নিজস্ব প্রতিবেদক, কালীগঞ্জ
চাকরি স্থায়ী করাতে ধার করে ১ লাখ টাকা দিয়েছি তখনকার সভাপতি গোলাম রসুলের কাছে। সেটাও না হলে সাধারণ সম্পাদক শরিফুলের কাছে দিয়েছি ৩০ হাজার টাকা। ২০ হাজার টাকা দিয়েছি সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতিয়ার রহমানের কাছে। তিন দফায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন।
তারপরও চাকরি স্থায়ী হয়নি মোবরকগঞ্জ চিনিকলের গোডাউন গার্ড কাম স্কেল ম্যান আতিয়ার রহমানের। তিনি বলেন, সেই টাকা পরিশোধ করে এখন সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ছেলের পড়াশোনার খরচ যোগাতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। তিনি সেই টাকা ফেরত চান এবং দোষীদের শাস্তি দাবি করেছেন।
এভাবে প্রায় ৩ শতাধিক কর্মচারীর কাছ থেকে তিন কোটি টাকার বাণিজ্য করার অভিযোগ উঠেছে মোবারকগঞ্জ চিনিকলের সভাপতি গোলাম রসুলের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার সকালে সুগার মিলের প্রশাসনিক ভবনের সামনে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের মোবারকগঞ্জ সুগার মিলের অস্থায়ী শ্রমিক কর্মচারীরা।
আরেক শ্রমিক বৈদ্যুতিক হেলপার পলাশ জোয়ারদার তুহিন বলেন, গত যে ট্রেড ইউনিয়ন ছিল তাদের সভাপতি ছিলেন গোলাম রসুল। তিনি গোলাম রসুলের অফিসে তার আস্থাভাজন পিকুর কাছে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। এভাবে সুগার মিলের বিভিন্ন সেক্টরের প্রায় ৪ শতাধিক কর্মচারীর কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সভাপতি গোলাম রসুল।
ক্রয় করণিক শরিফুজ্জামান রিংকু বলেন, ২০১৮-২০১৯ মাড়াই মৌসুমে ক্রয় করণিক থেকে ২৪ জনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সিডিএ পদে পদোন্নতি প্রদান করে। এই ২৪ জনের কাছ থেকে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা নেয় সভাপতি গোলাম রসুল। তার কাছ থেকেও দেড় লাখ টাকা নিয়েছিল। তারা চুক্তিভিত্তিক বিনা পারিশ্রমিকে সিডিএর কাজ করেছেন। কিন্তু টাকা নিয়েও তাদের চাকরি স্থায়ী হয়নি। তারা আবার স্বপদেই চাকরি করছেন। দ্রুত এই টাকা ফেরত দেয়াসহ দোষীদের শাস্তি চান তিনি।
বয়লার ফিট পাম্প চালক সাহার আলী বলেন, ২০০৭ সাল থেকে চাকরি করেন। ২/৩ বছর চাকরি করার পর স্থায়ী করানোর জন্য ৩/৪ কিস্তিতে সভাপতি গোলাম রসুলের কাছে টাকা দেয়া হয়েছে। সার্কুলার দেয় কিন্তু আমরা স্থায়ী হতে পারেনি। চাকরি স্থায়ী করাতে দিনের পর দিন গোলাম রসুলকে বললেও তিনি হুমকি-ধামকি দিতেন।
তার ভয়তে কিছুই বলতে পারেননি। তিনি কথায় কথায় এমপির দিয়ে জেল খাটানোর ভয় দেখাতেন। তিনি ছিলেন বিনা ভোটে নির্বাচিত মোবরকগঞ্জ চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, বিনা ভোটে তিনবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন গোলাম রসুল। স্থানীয় এমপির দাপটে চিনিকলের শ্রমিকদের উৎসবমুখর ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। সুগার মিলের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে মিলটির কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে গোলাম রসুল।
নামে-বেনামে অঢেল সম্পত্তির মালিক বনে গেছেন। সরকার পতনের পর গত ৬ আগস্ট থেকে এক মাসের ছুটিতে ছিলেন। এরপর থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত গোলাম রসুল। তাকে কয়েকবার নোটিশ দেয়া হয়েছে। তিনি অফিস সহকারী পদে কর্মরত।
এ ব্যাপারে সভাপতি গোলাম রসুলের ব্যবহৃত দুটি মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
মোবারকগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, চাকরি স্থায়ী করাতে গোলাম রসুলের টাকা নেয়ার বিষয়টি মৌখিকভাবে শুনেছি। কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে এবং শ্রম অধিদপ্তরের পরিদর্শক মতিয়ার রহমানকে প্রধান করে দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এই তদন্ত কমিটি চিনিকলে এসে সাধারণ শ্রমিকদের বক্তব্য নিয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চিনিকল প্রশাসন কোন শ্রমিকের কাছ থেকে টাকা নেয়নি।
##