বাংলার ভোর প্রতিবেদক:
কারফিউ শিথিল থাকায় বুধবার কর্মব্যস্ত যশোর শহরে ফিরেছে পুরনো প্রাণচঞ্চল চেহারায়। অফিস-আদালত বসেছে যথারীতি। খুলেছে দোকানপাট। ফুটপাতে বসেছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। শহরে চলাচল করছে ছোট-বড় সব ধরনের যানবাহন। জেলা শহর থেকে ঢাকাসহ অন্য জেলার উপজেলার উদ্দেশেও ছেড়ে গেছে যাত্রীবাহী বাস। কয়েক দিন বন্ধের পর খুলে যাওয়া ব্যাংকগুলোতেও ছিল গ্রাহকদের উপচে পড়া ভিড়। শহরের মাছবাজারসহ অন্যান্য কাচা বাজারগুলোতেও ক্রেতাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

তবে কারফিউ শিথিল থাকলেও শহরের বিভিন্ন মোড় ও সড়কগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল ছিল বিগত কয়েক দিনের মতোই। জেলাবাসী প্রত্যাশা করেছেন, দ্রতই এ সংকট কেটে যাবে। আবার স্বাভাবিক হবে দেশ। সচল হবে ব্যবসা বাণিজ্য। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রাণ ফিরবে শিক্ষার্থীদের আনাগোনায়।

বুধবার বেলা ১১টার দিকে শহরের একাধিক সড়কে গিয়ে চোখে পড়ে যানবাহনের ভিড়। গত কয়েকদিন ধরে ঘরে বসে থাকা অটোরিকশা ও সাধারণ রিকশা চলাচলও ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটায় যাত্রী ও চালকরা স্বাচ্ছন্দ্যে চালাফেরা করছেন।
শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানায় আবু হাসান (৩৫) নামে এক অটোচালক বলেন, গত কয়েকদিন তিনি অটো নিয়ে বের হতে পারেননি। এর মধ্যেই টাকা-পয়সা ধার করে চাল-ডাল কিনতে হয়েছে। সকাল থেকেই তিনি অটো চালাচ্ছেন। চেষ্টা করছেন যত বেশি সম্ভব যাত্রী পরিবহন করা যায়। তবে অন্য দিনের তুলনায় যাত্রী কিছুটা কম বলে তিনি জানান।

আলেয়া খাতুন নামে একজন বেসরকারি চাকরিজীবী জানান, উনার হাতে থাকা টাকা শেষ হয়ে গিয়েছিল। ব্যাংক খোলাতে টাকা তুলে নিরাপদেই ঘরে ফিরতে পেরেছেন। ব্যাংক না খুললে তিনি বিপদে পড়ে যেতেন বলে জানান। তিনি বলেন, ব্যাংকে অন্য দিনের তুলনায় বেশ ভিড় ছিল।
প্রায় চারদিন পর বড়বাজারে এসেছিলেন বারান্দিপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোতালেব ইসলাম (৪৫)। তিনি বলেন, বাসার বাজার শেষ হয়েছে কয়েকদিন আগেই। কিন্তু ঘরের লোকজন তাকে কারফিউয়ের মধ্যে বাজার করার জন্য বাসা থেকে বের হতে দেয়নি। বুধবার খবর নিয়ে জেনেছেন যে, শহরের পরিবেশ ভালো। তাই তিনি বাসা থেকে বাজার করতে বের হয়েছেন। বাজারের শাক-সবজী ও মাছ-মাংসের দাম অন্য দিনের তুলনায় কিছুটা বেশি। তবুও বাজার করতে পেরেছেন বলে তিনি খুশি।

শহরের মুজিব সড়কের ফুটপাতে এক খাচা পেয়ারা নিয়ে বসেছিলেন মধ্যবয়সী আকবর আলী। তিনি বলেন, তাদের দিনের কামাই দিনে খেতে হয়। গত কয়েকদিন কোনো আয় নেই। খাওয়া হয়েছে আধা বেলা, একবেলা। আজ তিনি আশা নিয়ে বসেছেন, বেচা-বিক্রি হলে বাসায় চাল ডাল কিনে নিয়ে যাবেন। বিকেল ৫ টা পর্যন্ত ভালো বেঁচা বিক্রি করেছেন।

যশোর থেকে ঢাকাগামী ও অন্য জেলা-উপজেলার যাত্রীবাহী বাসগুলো কারফিউয়ের শিথিল সময়ে চলাচল করেছে। বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটিতে যারা যশোরে বাড়িতে এসে আটকা পড়েছিলেন তাদের অনেকেই বুধবার খুলনা-ঝিনাইদহ-মাগুরা-ঢাকাসহ অন্যান্য জেলা চলে যেতে পেরেছেন।
আবুল কাশেম নামে (৪৫) একজন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বলেন, তিনি বৃহস্পতিবার যশোরের নিজ বাসায় এসে আটকা পড়েন। গোপালগঞ্জ তার কর্মপ্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানে যেতে না পেরে খুব টেনশনে ছিলেন। বুধবার তিনি নির্বিঘ্নেই যশোর থেকে গোপালগঞ্জ পৌঁছাতে পারবেন আশা নিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছেন।

এদিকে আদালত পাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, সেখানেও স্বাভাবিক পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রায় সবকটি আদালই বসেছে। আইনজীবীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিভিন্ন উপজেলা থেকে আদালতে আসতে পেরেছেন বিচারপ্রার্থীরা।

আইনজীবী সহকারী তসলিম উদ্দিন বলেন, কয়েকদিন পর আদালত খুলে দেয়ায় বিচারপ্রার্থী এবং আইনজীবীসহ তারা সবাই খুশি। তিনি বলেন, তাদের সবার প্রত্যাশা, সব কিছু আবার দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কর্মবিমুখ হয়ে বাসায় বসে থাকা লাগবে না।

শহরের বিপনী বিতানগুলোও খুলেছে স্বাভাবিক সময়ের মতো। তবে ক্রেতা ছিল কম। শহরের লালদিঘীর পাড়ে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের দোকানগুলোতে কিছুটা ভিড় ছিল।

মোবাইল ঠিক করতে আসা অপু নামে একজন বলেন, মোবাইল একটি জরুরি সার্ভিস। নানান কারণে অনেকেরই ফোন নষ্ট হয়ে যায়। বুধবার দোকান খোলায় আমার মত অনেকে মোবাইল ব্যবহারকারী মার্কেটে এসে তাদের মোবাইল ঠিক করছেন।

এদিকে দুপুরে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে আংশীজনদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় জেলার পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলম বলেন, নাগরিকদের সুবিধার জন্য ও নিরাপত্তার জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে সর্বোচ্চ আইন প্রয়োগ করা হবে। চলমান পরিস্থিতিতে কোনো অঘটন ঘটেনি তবে নগরীতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল চলবে। যেকোনো ধরনের নাশকতারোধে তারা সতর্ক আছেন।

জেলা প্রশাসক আবরাউল হাসান মজুমদার বলেন, কারফিউ এখনি তুলে দেওয়া হচ্ছে না। তবে প্রয়োজনে শিথিল করা হবে। সামাজিকভাবে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সকল শ্রেণি পেশার মানুষের দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Exit mobile version