বাংলার ভোর প্রতিবেদক:
কাঠফাটা চৈত্রের ছদ্মবেশে আষাঢ়েও পুড়ছিলো যশোর। তীব্র সেই তাপমাত্রা কিছুটা হলেও কমিয়েছে কাক্সিক্ষত বৃষ্টিপাত। এতে কিছুটা স্বস্তি পেলো মানুষসহ প্রাণিকূল। দীর্ঘ খরতাপের মধ্যে বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা ৪০ দিকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে ফিরে পায় স্বস্তি। এ সময় বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত এবং হালকা দমকা বাতাসও বয়ে যায়। ১১ মিলিমিটারের বৃষ্টিতে শহরের বেশ কিছু সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। পথ চলতে গিয়ে অসুবিধায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ। তবে এরপরও সবার চোখেমুখে ছিলো স্বস্তি। অনেকেই স্বস্তির বৃষ্টিতে ভিজেছেন।
আষাঢ় শুরু হওয়ার পর থেকে বৃষ্টির অপেক্ষায় ছিলো মানুষ। মাঝে দু’একদিন ছিটে ফোটা বৃষ্টি হলেও কাঙ্খিত বৃষ্টির প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। সর্বশেষ গত বুধবার সকাল থেকেই মেঘ ও রোদের লুকোচুরি খেলা চলছিল। এ কারণে যশোরের কোথাও কোথাও ছিটেফোঁটা বৃষ্টি হলেও সেটা কোন কাজে আসেনি। এতে মানুষের অস্বস্তি আরো বেড়ে যায়। অবশেষে এই তীব্র গরমে ঝরেছে স্বস্তির বৃষ্টি। তবে স্বস্তির এই বৃষ্টিতে দুর্ভোগে পড়েছে বাইরে থাকা মানুষজন।
যশোর শহরের ফুটপাতের কয়েকজন দোকানদারের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, বৃষ্টিতে সাময়িক একটু ভোগান্তিতে পড়েছি। তবে স্বস্তির বৃষ্টি ও হিমেল বাতাসে সকল ভোগান্তি ধুয়েমুছে দিয়েছে। প্রায় দুই মাস ধরে প্রচণ্ড গরমে আমাদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। এই বৃষ্টিতে একটু শান্তি পাচ্ছি। সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তা নয়, যেন কাদা পানির ডোবায় পরিণত হয়েছে যশোর শহরের অনেক সড়ক। আবার কোথাও কাদা পানির সঙ্গে আবর্জনায় ভরে গেছে। ছোট-বড় খানাখন্দে বেহাল দশায় পড়েছে শহরবাসী।
সরেজমিন দেখা যায়, শহরের অন্তত ১৫টি সড়কে পানি জমে আছে। খড়কি এলাকার শাহ আবদুল করিম সড়ক, শহরের পিটিআই, নাজির শংকরপুর, খড়কি রূপকথা মোড় থেকে রেললাইন, বেজপাড়া চিরুনিকল, মিশনপাড়া, আবরপুর ক্যান্টনমেন্ট, বিমানবন্দর, ষষ্ঠীতলাপাড়ার বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এই তিন দিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সাগরে দমকা হাওয়ার সতর্কতাও দেওয়া হয়েছে। সমুদ্রবন্দরগুলোতে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরের ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ সময় চট্টগ্রাম বিভাগে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে এবং দেশের অন্যত্র তা সামান্য হ্রাস পেতে পারে।
শুক্রবার (২১ জুন) সকাল ৯টা থেকে পরের ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ সময় খুলনা বিভাগে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং দেশের অন্যত্র তা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
শনিবার (২২ জুন) সকাল ৯টা থেকে পরের ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। এ সময় সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। আগামী পাঁচ দিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়া বিভাগ আরও জানায়, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চরণশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ জন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ৩ নম্বর সংকেত বলতে বোঝায়, বন্দর ও বন্দরে নোঙর করা জাহাজগুলো দুর্যোগকবলিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বন্দরে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে এবং ঘূর্ণি বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।