বাংলার ভোর প্রতিবেদক

যশোরে স্ত্রীকে ভারতে পাচারের পর হত্যার দায়ে পাষণ্ড স্বামীর যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। মঙ্গলবার বিকেলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন এবং মানবপাচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক গোলাম কবির এ আদেশ দেন। রায় ঘোষণার সময়ে আসামি এজলাসে উপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট আদালতের পিপি আব্দুল লতিফ লতা। সাজাপ্রাপ্ত আসামি কামরুল ইসলাম যশোর সদর উপজেলার বানিয়ারগাতি গ্রামের ইউনুস আলীর ছেলে। নিহত সালমা খাতুন যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া মোল্লাপাড়ার ইশারত আলী মোল্লার ছেলে।

আদালত ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের সালমার সাথে কামরুল ইসলামের বিয়ে হয়। বিয়ের পর সালমাকে ভরণপোষণ দেয়না। এছাড়া ব্যাপক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকেন।

একপর্যায় পারিবারিকভাবে বিষয়টি মীমাংসার জন্য বলা হলে কামরুল তার স্ত্রীকে ঢাকাতে নিয়ে গিয়ে দুইজনে চাকরি করে সংসার করবে বলে জানায়। এজন্য সালমাকে চাপ প্রয়োগ করে। ২০২২ সালের ১৫ এপ্রিল দুপুরে সালমাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন কামরুল। এরপর থেকেই দুইজনের মোবাইল নাম্বার বন্ধ করে দেয়া হয়। চিন্তিত হয়ে সালমার পরিবার বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি শুরু করে। কিন্তু কোথাও তাদের সন্ধান পাওয়া যায়না। ২০২২ সালের ১৯ এপ্রিল সালমা ভারত থেকে মোবাইল ফোনে জানায় তাকে ঢাকাতে না নিয়ে ভারতের গুজরাট রাজ্যের আনন্দ জেলায় নিয়ে গেছে কামরুল।

এছাড়া একটি ঘরে তাকে আটকে রাখা হয়েছে বলে জানিয়ে সালমা পরিবারকে তাকে উদ্ধারের জন্য অনুরোধ জানান। ওই বছরের ৬ মে ফের সালমা পরিবারের কাছে ফোন করে জানায় কামরুল তাকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। ওই ব্যক্তি তার উপর নির্যাতন চালাচ্ছে। একই দিন রাতে কামরুল সালমার বাবাকে কল করে জানায় সালমার অবস্থা ভালো না। সে খুব বিপদে রয়েছে। শেষমেষ জানায় সালমাকে ফেলে কামরুল দেশে চলে এসেছেন। দুইদিন পর ৮ মে সালমার বাবা শহিদুল ইসলাম কামরুলের বাড়িতে গিয়ে কামরুলকে জিজ্ঞাস করলে কামরুল খারাপ ব্যবহার করে।

একই সাথে নানা ধরনের হুমকি দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। পরে শহিদুল তার এক আত্মীয়র মাধ্যমে ভারতে খোঁজ খবর নেন কিন্তু সালমার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। একপর্যায় শহিদুল কোতোয়ালি থানায় কামরুলের বিরুদ্ধে মানবপাচার অপরাধ ও দমন আইনে মামলা করেন। মামলাটি তদন্তে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। মামলাটি তদন্ত করে এসআই অমিত কুমার দাস ২০২৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আদালতে চার্জশিট জমা দেন।

তদন্তে উঠে আসে ভারতে অবস্থানকালে সালমার সাথে দ্বন্দ্ব হয় কামরুলের। একপর্যায় পেঁয়াজ রসুন বাটা হামান দিস্তার ডাটি দিয়ে সালমার মুখে আঘাত করে কামরুল। এতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে যায় সালমা। এরপর সালমার ওড়না দিয়ে সালমাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে কামরুল। শেষমেষ ওই ঘরের মধ্যে মরদেহ তালা মেরে সালমার পাসপোর্ট নিয়ে দেশে চলে আসে কামরুল। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ও এ ঘটনায় গুজরাটের ভালেজ থানায় মামলা হয়। মঙ্গলবার এ মামলার রায় ঘোষনার দিনে আসামির উপস্থিতিতে বিচারক যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও একলাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয়মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন।

Share.
Exit mobile version