কেশবপুর পৌর সংবাদদাতা
কয়েক দিনের টানা বর্ষণে যশোরের কেশবপুরে জলবদ্ধতায় কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমন ধানের পাশাপাশি সবজি ক্ষেতত নষ্ট হওয়ায় কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অনেকে ধার-দেনা করে আমন ধান আবাদ করেছিলেন তারা। ফসল ঘরে তুলে পরিবার নিয়ে ভালো থাকার যে স্বপ্ন দেখছিলেন, তা এখন বন্যার পানিতে মিশে গেছে।
কেশবপুর পৌর এলাকাসহ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। অপরিকল্পপিত মাছের ঘের, বুড়িভদ্রা নদী পলিতে ভরাট হওয়ায় হরিহর নদ ও বুড়িভদ্রা নদীর পানি প্রবাহে বাধার ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পৌর এলাকায় ঘেরের পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় পৌরসভার অধিকাংশ রাস্তা পানির নিচে।
উপজেলার ভালুকঘর গ্রামের মাসুম বিল্লাহ দুই লাখ টাকা খরচ করে ৫০ শতক জমিতে উচ্চ ফলনশীল মরিচ চাষ করেছিলেন। গাছে মরিচ হওয়া শুরু করেছিল। স্বপ্ন দেখছিলেন ৯ লাখ টাকা বিক্রি করবেন। কিন্তু বৃষ্টির পানিতে ডুবে সে স্বপ্ন শেষ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর কেশবপুরে কৃষকেরা রোপা আমন ৯ হাজার ৫০৯, সবজি ৬০০, মরিচ ২৬, হলুদ ১০০, তরমুজ ১১, আখ ৫৬, পান ১৩০ ও তুলা ২৫ হেক্টর আবাদ করেছিলেন। বন্যায় কৃষকের রোপা আমন ১ হাজার ৮৩০, সবজি ২৩৯, মরিচ ১৮ দশমিক ৫, হলুদ ১৮, গ্রিস্মকালীন তরমুজ ৪ দশমিক ৫, আখ ৩ দশমিক ৫, পান ১২ দশমিক ৩ ও তুলা ৩ হেক্টর ক্ষতি হয়েছে। এসব ফসল থেকে উৎপাদন হতো, আমন ৫ হাজার ৮৫৬ মেট্রিকটন, সবজি ৪ হাজার ৩০২ মেট্রিকটন, মরিচ ৪৪ দশমিক ৪ মেট্রিকটন, হলুদ ৮১ মেট্রিকটন, তরমুজ ৯৯ মেট্রিকটন, আখ ৩৫ মেট্রিকটন, পান ১১৬ দশমিক ৮৫ মেট্রিকটন ও তুলা ১৪ দশমিক ৪ মেট্রিক টন।
পৌর এলাকায় সাবদিয়া উপজেলার ভোগতীনরেন্দ্রপুরের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, তিনি একটি সমিতি থেকে ৩০ হাজার টাকা লোন নিয়ে ভবানীপুরের মাঠপাড়া বিলে ৫ বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ করেছিলেন। পানিতে তার সব ধান নষ্ট হয়ে গেছে।
আলতাপোল গ্রামের কৃষক রেজাউল ইসলাম বলেন, তার এক বিঘা পানের বরজ বন্যার পানিতে তলিয়ে প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলার সুফলাকাটি ইউনিয়নের বিল খুকশিয়ার মাছের ঘেরের বেড়িতে কৃষক আব্দুল গফফার ৫০০ তরমুজ গাছ, ১ হাজার ২০০ বেগুন গাছসহ পুঁইশাক ও বরবটি লাগিয়েছিলেন। বন্যার পানিতে মাছের ঘেরের বেড়ি তলিয়ে যাওয়ায় ওইসব গাছ মরে গিয়ে তার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তার মতো ওই বিলে অন্য কৃষকদেরও মাছের ঘের ভেসে বেড়ির সব সবজি নষ্ট হয়েছে।
কেশবপুর উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বন্যার পানিতে কৃষকের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন সিকদার বলেন, হরিহর নদের কেশবপুরের বড়েঙ্গা এলাকায় একটি এবং চুকনগর ব্রিজের কাছে একটি ভাসমান স্কেভেটর দিয়ে খনন কাজ চালানো হচ্ছে।
চলমান বৃষ্টির ফলে উপজেলার সবকয়টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে পৌরসভা ও উপজেলা।