বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর সদরের ডাকাতিয়া গ্রামে আইনশঙ্খলা সদস্যদের নির্যাতনে আতিক হাসান সরদার (৩৯) নামে এক যুবদল নেতা নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাড়ির আঙিনায় লিচুগাছে বেঁধে মারপিটের পর খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই রাতেই তার মৃত্যু হয়। সেখানে ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার সন্ধ্যায় মরদেহ আনা হয় বাড়িতে। তবে নির্যাতনের বিষয়টি স্বীকার না করলেও ঘটনাটি তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন যশোর সেনা ক্যাম্পের কর্মকর্তারা।

নিহত আতিক হাসান যুবদলের সদর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে বেশ কয়েক বছর আগে একটি মাদক মামলাও হয়।

হাসানের স্বজনদের অভিযোগ, মঙ্গলবার দুপুরে ছাগলের জন্য কাঁঠালের পাতা কিনতে একটি টিভিএস মোটরসাইকেল চালিয়ে বাড়ি থেকে বের হন হাসান। এরপর থেকে তার খোঁজ ছিল না। সন্ধ্যার পর সাদাপোশাকধারী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাইক্রোবাসে করে হাসানকে বাড়িতে নিয়ে আসে। এর পরপরই আসে বিশেষবাহিনীর দু’টি গাড়ি।

হাসানের বাবা আব্দুর রাজ্জাক সরদার বলেন, ওরা পৌঁছানোর সাথে সাথে এলাকার বিদ্যুৎ চলে যায়। ৪/৫জন আমার ছেলেকে আমারই উঠোনের লিচু গাছে ঝুলায়। অন্যরা আমাদের দূরে সরিয়ে দেয়। তারপর শুরু করে মারধর। কাঠ দিয়ে পেটাতে থাকে। ছেলের আর্তনাদ সহ্য করতে না পেরে ওর মা মনোয়ারা বেগম ছুটে যায় ছেলের কাছে। তাকেও মেরে দূরে সরিয়ে দেয়া হয়, বৌমা স্বামীকে বাঁচাতে যেয়ে মার খেয়ে ফিরে আসে। বড় পোতাকেও মেরে ঠেলে ফেলে দিয়েছে। দীর্ঘক্ষণ মারপিটের পর হাসানকে নিয়ে যায় নুরপুরের কাসেমের মোড়ে। সেখানেও নাকি মেরেছে। পরে আবার বাড়িতে এনে পেটায়। প্রায় মরা অবস্থায় বৌমার সামনে ছেলেকে ফেলে রেখে যায়।

হাসানের স্ত্রী শাস্তা বেগম অভিযোগ করেন, ওরা যখন গরু পিটানোর মত পিটাচ্ছিল তখন আমি ও বড়ছেলে গিয়ে জড়ায়ে ধরেছিলাম। ওরা আমাদেরকেও মেরেছে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে আমাকে ডেকে প্রায় মরা অবস্থায় হাসানকে ফেলে রেখে যাওয়ার সময় আমাকে দিয়ে জোরকরে বলায় ‘আমার স্বামীকে সুস্থ অবস্থায় বুঝে পেয়েছি মর্মে ভিডিও করে নেয়।’ ওরা আমাকেও বলে ‘মাদক উদ্ধার না হলে তোকেও পেটাবো, ছেলেদেরও পেটাবো।’

হাসানের মা মনোয়ারা বেগম শোকে কথা বলার শক্তি হারিয়েছেন। তার হাতেও আঘাতের চিহ্ন। নিহতের চাচাতো ভাই তারেক ও মুকুল জানান, গাড়িগুলো চলে গেলে হাসানকে দ্রুত যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে দুই ঘণ্টা চিকিৎসা দেয়ার পর ডাক্তাররা ঢাকা অথবা খুলনা নিয়ে যেতে বলে। আমরা দেরি না করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। রাত ৪টার দিকে মারা যান হাসান।

বুধবার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়নাতন্ত শেষে সন্ধ্যায় হাসানের লাশ ডাকাতিয়া গ্রামে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। সেখানে বাদ এশা জানাজা হয়। জানাজায় কাশিমপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন ও নিহতের পিতা আব্দুর রাজ্জাক সরদার বক্তব্য রাখেন। সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন বলেন, হাসান দিনমজুরের কাজ করতো। এলাকাবাসীর কাছে শান্ত ভদ্র ছেলে হিসেবে পরিচিত। এটা নির্মম হত্যাকাণ্ড।

জানাজায় অংশ নেন সদর উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুরুল হক খোকন, সাংগঠনিক সমম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, সদর যুব দলের যুগ্ম আহবায়ক তানভীর রায়হান তুহিন, আবুল কালাম আজাদসহ স্থানীয় বাসিন্দারা। শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। যশোর কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এখনো পর্যস্ত কোন মামলা বা অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Home
News
Notification
Search
Exit mobile version