বাংলার ভোর প্রতিবেদক
আওয়ামী পন্থী আইনজীবীদের প্রার্থী ছাড়াই যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন আজ। এদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। এবারের নির্বাচনে ৫৩৬ জন ভোটার তাদের ভিটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সমিতি চত্বরে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। তিনটি রাজনৈতিক ধারার প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ মোট ২২ জন প্রার্থী ১৩টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিপুল সংখ্যক আওয়ামী সমর্থিত ভোটার থাকলেও প্যানেল দিতে পারেনি। আওয়ামী সমথিত ভোটব্যাংক জয় পরাজয়ের নিয়ামক হিসাবে কাজ করবে। আওয়ামী সমর্থিত ভোটাররা যে প্যানেলের দিকে সমর্থন দিবেন তারাই জয়ের বন্দরে নোঙর করবেন বলে মনে করছেন ভোটারা।
জানা যায়, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে সামনে রেখে সমিতি চত্বরে প্রার্থীদের ব্যানার, পোস্টার, লিফলেট ও ব্যক্তিগত যোগাযোগে রীতিমতো উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে কে এগিয়ে, এ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা। তবে, যোগ্য প্রার্থীদের হাতেই দেওয়া হবে নতুন নেতৃত্ব এমনটি দাবি করছেন সাধারণ আইনজীবীরা। তবে, প্রতিবছরই বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্রার্থী ও সমর্থকরা মাঠে থাকলেও এবার তারা অনেকটা চুপচাপ রয়েছেন। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের শক্তিশালী প্রার্থীরা যখন মাঠ কাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে, ঠিক তখনই জামায়াত সমর্থিত প্যানেলে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন বিএনপি ঘরনার আবু মোর্তজা। তৈরি হয়েছে লতিফ-ছোট ঐক্য পরিষদ। নির্বাচনের দুই দিন আগে এ প্যানেল ঘোষণা করে মাঠ চষতে শুরু করেছেন তারা। শুধু তাই নয়, বামপন্থি সংগঠন গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির দুইজন প্রার্থী যুক্ত হয়েছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামে। সব মিলিয়ে নির্বাচনে মোড় ঘুরেছে বলে দাবি করছেন সাধারণ আইনজীবীরা। এদিকে, আইনজীবীরা বলছেন, দুইটিই শক্তিশালী প্যানেল। সভাপতি পদে দুই প্যানেলের দুই প্রার্থী থাকলেও সাধারণ সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন কাজী রেফাত রেজওয়ান সেতু। সেক্ষেত্রে সাধারণ সম্পাদক পদে হবে ত্রিমুখী লড়াই।
যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেরুল হক সাবুর নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের প্যানেলটি প্রথমে ১১টি পদে প্রার্থী দেয়। পরে বাম গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে দুইজন প্রার্থী যোগ দেন। তারা হলেন, সহসভাপতি পদে বাসুদেব বিশ্বাস ও সহকারী সম্পাদক পদে আশরাফুল আলম। এক্ষেত্রে পূর্ণ প্যানেল হয়ে আরও শক্তিশালী হয় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের এ প্যানেল।
এদিকে, জামায়াত সমর্থিত লইয়ার্স কাউন্সিলের ঐক্য পরিষদ প্রথমে আটটি পদে প্রার্থী দিলেও পরবর্তীতে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আ ক ম মনিরুল ইসলাম ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। শেষমেশ চমক হিসেবে সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির সমর্থিত সমিতির বহিস্কৃত আইনজীবী আবু মোর্তজা ছোটকে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী করে নতুন প্যানেল ঘোষণা করে লতিফ-ছোট ঐক্য পরিষদ। এতে করে নির্বাচনের মোড় ঘুরে যায়। এছাড়া, সাধারণ সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ব্যারিষ্টার কাজী রেফাত রেজওয়ান সেতু। তিনি প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
ভোটাররা বলছেন, এবারের নির্বাচনের মূল আকর্ষণ সাধারণ সম্পাদক পদ। জাতীয়বাদী আইনজীবীর থেকে নির্বাচিত হওয়া বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু মোর্তজা ছোট জনপ্রিয় আইনজীবী নেতা।
এরআগেও একাধিকবার তারা একই পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছেন। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে কেউ হেরেছেন কেউ জিতেছেন। বিএনপিপন্থী আইনজীবী ফোরাম থেকে বহিস্কৃত হলেও আবু মোর্তজার রয়েছে নিজস্ব ভোট ব্যাংক। এরমধ্যে শেষ সময়ে যোগ দিয়েছেন জামাত সমার্থিত প্যানেলে। নিজের ভোট ব্যাংকের সাথে জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীদের সমর্থনে অনেকটা এগিয়ে তিনি।
অন্যদিকে, সেক্রেটারি আরেক তরুণ আইনজীবী ব্যারিস্টার কাজী রেফাত রেজওয়ান সেতুও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উঠে এসেছেন। তার বাবাও সাবেক সভাপতি আব্দুস শহীদ লাল সমিতির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করায় পারিবারিকভাবে তারও একটি ভোটব্যাংক রয়েছে। আইনজীবীরা বলছেন, সেতুর বাবা মুক্তিযুদ্ধের মতদর্শে হওয়ায় আওয়ামী সমর্থিত ভোটাররা রয়েছে তার পাশে। ফলে পদটি নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা দেখা যাবে। এছাড়া সভাপতি পদেও বিএনপি ও জামায়াতপন্থী প্যানেলের মধ্যে কঠিন লড়াই হবে বলে মনে করছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা।
বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত আইনজীবী ও বারের সাবেক সভাপতি শরীফ নূর মোহাম্মদ আলী রেজা বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে নেতৃত্ব পর্যায়ে কেউ নেই। সংগঠনের কোন কার্যক্রম নেই। সেই কারণে নির্বাচনে কেউ অংশ বা প্যানেল দিতে পারেনি। বারের বড় একটি অংশ বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের দাবি করে তিনি বলেন, আমাদের ভোটাররা যে যার পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করবে। কোন দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়নি। যে চেতনার প্যানেল থাকুক না কেন; আমাদের ভোটারা যে প্যানেলে সমর্থন দিবে তারাই বিজয়ী হবে এটা সত্য। যে প্রার্থী যে যার কৌশল অবলম্বন করবে; তার সমর্থন বেশি পাবে।’ এ বিষয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোহসীন আলী জানান, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পথে।
শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। দুপুর ১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত জুমার নামাজের জন্য বিরতি থাকবে। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৫৩৬ জন।
