মণিরামপুর সংবাদদাতা:
যত দ্বন্দ্ব বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসাগুলোতে। কমিটি গঠন ও নিয়োগ বাণিজ্য দ্বন্দ্বে যশোরের মণিরামপুরের ৭০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মামলা হয়েছে। মামলার কারণে শিক্ষার উপর প্রভাব পড়ছে। সম্প্রতি উপজেলা পরিষদের নির্ধারিত সভায় এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্য ও কমিটি গঠনে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ফয়দা লুটছেন শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র সরকার। এ কারণে তাকে একাধিক মামলার বিবাদী করা হয়েছে।
জানা গেছে, মণিরামপুর উপজেলায় এমপিওভুক্ত ১১৮টি মাধ্যমিক ও ৬৪ টি মাদ্রাসা রয়েছে। ২০২১ সালের ২৮ মার্চ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সর্বশেষ জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা প্রণয়ন করেন। ২০২২ সালের অর্থ বরাদ্দের পর তিনটি পদে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়। পদগুলো হল নিরাপত্তা প্রহরী, অফিস সহায়ক ও পরিচ্ছন্ন কর্মী। এই তিন পদের বিপরীতে মণিরামপুর উপজেলায় প্রায় পাঁচ শতাধিক কর্মচারী ছাড়াও প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে সুবিধাভোগীদের লবিং গ্রুপিংয়ের সুযোগ নিয়ে ফায়দা লুটছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র সরকার।
খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, যে কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে পদ প্রতি ১৫ লাখ টাকা, প্রধান শিক্ষক ১০ লাখ ও সহকারী প্রধান শিক্ষক ১০/১২ লাখ ছাড়াও ল্যাব সহকারী পদে ১৫ লাখ টাকা নেওয়া রেওয়াজ রয়েছে। তবে, বিপুল অংকের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোন অর্থ পেয়েছে এমন নজির চোখে পড়েনি।
সূত্র বলছে, এসব নিয়োগ বাণিজ্যের অধিকাংশ অর্থই ম্যানেজিং কমিটির সুবিধাভোগীদের মাঝেই ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে আসছে। বিকাশ চন্দ্র সরকার ২০১৮ সালে পহেলা আগস্ট মনিরামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে নিয়োগ বাণিজ্যের অর্থের নিধারিত একটি অংশ ওই কর্মকর্তাকে দিতে হয় বলে গুঞ্জন রয়েছে। চাহিদা মত অর্থ যোগান না দিতে পারলে বেতন বিল করানোর ক্ষেত্রে বিড়ম্বণার শিকার হতে হয়। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নিয়োগ বোর্ড করতে কর্মচারী পদে কর্মকর্তাকে সর্ব নিম্ন ৫০ হাজার ক্ষেত্র বিশেষ লাখ টাকাও দিতে হয়।
টানা ৬ বছরে এক উপজেলাকে চাকরি করছেন তিনি। সেই সুবাদে যশোর জেলা শহরের বেজপাড়া এলাকায় বিলাসবহুল ছয়তলা ভবন নির্মাণসহ অর্থবৈভবের মালিক বনে গেছেন শিক্ষা কর্তকর্তা বিকাশ চন্দ্র সরকার।
গত ২৩ মে উপজেলার ‘বোয়ালীঘাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে’ সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে ভুয়া নিবন্ধনধারী শিক্ষক আব্দুল মালেকের নিয়োগ নিয়ে আদালতে একটি মামলা হয়। যার নং-৪৬৭/২৪। এ মামলার বাদী বোয়ালীঘাট উত্তরপাড়া গ্রামের মোস্তফা জামান মিলন।
চলতি মাসের ৯ জুন ‘মনোহরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে’ ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে ল্যাব সহকারী পদে নয়ন মন্ডল নামে একজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে মর্মে আদালতে আরো একটি মামলা হয়। মামলাটি করেন ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আলী আজম বাচ্চু। যার মামলা নং-২৩৬/২৪।
এসব মামলায় বিবাদী করা হয়েছে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র সরকারসহ নিয়োগ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। এছাড়াও উপজেলার ৭০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্য ও কমিটি গঠন নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, নিয়োগ বাণিজ্যে ও কমিটি গঠন নিয়ে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এসব কারণে শিক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল অবস্থানে দিকে যাচ্ছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে একাধিক শিক্ষক বলেন, নিয়োগ বাণিজ্যের এসব অর্থ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোন কাজে আসছে না। বরং এক শ্রেণীর সুবিধাভোগী ব্যক্তিরা হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কমিটি গঠন করতেও হিমশিম খাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক সহ কমিটি গঠন কাজে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক ফারুক হোসেন বলেন, বিদ্যালয়গুলোর ম্যানেজিং কমিটির ব্যক্তিরা ভাল প্রার্থীকে নিয়োগ না দিলে সেক্ষেত্রে শিক্ষা অঙ্গনে প্রভাব পড়ে। শুনেছি আগে নিয়োগ বাণিজ্য হত, তবে এখন হয় কিনা জানা নেই।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন লাভলু বলেন, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে কমিটি গঠন নিয়ে মামলা হয়েছে। দুই একটি নিয়োগ বোর্ড অতি গোপনে করা হয়েছে, যা আপত্তিকর।
মণিরামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, নিয়োগে যারা বাণিজ্য করে তারা তো করেই। যেখানেই নিয়োগ আছে, সেখানে কমিটি করতে গেলেই মামলা। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার উপজেলা পরিষদের মিটিংয়ে জোরালো আলোচনা হয়েছে। এ উপজেলার ৭০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ ও ম্যানিজিং কমিটি গঠন নিয়ে মামলা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মামলার কারণে শিক্ষা অঙ্গনে প্রভাব পড়ছে। এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, পৈত্রিক নিবাস ঝিনাইদাহে। তবে যশোর শহরে একটি বাড়ি করে বসবাস করছি।