# ইসরায়েলি হামলায় ৪৫ ইরানি নারী-শিশু নিহত, দাবি তেহরানের
# ইরানের ৩০ শতাংশ ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার ধ্বংসের দাবি ইসরায়েলের
# ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সংখ্যা দেখে ইসরায়েলিরা হতবাক
# ইরানের সর্বশেষ হামলায় ইসরায়েলে নিহত ৮, আহত প্রায় ৩০০
বাংলার ভোর ডেস্ক
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজের হুমকির কিছুক্ষণের মধ্যেই হামলা ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। বিবিসি জানায়, হামলার আগে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এবং রেডিও দ্রুতই ‘অদৃশ্য হতে যাচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেছিলেন মি. কাৎজ। ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কেরমানশাহে একটি হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। হামলায় হাসপাতালটির একাংশের ছাদ ধসে পড়েছে। এতে কয়েকজন রোগী আহত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধ বলে অভিহিত করেছে।
ইরানের ফারস ও তাসনিম সংবাদ সংস্থার প্রকাশিত একাধিক ভিডিওর বরাত দিয়ে সিএনএন বলেছে, হামলায় কেরমানশাহে ফারাবি হাসপাতালের একটি অংশের ছাদ ধসে পড়েছে। এছাড়া বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ভিডিওচিত্র যাচাই করেছে সিএনএন। তেহরানে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এসমাইল বাঘাঈ অভিযোগ করেন, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে হাসপাতালকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়, বাঘাই বলেন, হাসপাতাল ও আবাসিক এলাকায় হামলা চালানো আন্তর্জাতিক আইনের মারাত্মক লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধ। ইতিহাস বিচার করবে, এই (ইসরায়েল) শাসনের মিত্র ও পক্ষ অবলম্বনকারীদের জন্য চিরস্থায়ী লজ্জা অপেক্ষা করছে।
তবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) সিএনএনকে জানায়, তারা ইরানে কোনো হাসপাতালের ওপর হামলার বিষয়ে অবগত নয়। তাসনিম সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, হাসপাতালটির ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাঙা কাচ ও ছাদ ধসে এই ইউনিটের রোগীরা আহত হয়েছেন।
ইরানের সঙ্গে সব সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করল পাকিস্তান: ইসরায়েল ও ইরানের সংঘাতের মধ্যে প্রতিবেশী ইরানের সঙ্গে সব সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে দিয়েছে পাকিস্তান সরকার। অনির্দিষ্টকালের জন্য সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করার ঘোষণার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন বেলুচিস্তানের কর্মকর্তারা। সোমবার (১৬ জুন) কাদির বখশ পিরকানি নামে বেলুচিস্তান প্রদেশের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, “চাগি, ওয়াশুক, পাঞ্জগুর, কেচ ও গওয়াদার- এই পাঁচটি জেলার সব সীমান্ত সুবিধা স্থগিত করা হয়েছে।চাগি জেলার একটি সীমান্ত চৌকির কর্মকর্তা আতাউল মুনিম বলেন, ইরানে প্রবেশ এখন থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
তবে তিনি এ-ও জানিয়েছেন, সীমান্তে বাণিজ্য কার্যক্রমের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই এবং যেসব পাকিস্তানি নাগরিক ইরান থেকে দেশে ফিরতে চান, তারা সীমান্ত পার হতে পারবেন। আতাউল মুনিম বলেন, “আজ প্রায় ২০০ জন পাকিস্তানি শিক্ষার্থীর ফেরার কথা রয়েছে।
ইসরায়েলি হামলায় ৪৫ ইরানি নারী-শিশু নিহত, দাবি তেহরানের
ইসরায়েলের চার দিনের হামলায় ইরানের অন্তত ৪৫ জন নারী ও শিশু নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে তেহরান।
ইরানের সরকারি মুখপাত্র ফাতেমেহ মোহাজেরানি দেশটির ওপর ইসরায়েলি হামলা নিয়ে সোমবার (১৬ জুন) একটি বিবৃতি দিয়েছেন, যা সরকারি বার্তা সংস্থা আইআরএনএ প্রকাশ করেছে। আলজাজিরা মোহাজেরনির বক্তব্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশের অনুবাদ তুলে ধরেছে, যেখানে সার্বিক পরিস্থিতির সারাংশ উঠে এসেছে। মোহাজেরনি বলেছেন, এই যুদ্ধ আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা তা চাইনি।’
তিনি বলেছেন, সাম্প্রতিক ইসরায়েলি হামলায় ৪৫ জন নারী ও শিশু নিহত হয়েছে এবং আরো ৭৫ জন নারী ও শিশু আহত হয়েছেন। নারী ও শিশুদের লক্ষ্যবস্তু বানানো প্রমাণ করে যে, ইসরায়েল কেবল সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানার যে দাবি করছে, সেটি পুরোপুরি মিথ্যা।
কেরমানশাহ প্রদেশের ফারাবি হাসপাতালের ওপর হামলাকে ইসরায়েলি শাসনব্যবস্থার নির্মমতা ও বর্বরতার প্রতিচ্ছবি বলে মন্তব্য করেন মোহাজেরনি।
তিনি বলেন, জনগণের জন্য মসজিদগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং প্রতিটি প্রদেশে সংকট ব্যবস্থাপনা কক্ষ গঠন করা হয়েছে।
১৯৯৯ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ইসরায়েলের বিচারমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ইয়োসি বেইলিন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু তার সরকারে কট্টর ডানপন্থি ‘উন্মাদদের’ অন্তর্ভুক্ত করে একটি বিশাল ভুল করেছেন।
তিনি আলজাজিরাকে বলেন, ওরা কখনোই সরকারের অংশ হওয়ার মতো ছিল না। ওরা ইসরায়েলি জনমতের একটি ক্ষুদ্র অংশের প্রতিনিধিত্ব করে। এটা অত্যন্ত সমস্যাজনক।’
বেইলিন আরো বলেন, গত কয়েক বছরে নেতানিয়াহু অনেক বড় বড় ভুল করেছেন। সেগুলোর মধ্যে একটি ছিল তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে রাজি করানো।” তবে তিনি এটাও জোর দিয়ে বলেন, “ইরান একটি বাস্তব হুমকি।”
“এক সময় আমরা একে অপরের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিলাম। কিন্তু ১৯৭৯ সালের পর যেকোনো কারণে হোক, আমরা তাদের চোখে শয়তানে পরিণত হলাম; কারণ তারা ইহুদিদের ঘৃণা করে এবং চায় আমরা যেন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাই। তারা আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চায় না। এটা এক ধরনের শত্রুতামূলক মানসিকতা, যা সহ্য করা যায় না। আমরা ইরানের বর্তমান পরিস্থিতি মেনে নিতে পারি না,” বলেন বেইলিন।
ইরানের ৩০ শতাংশ ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার ধ্বংসের দাবি ইসরায়েলের
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি করেছে, ইরানের সঙ্গে চলমান লড়াই চতুর্থ দিনে প্রবেশ করার পর তাদের ৫০টিরও বেশি জেট বিমান ইরানের অন্তত ১২০টি ‘ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার’ ধ্বংস করেছে। ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিনের একটি বিবৃতি ইসরায়েলের টেলিভিশনে প্রচার করা হয়েছে। এতে তিনি বলেছেন, এই সংখ্যা ইরানি সরকারের ‘ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চারের’ এক-তৃতীয়াংশের সমান।
কয়েকদিন ধরে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনাগুলোর ওপর ধারাবাহিক হামলার পর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এখন দাবি করছে, তাদের বিমান পশ্চিম ইরান থেকে তেহরান পর্যন্ত আকাশসীমার ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।
ডেফরিন বলেন, এখন আমরা বলতে পারি, “এখন আমরা তেহরানের সম্পূর্ণ আকাশ দখল করেছি।
শুক্রবার ভোরে ইরানে ব্যাপক হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে বলে অভিযোগ তুলে দেশটির পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় ইসরায়েল। প্রথম দিনের হামলায় ইরানের কয়েকজন সামরিক কমান্ডার ও পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হন। এর জবাবে ইরানও হামলা চালায়। সেই থেকে দুই দেশের মধ্যে হামলা, পাল্টা হামলা চলছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সংখ্যা দেখে ইসরায়েলিরা হতবাক
ইসরায়েল বরাবরই বলে আসছিল তাদের অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে এবং এই ব্যবস্থা বিদেশি আক্রমণ ঠেকাতে কার্যকর। তবে ১৩ জুন শুক্রবার রাত থেকে আজ ১৬ জুন সোমবার পর্যন্ত টানা চারদিন ইরানের পাল্টা আক্রমণে ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শতভাগ কাজ করেনি। ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি শহরের আবাসিক ব্লক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম দ্য লোকাল কলের সম্পাদক মেরন র্যাপোপোর্র্টের মতে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা দেখে ইসরায়েলি জনগণ হতবাক হয়ে গেছে, যা ইসরায়েলের উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়েছে।
রবিবার রাতে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদিও সামরিক বাহিনী এটিকে প্রত্যাশা অনুযায়ী চিত্রিত করার চেষ্টা করছে, কিন্তু ইসরায়েলিরা বেশ অবাক যে, ইরানের এতো ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি ইসরায়েলে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এতো বিশাল।
তিনি আরো বলেন, ইরানের হামলাগুলো কিছু কৌশলগত লক্ষ্যবস্তুতেও সফল হয়েছে। তবে কিছু ঘটনা সম্ভবত জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করেনি ইসরায়েলি সরকার।
তিনি বলেন, আমরা সবকিছু সম্পর্কে জানি না কারণ সেন্সরশিপ বেশ কঠোর। কিন্তু যদি আমরা কিছু জানি তাহলে তা প্রকাশ করার অনুমতি নেই।
র্যাপোপোর্ট আরো জানান, তিনি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর একটি চুক্তিকে সংঘাত থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র সম্ভাব্য উপায় হিসেবে দেখেন।
তিনি বলেন, ইরান আত্মসমর্পণ করবে না, অদূর ভবিষ্যতে তেহরানের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটবে না এবং অবশ্যই ইসরায়েলও আত্মসমর্পণ করবে না। তাই ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চুক্তি ছাড়া আমি অন্য কোনো উপায় দেখছি না। সোমবার টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, ইরানের হামলায় ইসরায়েলে এ পর্যন্ত ২১ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন তিন শতাধিক মানুষ।
ইরানের সর্বশেষ হামলায় ইসরায়েলে নিহত ৮, আহত প্রায় ৩০০
ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে রবিবার রাতে ও সোমবার ভোরে নতুন করে দুই দফায় ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইরান। সর্বশেষ এসব হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮ জনে পৌঁছেছে। এছাড়া আহতের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৩০০ জনে পৌঁছেছে। খবর টাইমস অব ইসরায়েলের।
সোমবার সকালে ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রাতভর ইরান থেকে দেশের উত্তর ও কেন্দ্রস্থলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ফলে অন্তত ২৮৭ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ৩০ বছর বয়সী একজন নারী গুরুতর আহত এবং ১৪ জন মাঝারিভাবে আহত হয়েছেন। বাকিদের বেশিরভাগই হালকা আহত অথবা তীব্র মানসিক আঘাত পেয়েছেন।
ইসরায়েলের জরুরি সেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদম (এমডিএ) জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় হাইফা শহরে তিনজন এবং মধ্য ইসরায়েলে পাঁচজন নিহত হয়েছেন।
যার মানে, চার দিন আগে ইরানের ওপর ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী হামলা শুরু করার পর থেকে তেহরানের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২১ জন নিহত হয়েছেন। সোমবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ হুমকি দিয়ে বলেছেন, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিশোধ হিসেবে তেহরানের বাসিন্দাদের ভুগতে হবে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনির দিকে ইঙ্গিত ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেন, “তেহরানের অহংকারী একনায়ক একজন ভীত খুনি হয়ে উঠেছে, যিনি ইসরায়েলের বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালায় যাতে ইসরায়েলি বাহিনী তার ক্ষমতা ধ্বংসকারী আক্রমণ চালিয়ে যেতে না পারে। কাটজ বলেন, তেহরানের বাসিন্দাদের এর মূল্য দিতে হবে এবং তা খুব শিগরিগই। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এমন মন্তব্য ইরানি বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করার হুমকি বলে মনে করা হচ্ছে।