নড়াইল প্রতিবেদক

নড়াইল জেলা যুবলীগের নেতাকর্মীরা দীর্ঘ ২৯ বছর পর সম্মেলনের স্বাদ পেতে যাচ্ছেন। বহুল প্রতীক্ষিত এ সম্মেলন ঘিরে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। এদিকে শীর্ষ পদপ্রত্যাশীরাও চালাচ্ছেন নানামুখি তৎপরতা। এ নিয়ে জেলা যুবলীগের রাজনীতিতে বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আগাম পদক্ষেপ না নিলে সম্মেলন ঘিরে সংঘাতের শঙ্কাও রয়েছে অনেকের মধ্যে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জেলা যুবলীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৫ সালের অক্টোবর। এরপর কেন্দ্র ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটির অধীনেই কেটেছে প্রায় তিন দশক। সম্মেলন না হওয়ায় দক্ষ ও নিবেদিত কর্মীদের নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেতৃত্বে আসার পথ রুদ্ধ ছিল দীর্ঘ সময়। হতাশায় সংগঠন ছেড়েছেন অনেকে, স্থবিরতা এসেছে সাংগঠনিক কার্যক্রমেও। তবে সম্মেলনের খবরে নতুন করে প্রাণ ফিরেছে নেতাকর্মীদের মধ্যে।

জেলা যুবলীগ সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে সম্মেলন হলেও নতুন কমিটি হয়নি। ওই সম্মেলনের ১০ বছর পর ২০০৫ সালে কেন্দ্র থেকে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটিতে পার হয়েছে ১৩ বছর। ২০১৮ সালে মো. ওয়াহিদুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে কেন্দ্র থেকে ২১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। ৯০ দিনের মধ্যে ওই কমিটিকে সম্মেলন আয়োজনের নির্দেশ দেয়া হলেও তা হয়নি। ২০১৩ সালে ওয়াহিদুজ্জামানকে অব্যাহতি দেয়া হলেও সেই আহ্বায়ক কমিটি আজও বহাল।

এর মধ্যে ২০২২ সালের জানুয়ারি একবার নড়াইল জেলা যুবলীগের নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় যুবলীগ। সংগ্রহ করা হয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত। এরপর সেই উদ্যোগও অনেকটাই স্তিমিত হয়ে পড়ে।

ওই সময় সভাপতি পদে নয়জন এবং সাধারণ সম্পাদক হতে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছিলেন দশজন। সভাপতি পদপ্রার্থী ছিলেনÑ জেলা যুবলীগের বর্তমান কমিটির তিন যুগ্ম আহ্বায়ক ফরহাদ হোসেন, গাউসুল আজম মাসুম, মো. মাহফুজুর রহমান এবং সদস্য অ্যাডভোকেট শরিফুল ইসলাম নান্তু ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোস্তফা কামরুজ্জামান কামাল। সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীরা হলেনÑ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা ও সৌমেন বসু, নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক ভিপি জাহাঙ্গীর হোসেন ইকবাল ও কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি আবু সুফিয়ান বাহার, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তোফায়েল মাহমুদ তুফান এবং সদর উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মীনা মরফিদুল হক শিল্পী।

২৮ মে অনুষ্ঠেয় সম্মেলন ঘিরেও মাঠে তৎপর রয়েছেন এই ১৯ প্রার্থী। নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে স্থানীয় দুই সংসদ সদস্য এবং জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সমর্থন পেতে তোড়জোড় চালাচ্ছেন তারা।

এদিকে সম্মেলন ঘিরে জেলা যুবলীগের নেতাকর্মীরা দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। একাধিক নেতাকর্মী জানিয়েছেন, সম্মেলন উপলক্ষে উপকমিটি গঠনের জন্য সভা করতে গিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। সম্মেলনস্থলে নিজেদের লোকসমাগম দেখাতে মঞ্চ ও মাঠ দখলে নেয়ার লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে দুইপক্ষের লোকজন। এর জের ধরে সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না কেউ।

নড়াইল জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলু বলেন, দীর্ঘকাল সম্মেলন না হওয়ায় যুবলীগ অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে। সময় নিয়ে সম্মেলন করা গেলে জমজমাট হতে পারত। কিন্তু অল্প সময়ের নোটিসে উপজেলা নির্বাচনের পরপরই সম্মেলনের আয়োজন করা হচ্ছে। এতে অনেকটা এলোমেলো সম্মেলন হচ্ছে। কারণ ভোটের মাঠে বিভিন্নজন বিভিন্ন পক্ষে ছিলেন। যুবলীগের সম্মেলনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

সম্মেলন ঘিরে যুবলীগে গ্রুপিংয়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে কিছু বলব না; তবে শুধু গ্রুপিং করলেই হবে না। যারা ১৫-২০ বছর ধরে যুবলীগ করেছেন, যারা দলের দুর্দিনে মাঠে ছিলেন এবং আছেন- এসব পরীক্ষিত নেতাদের নিয়ে কমিটি করতে হবে।

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Home
News
Notification
Search
Exit mobile version