হাসান আদিত্য
বিজয় মিছিলে বিক্ষুদ্ধ জনতার একটি অংশ যশোরে পাঁচ তারকা হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে ভাংচুর করতে যায়। প্রায় দুই শতাধিক আন্দোলনকারীরা হোটেলটির বেজমেন্টে ঢুকেই সিঁড়ি বেয়ে ১৪ তলা পর্যন্ত উঠে যায়। এক পর্যায়ে নিচে থাকা বিক্ষুদ্ধ আন্দোলনকারীদের মধ্যে কয়েকজন যুবক পেট্টল দিয়ে আগুন দিতে শুরু করে। পর্যায়ক্রমে তারা কয়েকটি তলাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে দাউ দাউ করে পুরো ১৪ তলাই কয়েক মিনিটের মধ্যে জ্বলতে থাকে। এতে উপরে থাকা বেশির ভাগ আন্দোলনকারীরা বের হতে পারেনি। ফলে আগুনের ধোয়ায় নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আটকে থেকে তারা মারা গেছে। হোটেলের ভিতর প্রবেশকরা আন্দোলনকারী ও সংশ্লিষ্ঠ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এই অঞ্চলের একমাত্র পাঁচ তারকা হোটেলটির মালিক যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স যশোরের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ বলেন, ‘কি দিয়ে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটনানো হয়েছে সেটা তদন্ত ছাড়া বলা যাচ্ছে না। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ১৮ জন মরদেহ উদ্ধার করেছি। উদ্ধার কাজ চলমান রয়েছে। তবে তিনি আর কিছু বলতে চাননি। তবে নাম না প্রকাশে এক কর্মকর্তা বলেন, হোটেলের ভিতরে অ্যালকোহল পদার্থ বেশি থাকাতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। মনে হচ্ছে গান পাউদারও ব্যবহার করা হয়েছে।’
সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে যেয়ে দেখা যায়, নিহত ও আহতদের স্বজদের আহাজারিতে ভারি হয়ে আছে হাসপাতাল চত্বর। আন্দোলনে এসে অনেকেই নিখোঁজ রয়েছেন। ফলে সেই নিখোঁজদের স্বজনেরা হাসপাতাল ও মর্গের সামনে ভিড় করতে দেখা গেছে। তবে হাসপাতাল চত্বরে পুলিশ বা প্রশাসনের কাউকে দেখা যায়নি।
আন্দোলনরতকারীদের অনেকেই এখন হাসপাতালে থাকতে দেখা গেছে। তারা মরদেহ পরিবারের কাছে হসান্তর, হোটেল থেকে মরদেহ হাসপাতালে আনার সড়ক নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেছে। সবাই হাতেই বাঁশ, রড ও দেশীয় অস্ত্র দেখা গেছে। মরদেহ শনাক্ত হলে ময়নাতদন্ত ছাড়াই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বাড়িতে নিয়ে যাচেছন নিহতের স্বজনেরা।
https://www.youtube.com/watch?v=_Unh8ea471o
যশোর সিটি কলেজ থেকে আন্দোলনে অংশ নেওয়া এইচ এসসি পরীক্ষার্থী ও হোটেলে প্রবেশ করা মারুফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনে কিছু উগ্র ছেলেরা ছিলো। বিজয় মিছিলে তারা জাবির হোটেলে ঢুকে পরে। তাদের সঙ্গে অনেক সাধারণ আন্দোলনকারীরাও ঢুকে পরে। তারা জাবির হোটেলে মূলত দেখতে গেছিলো। সিড়িতে উঠতে উঠতে তারা হোটেলের বিভিন্ন তলাতে উঠে যায়। এদিকে ওদের সাথে থাকা উগ্র ছেলেরা আগুন ধরায়ে দেয় বিভিন্ন তলাতে। তাদের বলতে শুনা যায়, আওয়ামী লীগের শাহীন চাকলাদার অনেক নেতাদের নির্যাতন করেছে, আওয়ামী লীগের শেষ নিশানা মুছে দিতে হবে। সমস্ত হোটেলে আগুন ছড়িয়ে পড়াতে অনেকেই আটকে পড়ে বিভিন্ন তলাতে। তিনি বলেন, ‘হোটেলে বার থাকাতে বারের অ্যালকোহল কারণে আগুন বেশি ছড়িয়ে পড়েছে। মূল শিক্ষার্থীরা এই অগ্নিকান্ডের সাথে জড়িত না। বিভিন্ন রাজনীতিক ছত্রছায়াতে থাকা উগ্র ব্যক্তিরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে এই শিক্ষার্থীর ভাষ্য।
এদিকে আন্দোলনে অংশ নেওয়া অনেকেই বাড়িতে যায়নি। অনেকেই নিখোঁজ রয়েছেন। ফলে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনেরা সোমবার রাত ১০টা পর্যন্ত হাসপাতাল চত্বরে খোঁজাখুঁজি করতে দেখা গেছে। কেউ কেউ মর্গের সামনে বসে নিজ সন্তান বা স্বজনের খোঁজাখোঁজি করছেন। এমনই একজন শহরতলী সুজলপুরের মফিজুর রহমান। আন্দোলনে এসে তার ভাইপো আল আমিনকে পাচ্ছেন না। কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, আমার আল আমিনকে কেউ দেখেছেন। সে রাজ্জাক কলেজে পড়ে।
https://www.youtube.com/watch?v=HeR5oc5piVA
কেন যে সে আন্দোলনে এসেছিলো। বিকাল থেকে তার ফোনে ফোন দিচিছ, রিং যাচ্ছে অথচ ফোন ধরছে না। তার বন্ধুরা বলছে , আলামিনও জাবিবে উঠেছিলো। সে এখন কোথায়। আল্লাহ আলামিনকে বাঁচিয়ে দাও।’ এ ছাড়া শাহীন চাকলাদারের কাঁঠালতলা এলাকার বাসভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। শহরের চারখাম্বা মোড়ে অবস্থিত শেখ রাসেলের ভাস্কর্যও ভাঙচুর করা হয়েছে। তবে এসব ঘটনায় কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। সার্বিক বিষয়ে যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে কেউ কল ধরেননি।