বিবি প্রতিবেদক
পাঁচদিন বন্ধ থাকার পর আগুনে পোড়ার ক্ষত নিয়ে ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি আবারও চালু হয়েছে। রাজধানীর গোপীবাগে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর ছিল ট্রেনটির চলাচল বন্ধ ছিল। গতকাল দুপুর একটার দিকে বেনাপোল থেকে ১০টি বগি নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছাড়ে ট্রেনটি। ট্রেনটি চালু হওয়ায় একদিকে যাত্রীদের মাঝে যেমন স্বস্তি ফিরেছে, অন্যদিকে শঙ্কিতও তারা।
যাত্রীরা জানান, নিরাপদ ও আরামদায়ক রেলপথে হরতাল-অবরোধে উৎকণ্ঠায় থাকতে হয়। নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত তারা। আগামীতে যাতে এমন নাশকতা না ঘটে, সে ব্যাপারে নিরাপত্তা বাড়াতে হবে। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছে রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা-বেনাপোল রুটে চলাচলকারী একমাত্র আন্তঃনগর ট্রেন পরিষেবা ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’। ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছিল। গত ৫ জানুয়ারি বেনাপোল এক্সপ্রেস দুপুর ১টায় বেনাপোল থেকে ১৫৪ জন যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যায় ঢাকার উদ্দেশ্যে। এদের মধ্যে অর্ধশতাধিক ছিল ফেরত পাসপোর্ট যাত্রী। ট্রেনটি যাত্রাপথে ১১টি স্টেশনে বিরতি করে এবং সেসব স্টেশন থেকেও যাত্রী নিয়েছিল। কমলাপুর পৌঁছানোর আগেই গোপীবাগ নামক স্থানে হঠাৎ আগুনে পুড়ে যায় রেলের চারটি কোচ। দগ্ধ হয়ে মারা যায় শিশুসহ পাঁচজন। এরপর থেকে নিরাপত্তাজনিত কারণে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের পক্ষ থেকে বিশেষ সিদ্ধান্ত নিয়ে বন্ধ রাখা হয় পশ্চিমাঞ্চলের ছয়টি ট্রেন।
গতকাল দুপুর ১টায় যশোরের বেনাপোল থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায় বেনাপোল এক্সপ্রেস। এরপর রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে ট্রেনটি ঢাকা থেকে ফের বেনাপোলের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবে।
যশোর স্টেশন থেকে উঠা তরিকুল ইসলাম নামে এক যাত্রী বলেন, ‘ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের কারণে মানুষ মারা যাওয়ায় কয়েকদিন বন্ধ থাকার পরে আজ আবার ট্রেনটি চালু হয়েছে। এতে খুশি। যশোর থেকে বাসে যেতে মানুষের ভোগান্তি পেতে হয়েছে।’ শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল নামে আরেক যাত্রী বলেন, ‘হরতাল-অবরোধে উৎকণ্ঠায় থাকতে হয়। তারপর ট্রেনে আগুনের ঘটনা শুনে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত তিনি। এই নোংরা রাজনীতি বন্ধ করার আহ্বান জানান তিনি। তহমিনা খাতুন নামে এক নারী যাত্রী বলেন, ‘সাধারণত আমরা বাস প্রাইভেটের চেয়ে ট্রেন যাতায়াত আরমদায়ক ও নিরাপদ মনে করি। কিন্তু বর্তমান সময়ে ট্রেনেও নাশকতা হচ্ছে। মানুষ মারা যাচ্ছে। এতে আমাদের জনমনে আতংক কাজ করছে। ট্রেনে আরো নিরাপত্তা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন এই যাত্রী।
ট্রেনটির টিটিই হাসান মাহমুদ বলেন, ‘এমনিতে ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে অহরহ। যাত্রীরা আহত হন। এর মধ্যে নাশকতার চেষ্টা আতঙ্ক বাড়িয়েছে। স্টেশন ও ট্রেনে নিরাপত্তা বাড়ানো দরকার। রেললাইন কিংবা স্টেশনের নিরাপত্তায় নিয়োজিতদের আরও সতর্ক হতে হবে।’
বেনাপোল আমদানি ও রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, ‘প্রতিবছর বেনাপোল বন্দর হয়ে প্রায় ১৮ লাখ পাসপোর্টধারী যাত্রী দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত করে। যার বড় একটি অংশ নিরাপদ যাত্রায় বেনাপোল এক্সপ্রেসে চলাচল করে। বুধবার ছাড়া সপ্তাহে ছয়দিন বেনাপোল থেকে যাত্রী নিয়ে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা যায় বেনাপোল এক্সপ্রেস। এটি দুই দেশে মধ্যে যাতায়াতকারী মানুষের নিরাপদ যাত্রায় সেতু বন্ধন তৈরি করেছে। তিনি বলেন, দু’ দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণে ভ্রমণ সহজ করতে প্রধানমন্ত্রী বেনাপোল এক্সপ্রেস উপহার দিয়েছিল। নাশকতা করেছে তাদের শাস্তি দাবি করছি।
বেনাপোল রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির এটিএসআই বিল্লাল হোসেন জানান, রেল নাশকতামূলক ঘটনা এড়াতে বেনাপোল স্টেশনে যাত্রী ও রেলের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। যাত্রাপথে সন্ধেহ হলে তল্লাশি করার সিন্ধান্ত হয়েছে। বেনাপোল আন্তর্জাতিক রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার সাইদুর রহমান জানান, ‘পাঁচ দিন পর রেল বেনাপোল এক্সপ্রেস আবারও যাত্রী সেবা শুরু করেছে। পুড়ে যাওয়া বগি সৈয়দপুর ওয়ার্কশপে রাখা হয়েছে। ১৪৯ জন যাত্রী নিয়ে নতুন দশটি বগি দিয়ে চলাচল শুরু করছে বেনাপোল এক্সপ্রেস।’
প্রসঙ্গত, গত বছর ২ নভেম্বর থেকে পদ্মা সেতু হয়ে বেনাপোল এক্সপ্রেস (৭৯৫) নতুন রুটে যাত্রা শুরু করে। ট্রেনটি বেনাপোল ছাড়ে দুপুর ১টায় এবং ঢাকা পৌঁছানোর সময় রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে। অন্যদিকে ট্রেনটি ঢাকা ছাড়ে রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে এবং বেনাপোল পৌঁছায় সকাল ৭টা ২০ মিনিটে। বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি উভয় পথে ঝিকরগাছা, যশোর, মোবারকগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, দর্শনা হল্ট, চুয়াডাঙ্গা, পোড়াদহ জংশন, কুষ্টিয়া কোর্ট, রাজবাড়ী, ফরিদপুর এবং ভাঙ্গা জংশন স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেয়।

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Home
News
Notification
Search
Exit mobile version