বাংলার ভোর প্রতিবেদক
প্রতিবছরের মতো এবারও গরমে হিমশীতল ঠাণ্ডা পানি ও বরফ নিয়ে রোজদারদের পাশে দাঁড়িয়েছে যশোরের আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থা। প্রথম রমজান রোববার বিকেলে যশোর শহরের খড়কিতে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই বিশুদ্ধ হিমশীতল ঠাণ্ডা পানি ও বরফ সরবরাহ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। ২০১৯ সাল থেকে স্বেচ্ছাসেবী এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতি রমজানে যশোর শহরের খড়কি এলাকায় সারা মাসব্যাপি বিনামূল্যে বিশুদ্ধ বরফ শীতল ঠাণ্ডা পানি সরবরাহ করে থাকে।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, প্রতিবছরের ধারাবাহিকতায় এবারের রমজানেও প্রথম রমজান থেকে শুরু হয়েছে এই প্রকল্প। রোববার প্রথম রমযানে খড়কী এলাকার আঞ্জুমানে খালেকিয়া এতিমখানার সামনে, খড়কী মসজিদের ইমামসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা হামিদুল হক শাহীনের উপস্থিতিতে মোনাজাতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে রমজানের এই পানি প্রকল্প।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা হামিদুল হক বলেন, ‘সেই ২০১৯ সাল থেকে অদ্যাবধি আইডিয়ার স্বেচ্ছাসেবকরা এই কাজটি শুধু করেই এমন নয়, বরং এলাকার বহু মানুষ রমজানে এই পানির অপেক্ষা করে। বিশেষত নিম্নবিত্ত মানুষের পরিবারে রেফ্রিজারেটরের আয়োজন না থাকায় এবং মেসে থাকা শিক্ষার্থীবৃন্দ ও দোকানদার, দিনমজুরের কাছে এ প্রকল্প বিশেষ আবেদন সৃষ্টি করে রমজান মাসে। আইডিয়ার স্বেচ্ছাসেবকরা ইফতারের ঠিক পূর্বমুহূর্তে আইডিয়া মোড় থেকে খড়কি পীর বাড়ি ও হাজামপাড়া এলাকা অবধি নির্দিষ্ট সময়ে পানি সরবরাহ করে।’
আইডিয়া বিশুদ্ধ ঠাণ্ডা পানি প্রকল্পের সমন্বয়ক আইডিয়ান স্বেচ্ছাসেবক দীপ্ত সিংহ বলেন, ‘আমি একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী। কিন্তু রোজাদারদের মধ্যে বিশুদ্ধ ঠাণ্ডা পানি বিলিয়ে দেয়ার এই ব্যাপারটি যেন আমার আত্মার সাথে জড়িয়ে গেছে। ছোট শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধ মুরব্বিরাও আমাদের পানির ভ্যান দেখলে বোতল, ঘড়া হাতে ছুটে আসে। পানি নিয়ে তারা তৃপ্তির হাসি দেয় এবং আবারো পরের দিন ইফতারির আগে এই পানির অপেক্ষা করে। এটাই আইডিয়ার প্রাপ্তি। এখানে অনেক রোজাদার আইডিয়ান স্বেচ্ছাসেবী ভ্যান ঠেলে, পানি দিয়ে সাহায্য করছে প্রতিদিন।’
স্বেচ্ছাসেবকরা জানান, এ প্রকল্পের আওতায় শিক্ষার্থীরা সাবমারসিবল থেকে উত্তোলিত বিশুদ্ধ পানি, বিশুদ্ধ বরফ দ্বারা শীতলকরত বিনামূল্যে পূর্ব নির্ধারিত ভিন্ন স্পটে চাহিদা মাফিক সারা রমজান মাসব্যাপি সরবরাহ করে থাকে। আবার কখনো হঠাৎ করে ঠাণ্ডা শরবত নিয়ে বেরিয়ে যায় তারা। পানি নিতে আসা সকলে হঠাৎ শরবত পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে। আইডিয়া বিশুদ্ধ ঠাণ্ডা পানি প্রকল্পের সম্পূর্ণ আয়োজন আইডিয়াই করে থাকে প্রতি বছর।
পানি নিতে আসা খড়কি এলাকার মো. নাসিম বলেন, ‘ফ্রিজ নেই বাসায়। ফলে সারাদিন রোজার পর বিশুদ্ধ ঠাণ্ডা পানি পাওয়া দুর্লভ আমাদের কাছে। কিন্তু আইডিয়া বিগত কয়েক বছর ধরে আমাদের সেই চিন্তা দূর করছে। আমরা অপেক্ষা করি ইফতারের আগে এই পানির জন্য।’
মেসে থাকা শিক্ষার্থী আমেনা বলেন, ‘আমি এম এম কলেজেরই শিক্ষার্থী। অন্তত বিশ রোজার আগে বাসায় যাওয়া হয়না, সেই অব্ধি ঠান্ডা পানির উৎস বলতে এই পানি। আমরা মেসের সবাই অপেক্ষা করি রোজার সময় এই পানি নেয়ার জন্য।’