বাংলার ভোর প্রতিবেদক
দেশের চাহিদার সিংহভাগ সবজি সরবরাহ করে যশোরের চাষিরা। তবে টানা বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবজির ক্ষেত ও বিজতলা। কয়েক দফায় সবজির চারা রোপণ করেও বাঁচানো যাচ্ছে না। তাই বারবার সবজি চারা রোপণ করছে কৃষকরা। দেরিতে রোপণ করায় পিছিয়ে যাচ্ছে শীতকালীন সবজি চাষের মৌসুম। ফলে শীতের মৌসুমে বাজারে সবজি সরবরাহ করাও কঠিন হবে। বাজারে শীতকালীন সবজির ভরপুর সরবরাহ এবার দেরিতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, সবজি উৎপাদনে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের দেয়া হচ্ছে সার ও বিজের প্রণোদনা।

যশোরের চৌগাছা সড়কের আব্দুলপুর গ্রামের রাস্তার দু’পাশে তাকালেই দেখা যাবে শত শত পলিথিনে ঢাকা রয়েছে সবজির বিজতলা। প্রতিবছর আষাঢ় মাস থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় বিজতলা প্রস্তুত করে বাঁধাকপি ও ফুলকপির বিজ বপণ করেন এ গ্রামের কয়েকশ’ কৃষক। এরপর ওই বিজ অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা গজালে তা পরিচর্যা করে এক মাস বয়সে তুলে অন্য কৃষকদের কাছে বিক্রি করেন তারা। বর্তমানে বাজারে ভালো মানের প্রতি হাজার ফুলকপির চারা ৮শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা এবং বাঁধাকপির চারা মানভেদে ৫শ’ থেকে ১১শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ভালো দামে চারা বিক্রি করতে পেরে খুশি চাষিরা। তবে গত জুলাই থেকে ধারাবাহিক বৃষ্টিপাতে ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন চাষিরা।

দোগাছিয়া থেকে আসা আক্কাস ও কুদ্দুস আলী নামে দুই কৃষক বলেন, আব্দুলপুরের সবজির চারার মান ভালো। তাই দূর হলেও এখান থেকে চারা কিনতে আসি। প্রতিটি চারাই ফলন দেয়।

নজরুল ইসলাম নামে আরেক কৃষক বলেন, ‘গত মাসে এখান থেকে পাতাকপি, বেগুন আর ফুলকপির চারা কিনেছিলাম। কিন্তু গেল মাসে যে বৃষ্টিপাত হলো; তাতে রোপণ করা চারা মারা গেছে। নতুন করে লাগানোর জন্য আবারও চারা কিনতে এসেছি। ফলে সবজি উৎপাদনে যে খরচ হতো; এবার দ্বিগুণ হচ্ছে বলে জানান তিনি। আলামিন হোসেন নামে এক কৃষক বলেন, এ বছর অতিবৃষ্টির কারণে চারার নার্সারির অনেক ক্ষতি হয়েছে। একই মাসে ৭-৮ বার বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে নার্সারি। যেসব কৃষক আমাদের কাছ থেকে চারা কিনে তাদের জমিতে রোপণ করেছিলো; তারাও ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে।

রিপন হোসেন নামে কৃষক জানান, বৃষ্টিতে এবার শীতকালীন সবজি চাষ উলোটপালট করে দিয়েছে। এখন জমিতে সবজির চারা রোপণ করার সময়। সেই সময়ে এখন বিজ রোপণ করছি। ফলে এবার শীতকালীন সবজি বাজারে আসবে দেরিতে। আরেক কৃষক বলেন, বারবার রোপণ করা চারা জমিতে নষ্ট হওয়াতে সবজি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। যার প্রভাবও পড়েছে সবজির বাজারে। বাজারে সবধরনের সবজির যে দাম বৃদ্ধি; এটা সহসা কমবে না বলে জানান তিনি।

শাহজাহান হোসেন নামে এক কৃষক বলেন, এখানে ভালো মানের বিজ পাওয়া কঠিন। তারপরেও বিভিন্ন মাধ্যমে সেরা বিজ থেকে চারা রোপণ করার চেষ্টা করি। তিনি জানান, বিজ পাওয়া যাচ্ছে না। স্থানীয় দোকানদাররা সিণ্ডিকেট করে বিজের দাম বেশি নেয়। যে বিজ কিছুদিন আগেও ৪০০ টাকায় পাওয়া যেত; সেখানে বর্তমানে ৮০০ টাকাতেও পাওয়া যাচ্ছে না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ও চারার গুণগত মান বজায় রেখে আব্দুলপুরের চাষিরা ৯ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন সবজির চারা উৎপাদন করেন। বৃহত্তর যশোর অঞ্চল ছাড়াও দেশের বিভিন্ন পাইকারি ব্যবসায়ীরা ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন এখানকার উৎপাদিত চারা। যার বাজার মূল্যে ২৫ কোটি টাকার বেশি।

তিনি বলেন, তবে গত জুলাই থেকে ধারাবাহিক যে বৃষ্টি হচ্ছে; এতে কিছুটা ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন এখানকার চাষিরা। তবে কৃষি বিভাগের থেকে তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে বিভিন্ন বিজ ও সার প্রণোদনা দিয়েছে।

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Exit mobile version