♦ ১১টি প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত
♦ ছিলেন এসিড নিক্ষেপসহ কয়েকটি মামলার আসামি
♦ প্রভাব বিস্তারে ভাইপোকে দিয়ে এলাকায় গড়েছেন কিশোর গ্যাং
কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) সংবাদদাতা
এমপি আনার হত্যার মুল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীনের বাংলো বাড়িতে যাতায়াত। ৩য় শ্রেণির কর্মচারী হয়েও ভয়ে থাকেন মোবারকগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ অন্য কর্মকর্তারা। এমপির নাম ভাঙিয়ে ১১টি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে তিনি। অনিয়মই যার কাছে নিয়ম। একসময় পরিচয় দিতেন র্যাবের সোর্স আবার কখনো সেজেছেন সাংবাদিক। হয়েছেন বিপুল সম্পদের মালিক। বলছি উপজেলার ফয়লা গ্রামের বাসিন্দা একসময়ের এসিড নিক্ষেপ ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলার আসামি এমপি আনারের বন্ধু পরিচয়দানকারী গোলাম রসুলের কথা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোলাম রসুল একসময় জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। ২০১২ সালের ১৭ জুন এসিড অপরাধ দমন আইনে মামলা হয় গোলাম রসুলের বিরুদ্ধে। এরপর একই সালের ৬ নভেম্বর আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধে দ্রুত বিচারে তার বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা হয়। কিন্তু এসব মামলায় কিছুই হয়নি তার। ২০১২ সালের ১০ নভেম্বর র্যাব বাবা ওরফে গোলাম রসুলকে আটক করে। সে সময় তার আটকের ছবিও প্রকাশ করে র্যাব। ২০১৪ সালে আনোয়ারুল আজীম আনার এমপি হওয়ার পর দৃশ্যপট পরিবর্তন হতে থাকে।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সালে তার বন্ধু আনোয়ারুল আজীম আনার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত হন গোলাম রসুল। প্রায় ১১টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে জড়িত থাকার কথা জানা গেছে। এর মধ্যে মোবারকগঞ্জ চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের দুইবারের সভাপতি তিনি। বন্ধু এমপির দাপটে কোনবারেই নির্বাচন করা লাগেনি তার। কেউ সভাপতি পদে ভোট করতে চাইলেও তাকে বিভিন্ন অজুহাতে ভোট থেকে দূরে রেখেছেন বিভিন্ন কৌশলে। এছাড়াও মোবারকগঞ্জ চিনিকল সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক তিনি। দীর্ঘ ১৫ বছর তিনি এই পদে বহাল।
দুই বছর পর পর কমিটি করার কথা থাকলেও তিনি এমপির ভয় দেখিয়ে নিজের ইচ্ছামতো পদ বাগিয়ে নিয়ে বসে আছেন। এই সমবায় সমিতিতে রয়েছে দুটি তেলপাম্প, দুটি পুকুর। ভয়ে কেউ এসবের হিসেব নিতে পারে না।
নিজের ইচ্ছায় পরিচালনা হয় প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়াও তিনি মোবারক আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, শহীদ নুর আলী কলেজের সদস্য, কালীগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, কালীগঞ্জ ফুড সেফটির সভাপতি, আলহাজ¦ বদর উদ্দিন ও এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার অটিস্টিক বিদ্যালয়ের সভাপতিও তিনি। এছাড়াও মসজিদ-মাদ্রাসার সভাপতিও এই গোলাম রসুল।
এদিকে নিজ গ্রাম ফয়লায় তার ভাইপো রকিকে দিয়ে গড়ে তুলেছেন কিশোর গ্যাং। কিছুদিন আগেও মদসহ ধরা পড়ে কয়েকজন সদস্য। গোলাম রসুলের অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে তার ভাইপোর নিয়ন্ত্রিত কিশোর গ্যাং দিয়ে হামলা করানোর ঘটনাও ঘটেছে।
চিকিৎসার জন্য কলকাতায় গিয়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। এ সময় হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে নাম আসে পাশর্^বর্তী কোটচাঁদপুর উপজেলার আক্তারুজ্জামান শাহীনের। এলাঙ্গী গ্রামে শাহীনের রয়েছেন আলীশান বাংলো বাড়ি। নির্জন বাড়িতে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো। সেখানেও এমপি আনারের সাথে গিয়েছেন গোলাম রসুল। এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের এমপি আনারের বন্ধু গোলাম রসুল বলেন, আনার ও আক্তারুজ্জামানের সম্পর্ক প্রায় ৩০ বছরের। তাকে নিয়ে এমপি আনার সেই বাংলো বাড়িতে দুইবার গিয়েছেন। গত ৪ মাস আগেও তিনি সেখানে গিয়েছেন।
এ ব্যাপারে এমপি আনারের বন্ধু গোলাম রসুল বলেন, তিনি দুইবার শাহীনের বাংলোতে গিয়েছেন এমপির সাথে। একবার বিয়েতে আর একবার দর্শনা থেকে ফেরার পথে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা এসিড নিক্ষেপ মামলা দিয়েছিল। একবছর পর সেটি মীমাংসা হয়। জনপ্রিয়তার কারণে কেউ তার বিরুদ্ধে সভাপতি পদে মোবারকগঞ্জ চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনে দাঁড়ায় না। আমার নামে সুগার মিলের কোন কিছু লিজ নেই।