নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর সদরকে স্মার্ট উপজেলা বিনির্মানে ১৩ দফা ও ১৪ উপ-দফা’র নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী আনোয়ার হোসেন বিপুল। আজ প্রেসক্লাব যশোরে সাংবাদিকদের সামনে এই ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি।
তিনটি ভাগে বিভক্ত ইশতেহারে তিনি প্রথম ভাগে ভাইস চেয়ারম্যান থাকাকালীন কী করেছেন, দ্বিতীয় ভাগে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে কী করবেন আর শেষ ভাগে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে উপজেলার উন্নয়নে মান্টার প্লান তৈরি করার কথা বলেছেন।
ইশতেহারে তিনি উল্লেখ করেন, যশোর সদর উপজেলার ব্রিটিশ ভারতের প্রথম জেলা যশোর সদরের এই উপজেলাটির উন্নয়নে আজ পর্যন্ত কোন মাস্টার প্লান তৈরি করা হয়নি। যশোর সদর উপজেলার উন্নয়ন ও জনগণের টেকসই সেবা নিশ্চিত করতে তিনি অভিজ্ঞ নাগরিক ও প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করবেন। যে কমিটি যশোর সদর উপজেলার উন্নয়নে বিশ্বমানের একটি মাস্টারপ্লান তৈরি করবে।
ইশতেহারের ভূমিকাতে তিনি আনোয়ার হোসেন বিপুল বলেন, ‘এই সদর উপজেলা নিয়ে সমাজের বিশিষ্টজনদের অনেক স্বপ্ন রয়েছে। নতুন প্রজন্মের মানুষ হিসেবে আমারও স্বপ্ন আছে। ইতিমধ্যে আমি অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি, অনানুষ্ঠানিকভাবে বসেছি। সেই আলোকে আমি আমার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করছি। এই ইশতেহার আপনাদের কাছে আমার লিখিত প্রতিশ্রুতি। নান্দনিক, মানবিক ও স্মার্ট যশোর সদর উপজেলা বির্নিমানে ১০ লাক্ষাধিক জনগোষ্ঠীর জন্য এই নির্বাচনী ইশতেহার। বিপুল জনগোষ্ঠীকে সেবা দিতে পারাটাই আসল যোগ্যতা। সুযোগ পেলে নিজের মেধা-মনন, অভিজ্ঞতা সবকিছু উপজেলাবাসীর জন্য উৎসর্গ করাই আমার আসল অঙ্গীকার।’
ঘোষিত ইশতেহারে বলা হয়েছে, নির্বাচিত হলে শিশুদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে, তাদের মেধার বিকাশে প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে আধুনিক মিনি শিশু পার্ক গড়ে তুলবেন। টেকসই উন্নয়নের জন্য উপজেলার অধীনে একটি নলেজ পার্ক গড়ে তুলবেন। কর্মসংস্থানের বাইরে থাকা যুবদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ঋণের মাধ্যমে বছরে ২০ হাজার যুবককে স্বাবলম্বি করার উদ্যোগ গ্রহণ নেওয়া হবে।
কৃষি পণ্যকে শিল্প পণ্যের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল নিশ্চিত করতে প্রতি ইউনিয়নে একটি করে ‘কৃষক হাট’ গড়ে তোলা হবে। এতে মধ্যস্বত্ব ভোগীদের দৌরত্ব ঘুচিয়ে সরাসরি কৃষক ও ভোক্তা লাভবান হবেন বলে ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া সরকারের দেওয়া কৃষি ভর্তুকি সঠিকভাবে বন্টনের জন্য ডাটাবেজ তৈরি করে প্রকৃত কৃষকদের সরকারি সুবিধা পাওয়ার শ্চিয়তার কথা বলা হয়েছে। কৃষিভিত্তিক ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প বিকাশে সহযোগিতা করার কথাও বলা হয়েছে ইশতেহারে।
যশোর সদর উপজেলাবাসীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে হট লাইন সেবা চালু, সাধারণ মানুষের জন্য উপজেলার নিজস্ব অর্থায়নে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু, অটিস্টিক শিশুদের মানসিক বিকাশে বিশেষ উদ্যোগসহ থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের রক্তের যোগানসহ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে উপজেলা পরিষদ দায়িদ্ব নেবে বলে ইশতেহারে উল্লেখ করেন তিনি।
উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে মাদকাসক্ত ও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত কাউকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি না করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ইশতেহারে। এছাড়া শিক্ষার মান উন্নয়নে ইউনিয়নভিত্তিক অভিভাবক সমাবেশ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে উপজেলা পরিষদ।
উন্নয়ন ও জনগণের টেকসই সেবা নিশ্চিত করতে দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং সব ধরনের হয়রানি বন্ধে নাগরিক সমাজকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি শক্তিশালী মনিটরিং কমিটি গঠন করার কথা বলেছেন আনোয়ার হোসেন বিপুল। এছাড়া জনগণের জন্য প্রতি ইউনিয়নে একটি করে অভিযোগ বক্স খুলে সকল সমস্যার সমাধানের কথা বলেছেন তিনি।
ইশতেহারে সমাজের প্রবীণ নাগরিকদের অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা সুরক্ষার জন্য উপজেলায় আলাদা বুথ করা, গুরুত্ব বিবেচনায় সড়ক উন্নয়ন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্টজনদের নামে নামকরণ, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে কেন্দ্রীয় ক্লাব গঠন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের হয়রানি বন্ধে ‘ক্ষুদ্র ব্যবসা নিরাপত্তা সেল’ গঠন, পরিবেশ বাসযোগ্য রাখতে সামাজিক বনায়ন আন্দোলন জোরদার করার কথা বলা হয়েছে।
এছাড়া উপজেলার রাস্তা, ড্রেন, কালভার্ট, ব্রিজসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নে এক বছর, দুই বছর ও পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করা হবে বলে ইশতেহারে আনোয়ার হোসেন বিপুল উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আগামী ৫ জুনের নির্বাচনে আমি বিজয়ী হলে আমার মেধা ও শ্রম দিয়ে যশোর সদর উপজেলাকে স্মার্ট উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলবো। যশোর সদর উপজেলাকে দেশের প্রথম স্মার্ট উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলতে আমার কিছু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে। স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যশোরের নাগরিক সমাজকে সাথে নিয়ে আমরা কাজ শুরু করবো। এজন্য তিনি আগামী নির্বাচনে তার দোয়াত-কলম প্রতীকে সবার কাছে ভোট প্রার্থনা করেন।