সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
জলোচ্ছ্বাস বা উচ্চ জোয়ারের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ অন্যান্য প্রাণীদের সুরক্ষায় এবার সুন্দরবনে নির্মাণ করা হচ্ছে ‘বাঘের টিলা’। সুন্দরবনের যেসব স্থানে বাঘের আধিক্য রয়েছে সেসব এলাকায় মাটি দিয়ে উঁচু করে এসব টিলা নির্মাণ করা হচ্ছে। যাতে করে জলোচ্ছ্বাস বা উচ্চ জোয়ারের পানিতে ভেসে যাওয়া থেকে নিজেদেরকে রক্ষা পেতে পারে বন্য প্রাণিকুল।
একই সঙ্গে টিলার পাশে খনন করা হচ্ছে পুকুর। ওই পুকুরকে মিঠাপানির আধার হিসেবে রাখা হবে। যাতে লবণাক্ত বনে প্রাণীরা মিঠাপানি পান করতে পারে।
বন কর্মকর্তারা জানান, বনে থাকার জন্য বাঘ দম্পতি সব সময় উঁচু স্থান বেছে নেয়। বিশেষ করে তাদের প্রজননের সময়ে শুষ্ক ও উঁচু স্থানের প্রয়োজন হয়। এছাড়া মা বাঘ কখনো শাবকের কাছ থেকে দূরে যেতে চায় না। টিলা নির্মিত হলে বাঘের প্রজননের সুবিধা হবে। একই সঙ্গে প্রজনন স্থানের পাশেই মিঠা পানি পান করতে পারবে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সমগ্র সুন্দরবনকে চারটি রেঞ্জে বিভক্ত করেছে বন বিভাগ। প্রত্যেকটি রেঞ্জে ৩টি করে মোট ১২টি বাঘের টিলা নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে নীলকমল অভয়ারণ্য কেন্দ্রে একটি বাঘের টিলার নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হয়েছে।
বন বিভাগ জানায়, সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের সাতক্ষীরা ও খুলনা রেঞ্জের নীলকমল, পাটকোস্ট, ভোমরখালী, পুষ্পকাটি, মান্দারাড়িয়া ও নোটাবেকীতে টিলা নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জের কটকা, কচিখালী, কোকিলমুনি, সুপতি, টিয়ারচর ও দুধমুখীতে টিলা নির্মাণ করা হচ্ছে।
২০২২ সালের ২৩ মার্চ ‘সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছিল পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। যার ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। প্রকল্পটি ২০২৫ সালের মার্চ মাসে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এই প্রকল্পের মূল কাজ হচ্ছে বাঘ ও শিকার করা প্রাণীর জরিপ। ইতোমধ্যে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের সাতক্ষীরা ও খুলনা রেঞ্জের ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ, শিকার করা প্রাণী ও খাল জরিপ সম্পন্ন করা হয়েছে।
বর্তমানে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জে জরিপ চলছে। চলতি বছরের জুলাই মাসে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হবে। এর জন্য ব্যয় হবে ৩ কোটি ২৪ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। বাকি টাকা ব্যয় হবে বাঘ সংরক্ষণের জন্য। বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের মধ্যে ১২টি টিলা নির্মাণ, ৫ কিলোমিটার এলাকায় নাইলনের বেড়া, দুটি বাঘের শরীরে স্যাটেলাইট ট্র্যাকার লাগানো, জিপিএস, বাঘ অজ্ঞানের জন্য ট্রাংকুলাইজিং গান, ক্যামেরা, ভিটিআরটি ও সিপিজি সদস্যদের জন্য পোশাক ক্রয় ও প্রশিক্ষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু কার্যক্রম রয়েছে।
বন বিভাগের তথ্যমতে, ২০১৫ সালে সুন্দরবনে প্রথম ক্যামেরা ট্র্যাপ পদ্ধতিতে বাঘ জরিপ করা হয়। তাতে বাঘের সংখ্যা বলা হয় ১০৬টি। ২০১৮ সালে একই পদ্ধতির জরিপে বাঘের সংখ্যা বলা হয় ১১৪টি।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এবং বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক ডিএফও ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, ২০১৫ ও ২০১৮ সালের পৃথক জরিপে দেখা গেছে সুন্দরবনে ৮ শতাংশ বাঘ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা জরিপের জন্য যেসব ক্যামেরা স্থাপন করেছিলাম তার ৫৫ শতাংশে বাঘের ছবি পাওয়া গেছে।
তিনি আরও জানান, সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ খুব ভালোভাবে চলছে। সাতক্ষীরা ও খুলনা রেঞ্জের বাঘ জরিপের জন্য ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সিপিজি, ভিটিআরটি প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হচ্ছে। পুরো প্রকল্পের কার্যক্রম ভিডিও করা হচ্ছে; যা দিয়ে ভিডিও ডকুমেন্টরি ফিল্ম তৈরি করা হবে। এই ফিল্মটি পরবর্তীকালে সুন্দরবন ও বাঘ রক্ষায় কাজ করা কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্বেচ্ছাসেবকদের কাজে লাগবে।
শিরোনাম:
- একই সঙ্গে দুই কলেজের অধ্যক্ষ জাহিদুলের নজিরবিহীন দুর্নীতি
- অভয়নগরকে হারিয়ে ফাইনালে কালীগঞ্জ
- অফিস সহকারী পদে হেলালের এমপিওভুক্তি নিয়ে লুকোচুরি
- শিক্ষার মান উন্নয়নে ভালো শিক্ষক দরকার
- উপশহর টিচার্স ট্রেনিং কলেজের শিক্ষা সফর অনুষ্ঠিত
- ‘বিজ্ঞানমনস্ক প্রজন্ম গড়তে সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে’
- যশোরে নতুন আঙ্গিকে ব্রাদার্স ফার্নিচার শো রুম উদ্বোধন
- আলুর দাম লাগামহীন ভোক্তার নাভিশ্বাস