বাংলার ভোর প্রতিবেদক

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল ও শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমিক ভবনের বঙ্গবন্ধুর নাম ও বঙ্গবন্ধু একাডেমিক গ্যালারির সামনে ছবি ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার, হল প্রভোস্ট, প্রক্টর, রিজেন্ট বোর্ড সদস্য ড. ইকবাল কবির জাহিদসহ উপাচার্যের অনুসারীদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এসব ভাংচুর করে। এছাড়া শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনার উদ্বোধনকৃত বিভিন্ন ভবনের উদ্বোধন ফলকগুলোও ভেঙে দিয়েছে। এ সময় তারা উপাচার্য ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

যবিপ্রবি প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ২০১৭ সালের ২০ মে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) ভাইস চ্যান্সেলর পদে যোগদান করেন। চাকরির প্রথম মেয়াদেই তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ৫৫টি অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে তিনি ২০২১ সালের ১৯ মে ভিসি’র প্রথম মেয়াদ শেষ করেন। একই বছরের ১ জুন অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন দ্বিতীয় মেয়াদে ভিসির দায়িত্ব পান।

অভিযোগ উঠেছে, নানা দুর্নীতির মধ্যে তিনি যবিপ্রবির ১৪টি লিফট স্থাপনে প্রায় ৫ কোটি টাকার অনিয়ম করে আলোচিত হন। তার অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। আর লিফট কাণ্ডে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করেন যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা বাসিন্দা আব্দুল করিম। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) রয়েছে ড. আনোয়ার হোসেনের দুর্নীতির ফাইল। এমন পরিস্থিতির মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেরে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর দেশত্যাগ ও সরকার পতনের পর থেকে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন দেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। কোথাও কোথাও পদত্যাগ করেছেন প্রক্টর, প্রভোস্টসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রায় সবাই।

তবে বহাল থাকায় যবিপ্রবির উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে মাঠে নেমেছেন আন্দোলনকারীরা। মঙ্গলবার দুপুরে তারা ভিসি ও ভিসির অনুসারী হিসেবে পরিচিত ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার, হল প্রভোস্ট, প্রক্টর, রিজেন্ট বোর্ড সদস্য ড. ইকবাল কবির জাহিদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার নাম রয়েছে এমন স্থাপনা ভাংচুর করা হয়েছে।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ উসামাহ বলেন, আমরা আমাদের দেশ থেকে স্বৈরাচার দূর করতে পারলেও আমরা আমাদের ক্যাম্পাস থেকে এখনো পর্যন্ত স্বৈরাচার দূর করতে পারিনি। আমাদের এই ভিসির কাছে কোনো দাবি নাই কারণ এই স্বৈরাচার দালালের কাছে কোনো প্রকার দাবি আমরা রাখতে চাইনা। তাই আমাদের এই আন্দোলনের একটাই মাত্র দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল স্বৈরাচার ভিসি, প্রক্টর, হল প্রভোস্ট, শিক্ষক সমিতি সভাপতিসহ সকল দালালকে পদত্যাগ করতে হবে।

বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ম্যুরাল ভাঙচুরের বিষয়ে ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী সজীব হোসেন বলেন, আমাদের আজকের কর্মসূচি ছিল এই খুনি হাসিনার পরিবারের সকল চিহ্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মুছে দেয়া। আমরা সফলভাবে তা করেছি। তবে আমরা ক্যাম্পাসের কোনো ভবনের ক্ষতি করিনি। আমরা ছাত্রী হলেও প্রবেশ করিনি শুধু বাইরের হাসিনার ম্যুরাল ভাঙ্গা হয়েছে। জিনোম সেন্টার হাসিনার উদ্বোধনী ফলক ভাঙ্গা হয়েছে। জিনোম সেন্টারের ভিতরে কোনো শিক্ষার্থী প্রবেশ করেনি।

এই বিষয়ে জানতে যবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ক্যাম্পাসে ভাংচুর করা হয়েছে শুনেছি। শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানাই, দেশ এখন একটি অস্থির সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সবাই যেনো শান্ত থাকে। ৫ আগস্ট দেশে যে বিপ্লব ঘটেছে তার সুফল যেনো সবাই পায় সেই লক্ষ্যে যেনো সবাই কাজ করে।

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Home
News
Notification
Search
Exit mobile version