে পূজা’ উপলক্ষে রাজবংশিপাড়ার কালিমন্দির চত্বরে এ মেলার আয়োজন করা হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা হলেও ভবদহের হিন্দু-মুসলিম একাট্টা হয়ে উপভোগ করছেন এ মেলা। প্রতিদিন বিকেল তিনটায় শুরু হয়ে চলছে গভীর রাত পর্যন্ত। গত ১৪ ডিসেম্বর শুরু হয়ে ‘গাউটে পূজা’ মেলা শেষ হবে ১৯ ডিসেম্বর। এ মেলা এলাকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত। মেলা দেখতে আসা ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

সোমবার সরেজমিনে জানা যায়, মণিরামপুর উপজেলার ভবদহের কপালিয়া বাজারের পূর্বপাশে রাজবংশি পাড়ায় অবস্থিত কালি মন্দির চত্বরে শ্রী শ্রী মহামায়া পূজা (গাউটে পূজা) উপলক্ষে ১৪ ডিসেম্বর থেকে আয়োজন করা হয়েছে সপ্তাহব্যাপি মেলার। মন্দিরের সামনে নির্মান করা হয়েছে বিশাল প্যান্ডেল। এখানে রয়েছে সুসজ্জিত মঞ্চ। মঞ্চে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিল্পীরা ধর্মীয় গানসহ বিভিন্ন সংগীত পরিবশেন করছে। কবিতা আবৃতি, নাটক ছাড়াও প্রতিরাতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যাত্রাপালা। প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে হিন্দু সম্প্রদায় ছাড়াও মুসলিমরাও এ মেলায় অংশ নিচ্ছেন।

মন্দির চত্বর ছাড়িয়ে তিনভেন্ট স্লুইসগেটের পাশ দিয়ে বহমান প্রায় দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ছোট রাস্তার দু’পাশে হরেক রকমের পসরার অন্তত: কয়েক’শ স্টল দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন খাবার, শিশুদের খেলনা, নারী-শিশুসহ সব বয়সিদের পোশাক, জুতা, স্যান্ডেল, প্রসাধনী সামগ্রি, কাঠের তৈরি ফার্নিচারসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রি শোভা পাচ্ছে এসব ষ্টলে। স্টলের পাশে রয়েছে নাগোরদোলা, পুতুল নাচসহ ভিন্ন ভিন্ন বিনোদনের ব্যবস্থা। প্রতিদিন বিকেল তিনটা থেকে শুরু হয়ে গভীর রাত পর্যন্ত চলে এ মেলা। অন্যদিকে শ্রীহরি নদীর তিরে এ মেলা হওয়ায় প্রতিদিন ডুমুরিয়া উপজেলা থেকেও সাকো দিয়ে নদী পার হয়ে অনেক মানুষ মেলায় অংশ নিয়ে থাকেন। শুধু ডুমুরিয়া নয়, পার্শ্ববর্তি অভয়নগর, কেশবপুর, ফুলতলা উপজেলা থেকেও মানুষ আসে মেলায়।

আরও পড়ুন .. ..

যশোর জেনারেল হাসপাতালে চাকুসহ আটক এক

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) রাতে মেলায় প্রধান অতিথি ছিলেন যশোর-৫ মণিরামপুর আসনের ধানের শীষের প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সভাাপতি অ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল হোসেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে শহীদ ইকবাল হোসেন বলেন, শুধু ভবদহ এলাকায় নয় সমগ্র মণিরামপুরে হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই হয়ে একে অপরের সুখ দুঃখে পাশে থেকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতি বজায় রেখেছে। আর এ ব্যাপারে বিএনপির পক্ষ থেকে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখা হয়েছে।

মেলা অয়োজক কমিটির সভাপতি স্থানীয় ইউপি সদস্য শংকর মন্ডল জানান, শতবছরের ঐতিহ্য গাউটে পূজা উপলক্ষে প্রতিবছর সপ্তাহব্যাপি এ মেলার আয়োজন করা হয়। সনাতন ধর্মের পাশাপাশি মুসলিমরাও এ মেলায় অংশ নেন। কমিটির সাধারন সম্পাদক অমিত কুমার সরকার জানান, জলাবদ্ধতার সাথে নিরন্তর লড়াই করে ভবদহ এ জদপদের বাসিন্দাদেরকে বসবাস করতে হয়। এখানে হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে চমৎকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রয়েছে। ফলে হাজারো কষ্টের মধ্যে এ মেলা ভবদহবাসীকে একটু আনন্দ দেয়।

স্থানীয় ঘের মালিক হরিচাঁদ মল্লিক জানান, এ মেলায় কোন প্রকার আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয়না। হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে চমৎকার সম্প্রীতি সম্পর্ক বজায় রয়েছে। মনোহরপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপির সভাপতি আকতার ফারুক মিন্টু জানান, প্রতিবছর এ মেলা এলাকার সব ধর্মের মানুষের মধ্যে আনন্দের বন্ধন তৈরি করে।

প্রশাসনের পাশাপাশি বিএনপির পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাশ্রমে এ মেলার নিরাপত্তা বিধান করা হচ্ছে।

মনিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ রজিউল্লাহ খান জানান, এখন পর্যন্ত মেলায় কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

Share.
Exit mobile version