শার্শা সংবাদদাতা:
যশোরের শার্শা উপজেলায় অনুকূল পরিবেশে ও আশানুরূপ লাভজনক হওয়ায় চলতি বছর বৃদ্ধি পেয়েছে সোনালি আঁশ পাট চাষ। পাট চাষকে ঘিরে কৃষক আগামির রঙিন স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছেন। পাট চাষে অন্যান্য ফসলের চেয়ে তুলনামূলক কম খরচ, উৎপাদন ভাল, লাভজনক ফসল ও স্থানীয় ভাবে সহজলভ্য সরাসরি পাইকারি বাজার সৃষ্টি হওয়ায় এই চাষে ঝুঁকে পড়ছেন কৃষক। এছাড়াও নিয়মিত কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের উদ্বুদ্ধকরণ ও পরার্মশ প্রদান, কৃষি বিভাগের মাধ্যমে সরকারি সহায়তার ফলে পাট চাষে কৃষকের মধ্যে বেশ আগ্রহ বেড়েছে। সব মিলিয়ে কৃষকের জন্য সার্বিক অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় প্রতি মৌসুমে বৃদ্ধি পাচ্ছে পাট চাষ।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি বছর শার্শা উপজেলায় ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে প্রায় ৫৪৬০ হেক্টর জমিতে পাটক চাষ করা হয়েছিল। ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে ৫ হেক্টর বেড়ে ৫৪৬৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। এই অঞ্চল পাট চাষের উপযোগী দো-আঁশ মাটি, মান ভাল, অনুকূল পরিবেশে রোগ বালাই কম, কৃষকদের প্রতি কৃষি বিভাগের উদ্বুদ্ধকরণ ও নিয়মিত পরামর্শ, কৃষি বিভাগের মাধ্যমে সরকারি ভর্তুকির বিনামূল্যে বীজ প্রদানসহ অল্প খরচে লাভজনক হওয়ায় গত বছরের তুলনায় এ বছর ৫ হেক্টর বেশি জমিতে পাটের চাষ করা হয়েছে। চাষকৃত পাটের জাতের মধ্যে রয়েছে দেশি সিভিই-৩, সিসি-৪৫,ডি-১৫৪-২,বি জে আর আই-৫,রবি-১ ইন্ডিয়ান জাতের মধ্যে কৃষি সেবাইন ১৩৫২৪, শঙ্খ, ও৯৮৯৭, এবং তোষা ৮।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা যায়, বিঘার পর বিঘা জমিতে দেশি ও বিদেশি উচ্চ ফলনশীল জাতের পাটের চাষ করা হয়েছে। সোজা দণ্ডায়মান সেই পাট গাছ ও তার সবুজ পাতা মাঝেমাঝে বাতাসে যেন আপন মনে হেলে দুলে দোল খাচ্ছে।
পাট চাষ সম্পর্কে কথা হয় ডিহি ইউনিয়নের দরিদুর্গাপুর গ্রামের কৃষক আবুল মিয়া, মিজাম উদ্দিন ও মাহবুব আলি,শার্শা ইউনিয়নের শ্যামলাগাছী গ্রামের নাজিম উদ্দিন, উলাশী ইউনিয়নের খাজুরা গ্রামের আমিরুল ইসলাম,কায়বা ইউনিয়নের পাঁচ কাযবা গ্রামের মেছের আলীর সাথে। তারা বলেন, কৃষি কর্মকর্তাদের উৎসাহ ও পরামর্শ অনুযায়ী এ বছর তারা ৫ থেকে ২০ বিঘার মত জমিতে ছিটিয়ে পাট চাষ করেছেন। আগাম ব্যবস্থা নেয়ায় প্রচণ্ড দাবদাহে পাটে তেমন কোন রোগবালাই দেখা দিচ্ছে না। তবে বৃষ্টিহীন পাটক্ষেতে সেচ দিতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। পাট কাটার আগ মূহুর্ত পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চাষ অনুযায়ি বিঘা প্রতি ১০ থেকে ১৬ মণ আঁশ পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন।
বাজারে পাটের দাম ভাল পেলে তারা সকলেই সব খরচ বাদ দিয়ে বিঘা প্রতি ২০-২৫ হাজার টাকার মত লাভ করতে পারবেন বলে জানান। সেই সাথে স্থানীয় ও বাইরের জেলা গুলোতে পাটখড়ির ভাল চাহিদা থাকায় বিক্রি করে এখান থেকেও বেশ ভাল টাকা আয় করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিপক কুমার সাহা বলেন, চলতি মৌসুমে সরকারি প্রণোদনার ১ কেজি করে পাট বিজ উপজেলার ২৬০০ কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। সার বরাদ্দ না থাকায় দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে পাট উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে চাষিদের সহায়তা করা হয়েছে। পাট চাষে চাষিদের কৃষি বিভাগ থেকে উদ্বুদ্ধকরণ সহ নিয়োমিত সার্বিক পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূল ও রোগ বালায় না হলে এবং ঠিক মত জাঁগ দেয়ার সুযোগ পেলে পাট চাষে কৃষকরা লাভবান হবেন এমন আশা করা যেতেই পারে।