বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর শহরের রেলগেট রায়পাড়াস্থ মসজিদ মাদ্রাসা পাড়া। পাড়াটির শান্তিশৃঙ্খলা কমিটির অফিস ঘেঁসা গলি ধরে একটু এগিয়ে গেলেই দেখা যাবে কাঠের দেয়ালের দুই কক্ষবিশিষ্ট দোচালা বিশিষ্ট ঘর। বাড়িটির ছোট্ট উঠান সেঁতসেঁতে। উঠানে পানি আর কাঁদা। রাস্তা থেকে বাড়ির বারান্দাতে ঢুকতে কয়েকটি ইট বিছানো। সেই ইট বিছানো পথেই বাড়িটির উঠানে প্রবেশ করতেই এক কোণে বসে বিলাপ করতে দেখা যায় ছেলে হারানো মা শাহিনুর বেগমের। এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছেলে রিফাত আহমেদ রিয়াদকে (১৭) হারিয়ে শোকে কাতর তিনি। হতদরিদ্র পরিবারের এই ছেলেটির স্বপ্ন ছিলো পুলিশের চাকরি। কিন্তু চাকরির অধিকার আদায়ের যুদ্ধে গিয়ে আজ না ফেরার দেশে সে। পরিবারের সদস্যরা জানান, গেল ৫ আগস্ট বিজয় মিছিল থেকে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মালিকানাধীন পাঁচ তারকা হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে পুড়ে মারা যায় ২৫ জন। সেই ২৫ জনের একজন রিয়াদ। রিয়াদের বাবা কাবিল শেখ শহরের একটি পার্কে চাকুরি করেন। আর তার বড়ভাই হৃদয় শেখ দিনমজুর। হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান হৃদয়ের স্বপ্ন ছিলো উচ্চ শিক্ষা শেষে পুলিশের চাকুরি করার। তার পর এই ভাংচুরা জীর্ণ বাড়িটি ভেঙ্গে পাকা নতুন বাড়ি বানানোর। কিন্তু পুলিশে যোগ দেয়ার স্বপ্ন রিয়াদের ধুলিসাৎ হয়েছে ক্ষোভের আগুনে।
রিয়াদের বাড়িতে দেখা গেছে বিষাদের ছাঁয়া। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ছেলের সম্পর্কে জানতে চাইতেই গুমরে কেঁদে উঠেন মা শাহিনুর বেগম। এর পর তার হাতে থাকা টাচ ফোনে ছেলের ছবির উপরে হাত রেখে বিলাপ করতে থাকেন হতভাগা মা। তিনি ভাবতেই পারেনি বিজয় মিছিলে গিয়ে আর ফিরবেনা তার কলিজার টুকরো সন্তান।
কান্না জড়িত কন্ঠে তিনি বলতে লাগলেন, ‘ওই দিন বিকালে আমার ছেলেটা বলে আজ আমাদের বিজয়। মা আমি বিজয় মিছিল যাচ্ছি। তারে নিষেধ করলে সে বললো, আমি ছাত্র। এতদিন কষ্ট করার পর একটু আনন্দ করবো, নিষেধ করো না। তার পর আনন্দ করতে করতে চলে গেল বিজয় মিছিলে। তার পর আমার ছেলেটা আর ফিরলো না। তিনি জানান, আমার ছেলে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিলো। পরীক্ষা দিতে দিতে আমারে বলে মা, আমি কিন্তু পুলিশে চাকরি করবো। এতো ইচ্ছা ছিলো, কোথাও গেলে পুলিশের সাথে দেখা হলে তাদের সঙ্গে ছবি তুলে এসে আমারে দেখাতো। কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে আর আসলো না। বিজয় মিছিলটা আমার ছেলেটারে শেষ করে দিলো! আমার বুক থেকে চলে গেলো। আল্লাহ আমার সন্তানরে কেন নিয়ে গেইল্যা। বিজয়ের খুশিতে সে চলে গেলো, তারে নিয়েও গেল।’
পাশেই একটা ইটের পরে হাটুভাজ করে বসে ছিলেন রিয়াদের বড়ভাই হৃদয় শেখ। তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিন আমি শুনি, জাবিরে আগুন লেগেছে। তার পর আমিও যাই আগুন নেভানোর জন্য। আমার যাওয়ার আগে চলে যায় হৃদয়ও। যেয়ে দেখি ভিতরে কয়েকজন আগুন দিচ্ছে। তাদেরকে আমি বলি, আগুন দিয়েন না উপরে লোক আছে। হঠাৎ করেই একজন এসে পেট্রোল দিয়ে ধরিয়ে দিচ্ছে বিভিন্ন জিনিস। তার ভাষ্য আমার ভাই হোটেলের ভিতরে মূলত প্রবেশ করে তার কিছু বন্ধুদের জীবন বাঁচাতে। কয়েক জনকে বাঁচিয়েও ছিলো শুনেছি। কিন্তু আগুন যখন বেশি ছড়িয়ে যায়, তখন আর হৃদয় বের হতে পারেনি।
তিনি জানান, প্রথমে থেকেই আন্দোলনের সাথে ছিলো রিয়াদ। নানা স্বপ্ন ছিলো। পরিবারের কেউ লেখাপড়া জানে না। পড়াশোনা শেষ করে চাকুরি করবে বলে আমাদের বলতো। বাড়ির এই অবস্থা। কোনরকম থেকে খেয়ে দিন পার করি আমরা। আমার ভাইডা বলতো কয়েকটা বছর কষ্ট কর আমি পুলিশে চাকুরি করে তোদের ভালো বাড়ি বানায়ে দিবো। কিন্তু আগুনে আমার ভাই ও আমাদের পরিবারের স্বপ্ন পুঁড়ে ছাঁই করে দিলো।’
এদিকে যশোরে প্রথম থেকেই শান্তিপূর্ণভাবেই চলছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কিন্তু ৫ আগস্ট বিজয় উল্লাস থেকে বিষাদের আগুনে ছাই হয়েছে পঁচিশটি স্বপ্ন। কেউ ভাবতে পারেননি বিজয় মিছিলে গিয়ে আর ফিরবেনা তার কলিজার টুকরো সন্তানেরা। এখন ছবির ওপর হাত রেখে বিলাপ করছেন রিয়াদদের মতো হতভাগা মা-বাবা। একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিজয়ের আনন্দের বড় অংশই ম্লান হয় যশোরবাসীর। জাবিরে আগুনে পুড়ে মারা যান ইন্দোনেশিয়ান এক নাগরিকসহ ২৫ জন। যার মধ্যে আন্দোলনকারী রয়েছেন ৪ জন। এছাড়া আহত হয়েছেন শতাধিক।
শিরোনাম:
- গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে জেকে বসেছে শীত
- পুনশ্চ’র ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত
- শীতে বাড়ছে রোগীর চাপ নাজুক চিকিৎসা সেবা
- মাগুরায় পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্স অনুষ্ঠিত
- যশোরে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষায় সভা
- সাজা শেষে দেশে ফিরলেন ২ ভারতীয়
- শালিখার চিকিৎসা নিতে আসা অজ্ঞাত বৃদ্ধার মরদেহ উদ্ধার
- বিশ্ব ইজতেমায় হামলার প্রতিবাদে যশোরে বিক্ষোভ