বাংলার ভোর প্রতিবেদক:
যশোর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগের উঠেছে সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের বিরুদ্ধে। সোমবার বিকেলে যশোর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী ফাতেমা আনোয়ার। আগামী ২৯ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ফাতেমা আনোয়ার ঘোড়া প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কাজী নাবিল আহমেদ যশোর-৩ (সদর) আসনের টানা তিনবারের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য। অভিযোগের বিষয়ে এমপি কাজী নাবিল আহমেদের মোবাইল ফোনে কল দিলে রিসিভ হয়নি। তবে তার অনুসারী ও চেয়ারম্যান প্রার্থী আনোয়ার হোসেন বিপুল বলেন, ‘ফাতেমা আনোয়ারের বড় পরিচয় তিনি শীর্ষ সন্ত্রাসী ফিঙ্গে লিটনের স্ত্রী। তার কোন রাজনীতির পরিচয় নেই। শহরের সন্ত্রাসীদের নিয়ে ভোট করছেন ফাতেমা আনোয়ার। তিনি কালো টাকা ছড়াচ্ছেন। সংসদ নির্বাচনে যারা নৌকা প্রতীকে ভোট করেছেন, তারাই আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। আর তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সন্ত্রাসীর বউ ফাতেমা আনোয়ারকে প্রত্যাখান করেছে। আমি ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে এসেছি। আমার সন্ত্রাসের কোন রেকর্ড নেই। এমপি মহোদয় ও আমাকে জড়িয়ে মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ করেছেন তিনি।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগে ফাতেমা আনোয়ার বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্যের পক্ষে কোন চেয়ারম্যান প্রার্থী থাকবে না মর্মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি দলীয়ভাবে সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেন। এই নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও যশোর সদর (যশোর-৩) আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। তিনি সমর্থন দিয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুলকে। বিপুলকে প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে কাজী নাবিল আহমেদ উপজেলার দলীয় নেতাকর্মী, স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিপুলের পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দেন। তার মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে কাজ না করলে দলীয় পদ হারানোসহ বিভিন্ন সরকারী আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হবে বলে নাবিল আহমেদ জানিয়েছেন।
ফাতেমা আনোয়ার লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, স্থানীয় সাংসদের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী আনোয়ার হোসেন বিপুল তার পক্ষের কিশোর গ্যাং ও তাদের গডফাদারদের দ্বারা বিভিন্ন এলাকায় পেশি শক্তি প্রদর্শন করে আসছে। বিশেষ করে জেলা শ্রমিক লীগ নেতা সেলিম রেজা পান্নু ও তার অনুসারীরা বিগত ইউপি নির্বাচনের ন্যায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে এলাকায় গভীর রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমার কর্মী সমর্থকদের হুমকি দিয়ে আসছে। এছাড়াও নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাজু আহমেদ ও তার অনুসারীরাও একইভাবে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করছে।
ফাতেমা আনোয়ার জানান, নাবিল আহমেদের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে যদি কাজ না করা হয়, তাহলে চেয়ারম্যান ও তাদের সহযোগী অঙ্গ-সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। সরকারি আর্থিক সুবিধা (ভিজিএফ, ভিজিডি, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মাতৃকালীন ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা) থেকে বঞ্চিত করবেন। এছাড়াও উপজেলার সকল ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের পদ হারানোর ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন। এছাড়া নাবিল আহমেদের ঘনিষ্ট সুজন সাত্তার স্থানীয় সংসদের নির্দেশের বাইরে যে সকল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী কাজ করবে তাদের নামের তালিকা তৈরি করছেন। এছাড়া নাবিল আহমেদ বিভিন্ন কর্মসূচি চূড়ান্ত করে স্থানীয় নেতা কর্মীদের সাথে মতবিনিময় করার দিন ও সময় নির্ধারণ করেছেন। যা নির্বাচন আচারণবিধি লঙ্গন। এছাড়া এমপির মনোনীত প্রার্থীর বিপুল প্রচারণার নামে ঘোড়া প্রতীকের কর্মী সমর্থকদের হুমকি মিথ্যা অপপ্রচার ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের কাছে আমার কর্মী সমর্থকদের নামে মিথ্যা অভিযোগ করে হয়রানি করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন। এমন পরিস্থিতি সুষ্ঠু ভোট গ্রহণে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
যশোর সিনিয়র নির্বাচন কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন অফিসার আব্দুর রশিদ বলেন, ‘ফাতেমা আনোয়ার কিছু অভিযোগ করেছে। সব অভিযোগ আমলে নিয়ে সব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। শুধু ফাতেমা আনোয়ার নয়; সকল প্রার্থীদের অভিযোগ আমলে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
যশোর জেলা আওয়ামী লীগ দুটি গ্রুপে বিভক্ত। একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এবং অপর পক্ষের নেতৃত্ব দেন যশোর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। ফাতেমা আনোয়ার কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। যশোর সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে সাতজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার যুবলীগের নেতা তৌহিদ চাকলাদারকে সমর্থন দিয়েছেন। অন্যদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেনকে সমর্থন দিয়েছেন। নাবিলের সমর্থন না পাওয়াতে ফাতেমা আনোয়ার নাবিল অংশের কিছু নেতাকর্মী নিয়ে নিজের মতো নির্বাচন করছেন। এর পর থেকে ফাতেমা নাবিলের দ্বন্দ্ব শুরু। গত ১৮ মে সর্বশেষ এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর স্বজন নিয়ে কটুক্তিমূলক মন্তব্য করায় যশোর সদর উপজেলা যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয় ফাতেমা আনোয়ারকে।
নিউজের ভিডিও দেখতে লিংকে ক্লিক করুন