সুমন ব্রহ্ম, ডুমুরিয়া (খুলনা) থেকে
‘কৃষি’র জন্য সেচের কথা না বলে শুধু পানি নিস্কাশনের কথা বলে বিদ্যুত সংযোগ চাওয়ায় খুলনা পল্লী বিদ্যুত অফিস ৫.২৫ টাকার পরিবর্তে ৯.৭১ টাকা দর নির্ধারণ করেছে প্রতি ইউনিটের। এতে করে চরম বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। তাদের আশংকা দ্রুত এ সমস্যার সমাধান না হলে মৌসুমে বোরো আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
জানা গেছে, চলতি মৌসুমের অতি বৃষ্টিতে ডুমুরিয়া উপজেলার ‘বিল ডাকাতিয়া’সহ সকল বিল জলাবদ্ধতা হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের উদ্যোগে শোলমারি স্লুইস গেটের পলি অপসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়। সেখানে কোন সাফল্য আসেনি। উপজেলা প্রশাসন আসন্ন মৌসুমে বোরো চাষের আশায় গত অক্টোবর মাসে জরুরি ভিত্তিতে কয়েকটি বিলে সেচ-পাম্প বসিয়ে পানি নিস্কাশনের উদ্যোগ নেয়। সেখানে বিএডিসি’র সঙ্গে খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি’র মধ্যে বিদ্যুতের রেট (দাম) নিয়ে রশি টানাটানির কারণে বিগত ২২ দিনেও বিদ্যুৎ সংযোগ না দেয়ায় সেচ-পাম্পগুলো অলস পড়ে রয়েছে।
এদিকে, ২০২০ সাল থেকে উপজেলার বিল তাওয়ালিয়া, বিল দহকুলা, বিল বরুণা, বিল মধুগ্রাম, বিল মুজারঘুটাসহ বিভিন্ন বিলে ৩৫টি বৈদ্যুতিক সেচ-পাম্প চালু থাকায় ৩ হাজার একর জমিতে ধান চাষ করা সম্ভব হয়। সে-সকল পাম্পে সেচ/কৃষি খাতের আওতায় বিদ্যুতের প্রতি ইউনিট ৫.২৫ টাকা নেয়া হচ্ছে। চলতি মৌসুমে বোরো ধান চাষের আশায় অন্যান্য বিলগুলোর পানি নিস্কাশনের জন্য সেই বিদ্যুৎ সমিতি মড়ার ওপর খাড়ার ঘা’ বসিয়ে ‘কৃষি’র জন্য সেচের কথা না বলে শুধু পানি নিস্কাশনের কথা বলে বিদ্যুতের রেট ৯.৭১ টাকা দিতে বলছে। সেই জটিলতায় আটকে গেছে ডুমুরিয়ার কৃষক কুল।
এ প্রসঙ্গে সিংগা বিল কমিটির সম্পাদক বাবুল আকতার সবুর বলেন, আমরা বোরো চাষের জন্য পানি নিস্কাশন করবো। কিন্তু পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বলছে, না ওটা শুধু পানি নিস্কাশন। তাই ৯.৭১টাকা রেট। আমাদের সাথে এতো বড় বৈষম্য কেন ?
বিএডিসি’র নির্বাহী প্রকৌশলী জামাল ফারুক বলেন, ডুমুরিয়ার বিলগুলোতে বোরো চাষাবাদ অব্যাহত রাখতে আমরা আরও কয়েকটি বিলে সেচপাম্প বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে পল্লী বিদ্যুৎকে অনুরোধ করেছি। এদিকে এ অঞ্চলে চলমান ৩৫ টি পাম্পে বৈদুতিক বিল করা হয় ৫.২৫ টাকা দরে। কিন্তু নতুন কয়েকটি বিলে ১০টি সেচপাম্পে সংযোগ চাইলে বিদ্যুৎ সমিতি ৫.২৫ টাকার পরিবর্তে ৯.৭১ টাকা দিতে বাধ্য করছে। এ কারণে এলাকার বোরো চাষিরা চরম ক্ষতির শিকার হবেন।
উপজেলা কৃষি ও মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, অতি বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় উপজেলায় সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্থ বিল ডাকাতিয়াসহ সংলগ্ন রংপুর, রঘুনাথপুর, রুদাঘরা, খর্ণিয়া, আটলিয়া, মাগুরাঘোনা, গুটুদিয়া ও ডুমুরিয়া সদর ইউনিয়নের ১০ হাজারেরও অধিক চিংড়ি ঘের তলিয়ে যাওয়ায় কোটি কোটি টাকার মাছের ক্ষতি হয়েছে। ইতোমধ্যে কোটি কোটি টাকার সবজির ক্ষতির পরও আসন্ন বোরো মৌসুমে ৮ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান ও দেড় হাজার হেক্টর জমির সবজি চাষ হুমকির মুখে পড়েছে।
ডুমুরিয়ার বিল ডাকাতিয়ার তলদেশ নিচু ও বাইরের নদীর তলদেশ উচু হওয়ার কারণে শোলমারি স্লুইস গেটের মুখ থেকে পলি অপসারণ করলেও আশানুরূপ পানি বের হচ্ছে না। আসন্ন বোরো মৌসুম বাঁচাতে উপজেলা প্রশাসন থেকে বিভিন্ন বিলের স্লুইস গেটের মুখে পলি ও খালের মুখে বাঁধ অপসারণসহ নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
উল্লেখ্য, জলাবদ্ধ এলাকার মানুষের চাহিদা ও প্রশাসনের চেষ্টায় বিলের পানি নামিয়ে ধান চাষের আশায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) ২২ দিন আগে কয়েকটি সেচ পাম্প বিতরণ করে। তার মধ্যে উপজেলা সদরে গোলনা ফায়ার সার্ভিসের সামনে ২টি, চহেড়া স্লুইস গেটে ৫টি, ষষ্ঠিতলা স্লুইস গেটে ১টি, নরনিয়া স্লুইস গেটে ১টি ও দহকুলা গেটের জন্য ১টি সেচ-পাম্প সরবারাহ করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে সংযোগ প্রদানের অনুরোধ জানায়।
বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের আগে খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জানায়, পানি নিস্কাশনের জন্য বিদ্যুতের রেট ৯.৭১ টাকা দিতে হবে।
এ বিষয়ে খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি’র ডিজিএম প্রকৌশলী কাজী রমজান আলী বলেন, ধানের গোড়ায় পানি দেয়া বা চাষের ক্ষেত্রে সরকার ২০% ভর্তুকি দিয়ে প্রতি ইউনিটের দাম ৫.২৫ টাকা রেখেছে। জলাবদ্ধতা নিরসনের ক্ষেত্রে (এলটিডি-২) বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক নির্ধারিত রেট ৯.৭১ টাকা। ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বিএডিসি কর্তৃপক্ষ, আমাদের জেনারেল ম্যানেজার’র সঙ্গে ৯.৭১ টাকা রেটে ডিমান্ড নোটের ২ লক্ষাধিক টাকা চলতি মাসের মধ্যে পরিশোধের নিশ্চয়তা দিয়েছে। আমরা ১ সপ্তাহের মধ্যে সংযোগ দেয়ার চেষ্টা করবো।
ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল-আমিন বলেন, বোরো চাষের জন্য আগে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রয়োজন। তবে জিএম সাহেবকে কৃষকদের জন্য রেটের বিষয়টি বিবেচনা করতে অনুরোধ করেছি।