বাংলার ভোর প্রতিবেদক
‘আমার জীবনযুদ্ধে এই সেলাই মেশিনটি হবে একটি অবলম্বন। এখন মনে অনেক সাহস পাচ্ছি। আসাদ স্মৃতি ইন্সটিটিউটের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই। এটা শুধু সেলাই মেশিন নয়; আমার ভাগ্যের চাকা। পাঁচ মাস ট্রেনিং, কাজ শুরু করতে টাকাও দিয়েছে।’ নতুন একটি সেলাই মেশিন পেয়ে এভাবে অনুভূতি প্রকাশ করছিলেন যশোর শহরের নলডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা মেঘলা খাতুন। স্বামী ও চার বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে তার সংসার। শহরের আরএন রোডের ওয়ার্কশপে লেবারের কাজ করেন মেঘলার স্বামী বেলাল হোসেন। দিনমজুরি করে যে টাকা পান তাতে কোন রকম সংসার চলে তাদের। সেলাই মেশিনের সঙ্গে আর্থিক সহায়তা পেয়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন মেঘলা। শুধু মেঘলা নয়; এদিন তার মতো হতদরিদ্র অসহায় ৩০ নারী পেয়েছে সেলাই মেশিন ও আর্থিক সহায়তা। বুধবার বিকেলে যশোর শহরের আরএন রোডস্থ নতুন বাজার মাঠে এসব সংগ্রামী নারীদের মাঝে সেলাই মেশিন ও আর্থিক সহায়তার চেক তুলে দেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। নলডাঙ্গাস্থ বহুমাত্রিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আসাদ স্মৃতি ইন্সটিটিউটের ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ৬ষ্ঠ ব্যাচের দর্জি প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে এই সেলাই মেশিন বিতরণ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ‘এই সংগঠন যে কাজ করছে সেটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। যেখানে রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যর্থ হয় তখন সমাজ থেকে এসব কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব নেয়। যে কারণে এই সমাজটা বেঁচে যায়। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে বাংলাদেশের মানুষ নিজেরা সংগ্রাম করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে। এটা করতে গিয়ে সমাজ ও দেশের কল্যাণ হয়েছে। সরকার রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন ঘরে ঘরে নারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করেছে।

বেগম জিয়া শিক্ষার্থীদের অবৈতনিক লেখাপড়ার সুযোগ তৈরি করেছে। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের। বেগম জিয়ার হাত ধরে নতুন বই পেয়েছে বাচ্চারা। যত ধরনের ভাতা চালু হয়েছে সব চালু করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। গত ১৬ বছরে ভাতা যাদের পাওয়ার কথা, ভাতা যাদের প্রয়োজন তারা বঞ্চিত হয়েছে। যে কারণে এমন সংগঠন গড়ে উঠেছে। যশোরে খেলাধুলা প্রসার করতে আগামী নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করলে ক্রীড়াঙ্গনকে সচল করা হবে। প্রত্যেকটা গ্রাম মহল্লায় ক্রীড়াঙ্গন সচল হবে। যুবকরা সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে এবং বাংলাদেশ গঠনে ভূমিকা রাখবে।

আমরা সরকার গঠন করতে পারলে আগামীতে যশোরে পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল কলেজ চালু হবে। আগামীতে যশোরে পূর্ণাঙ্গ করোনারি কেয়ার চালু করব। আমরা নারীদের অধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করব। অস্ত্র মুক্ত ক্যাম্পাস গড়ব। বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসলে দেশের দেড় কোটি মানুষকে চাকরি দেয়া হবে। যারা চাকরি করতে অনাগ্রহী তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে। আমরা তামান্না নুরাদের মত মানুষদের জীবন থেকে অনুপ্রেরণা খুঁজবো। আপনার ইচ্ছা কর্মস্পৃহা, অনুপ্রেরণা থাকলে কোন বাধায় বাঁধা মনে হবে না। তেমনি আপনারা চাইলে আগামীতে সরকার গঠন করতে পারলে যশোরের কোন সমস্যা আমাদের কাছে সমস্যা মনে হবে না।’

যশোর পৌরসভার ৮ নাম্বার ওয়ার্ডের মহল্লা সুরক্ষা কমিটির আহ্বায়ক খান মোহাম্মদ শফিক রতনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন। বক্তব্য রাখেন ‘পা দিয়ে লিখে’ এইচএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া যশোরের অদম্য তামান্না নূরা। রিপন অটোস প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান এজাজ উদ্দিন টিপুর পরিচালনা স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আইয়াজ উদ্দিন রিপন।

প্রসঙ্গত, রিপন অটো প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত একটি সামাজিক সংগঠন আসাদ স্মৃতি ইনস্টিটিউশন। ইনস্টিটিউশন থেকে ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৬ টা ব্যাচে ৫০ জন করে মোট ৮০০ নারীকে কোরআন ও দ্বীন শিক্ষা গ্রহণ করেছে। প্রতিবছর অসহায় হতদরিদ্র মেধাবি ১৪০ জন শিশুকে বার্ষিক এককালীন ভর্তি ফি, ২ সেট স্কুল ড্রেস, ১টা স্কুল ব্যাগ প্রদান করা হয়। ২০১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৩০ জনকে প্রতিমাসে ৫০০ থেকে ২০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত বয়স্ক ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্প করা হয়। এছাড়া এ পর্যন্ত ১৩০ জন নারী উদ্যোক্তাকে উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে সেলাই মেশিন, আর্থিক সহায়তা দিয়ে আত্মনির্ভশীল করা হয়েছে।

Share.
Exit mobile version