বাংলার খেলা প্রতিবেদক
যশোর শামস্-উল-হুদা ফুটবল একাডেমি প্রাঙ্গনে যেন মেলা বসেছিল ক্ষুদে ফুটবলারদের। সবার চোখেমুখে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন। কেউ হতে চায় হামজা চৌধুরী, কেউবা জামাল ভুইয়া। তবে সবার স্বপ্ন যে সফল হবে না সেটাও জানতো কিশোররা।

তারপরও চোখেমুখে স্বপ্ন নিয়ে সেই শিশির ভেজা মাঠে সকাল থেকে ভিড় জমাতে থাকে যশোর সদরের হামিদপুরস্থ শামস্-উল-হুদা ফুটবল একাডেমিতে। শুক্রবার একাডেমির ২০২৬ সালের ভর্তির ট্রায়াল অনুষ্ঠিত হয়। এ ট্রায়ালে অংশ নিতে নানা রঙের জার্সি গায়ে কয়েকহাজার ক্ষুদে ফুটবলারের উপস্থিতিতে রঙিন হয়ে ওঠে একামেডির মাঠ। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ভর্তির ট্রায়ালে অংশ নিতে এসেছে তারা। নানা অনুষ্ঠানিকতা শেষে নেয়া হয় ট্রায়াল। ছোট ছোট দলে ভাগ করে নেয়া হয় ট্রায়াল। ট্রায়ালে অংশ নেয়া ফুটবলারদের অভিভাবকদের বাইরে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। ক্ষুদে ফুটবলাররা জানান, ফুটবল তাদের সবচাইতে প্রিয় খেলা। ক্রিকেটের ডামাডোলের মাঝেও তারা ফুটবলকে বেছে নিয়েছেন। এজন্য নিজেদের পরিচর্যার তাগিদটা অনুভব করছে এসব কিশোররা।

আরও পড়ুন .. ..

নিখোঁজের ২২ দিন পর সেই পুলিশ কনস্টেবলের খোঁজ মিলেছে পঞ্চগড়ে, তবে জীবিত নয়

কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে এসেছিলেন সাবেক ফুটবল খেলোয়াড় ও কোচ রবিউল করিম লিয়ন। তিনি স্থানীয় গৌরিপুর ফুটবল একাডেমির কোচের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, আমার একাডেমিতে মাঠের সংকট আছে। এছাড়া আধুনিক সুযোগ সুবিধাও কম। কিন্তু শামস্-উল-হুদা ফুটবল একাডেমিতে আধুনিক ফুটবলের সকল সুযোগ সুবিধা আছে। তাই ১৫ জন ফুটবলারকে নিয়ে ট্রায়ালে এসেছি। যদি দুই একজন ফুটবলার সুযোগ পায় তাহলে তাদের জীবন বদলে যাবে।
খুলনার ডুমুরিয়া থেকে ছেলে সামিউল বশিরকে নিয়ে এসেছেন অটো রিক্সা চালক মনিরুল ইসলাম। ছেলেকে দক্ষ ফুটবলার তৈরির স্বপ্ন দেখেন মনিরুল। কিন্তু আর্থিক টানাপোড়নে সেই স্বপ্ন থমকে যাওয়ার অবস্থা তার। শামস্-উল-হুদা একাডেমিতে ভর্তির সুযোগ পেলে একাডেমি শিক্ষাসহ ফুটবল অনুশীলনের সকল সুযোগ-সুবিধা ফ্রিতে পাওয়া যাবে বলে তিনি ছেলের ট্রায়াল দিতে নিয়ে এসেছেন।

সামিউল বশির বলেন, বাবার খুব ইচ্ছা; আমি ফুটবলার হই। ফুটবলার হয়ে বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। মাগুরা সদরের লক্ষীপুর থেকে ট্রায়ালে অংশ নিতে এসেছেন নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আবু হুরাইরা। রাইট উইংয়ে খেলা হুরাইরা প্রিয় ফুটবলার আর্জেন্টিনার ডি মারিয়া। তিনি বলেন, শামস্-উল-হুদা ফুটবল একাডেমিতে ভালো প্রশিক্ষণ হয়। এখানের অনেক খেলোয়াড় বর্তমানে দেশের শীর্ষ পর্যায়ে ফুটবল খেলে। তাই তিনি এসেছেন ট্রায়ালে অংশ নিতে।

বাছাই কার্যক্রমে গোলকিপার কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার আরিফুর রহমান পান্নু। তিনি বলেন, আমরা ফুটবলারদের প্রাথমিক বেসিকটা দেখছি। বেসিক থাকলে তাদেরকে গড়ে নেয়া যায়। একাডেমির প্রধান কোচ মারুফুল হক বলেন, আমরা খেলোয়াড়দের টেকনিক্যাল, ট্যাকটিক্যাল ও ফিজিক্যালের উপর মার্ক করছি। তবে এবছর অনেক প্রতিভাবান ফুটবলার দেখছি। গত কয়েকবছর এমনটা দেখা যায়নি। যারা প্রশিক্ষিত কোচের কাছ থেকে ফুটবলের জ্ঞান নিয়েছেন। এতে বোঝা যাচ্ছে রুট লেভেলে ফুটবল ছড়িয়ে পড়ছে।

শামস-উল-হুদা ফুটবল একাডেমি পরিচালক শামস উল বারি শিমুল বলেন, ‘দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রতিভাবান ফুটবলারদের খুঁজে বের করে আধুনিক ও মানসম্মত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলোয়াড় তৈরি করায় এই একাডেমির মূল লক্ষ্য। বয়সভিত্তিক বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে খেলোয়াড়দের শারীরিক সক্ষমতা, টেকনিক, গতি ও মাঠে পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে যাচাই করা হচ্ছে। দুই দিনব্যাপি ভর্তি ক্যাম্পে আবাসিক ও অনাবাসিক মিলে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী সুযোগ পাবেন।

Share.
Exit mobile version